প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
হাজীগঞ্জের গোগরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
দপ্তরির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, মাদক সেবনসহ নানা অভিযোগ
বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিশু শিক্ষার্থীর গায়ে হাত দেয়া, ক্লাসে ঢুকে শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত, মাদকের দায়ে আটক হওয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে হাজীগঞ্জের বাকিলা ক্লাস্টারের গোগরা সরকারি প্রাথমিক দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। সে একই গ্রামের মালের বাড়ির আঃ সাত্তারের ছেলে।
সরজমিনে গেলে জানা যায়, দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী মিজানুর রহমান বিদ্যালয়ে নিয়োগের পর থেকে নিজের মতো চলছেন। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে চতুর্থ শ্রেণির এতিম এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠে। এছাড়া ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাতের অভিযোগ উঠে খোদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। এছাড়া মাদকের ঘটনায় আটক হওয়াসহ নানা অভিযোগ উঠে এই দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরীর বিরুদ্ধে।
যৌন হয়রানির শিকার ছাত্রীর নানা অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়ের জামাই মারা যাওয়ার পর
নাতনিকে আমরাই দেখাশোনা করি। দপ্তরি মিজানুর রহমান আমার ছোট নাতনির শরীরে স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। এ ঘটনার পর নাতনি বাড়িতে গিয়ে নানী ও মায়ের কাছে ঘটনাটি জানিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে। বাড়ি থেকে এমন খবর পেয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে প্রধান শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটিসহ কজনকে জানাই ঘটনাটি। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
এদিকে দপ্তরি মিজানের বিরুদ্ধে একই বিদ্যালয়ের অপর এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি, একজন নারী অভিভাবককের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইমুতে রাত-বিরাতে কল দেয়ার অভিযোগ উঠে। তবে সামাজিকভাবে সম্মানহানির ভয়ে তারা বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে অপরাগ।
সম্প্রতি তিনি মাদক সেবনকালীন পুলিশের হাতে আটক হন। পরে পুলিশ তাকে আদালতে সোপর্দ করে।
অভিযুক্ত মিজানুর রহমান অস্বীকার করে বলেন, আমার একটি মেয়ে এই বিদ্যালয়ে পড়ে। আমার মেয়ে এই মেয়ে আমার কাছে সমান। আমি কীভাবে এমন কাজ করতে পারি? এ সময় তার বিরুদ্ধে আনা অন্য অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন। মাদকের বিষয়টি তিনি বলেন, আমি ভুলবশত আটক হই।
প্রধান শিক্ষক আলেয়া বেগম জানান, বিষয়টি আমি জেনে ছাত্রীকে ডেকে ঘটনার সত্যতা পাই। এরপরেই আমি মৌখিকভাবে ম্যানেজিং কমিটিসহ ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
মিজানুর রহমানের মাদকের ঘটনাকালীন আমি বিদ্যালয়ের দায়িত্বে ছিলাম না বলে এই প্রধান শিক্ষক বলেন, পুলিশের হাতে আটক হয়েছে কিনা তা বলতে পারবো না। তবে ওইদিন মিজানুর রহমান বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কারণে অনুপস্থিত দেখানো এবং শোকজ করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে বেত্রাঘাতের বিষয়ে তিনি বলেন, বেত্রাঘাত নয় গাছের ডাল দিয়ে মারার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে জানতে পেরে মৌখিকভাবে সতর্ক করেছি এবং ভবিষ্যতে এমনটি না করার নির্দেশনা দিয়েছি।
স্থানীয় ও সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ ফারুক হোসেন জানান, মেয়েটির নানা বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। এছাড়াও দপ্তরি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আরো কিছু অভিযোগ শুনেছি। আমি চাই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হোক। কারণ, এটি শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য বোরহান মিয়াজী জানান, ১৪ নভেম্বর মঙ্গলবার দপ্তরি মিজানুর রহমানের অনৈতিকতার বিষয়ে বিদ্যালয়ে সভা ডাকা হয়। সভায় ওই ছাত্রীকে জিজ্ঞাসা করা হলে ছাত্রীটি সবার সামনে ঘটনা খুলে বলে। এরপরই আমরা সভায় মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে রেজুলেশন করি। এখন এটি পরিমার্জন করে ম্যানেজিং কমিটিসহ সকলের সাক্ষর নিয়ে উপজেলায় জমা দেয়া হবে।
বাকিলা ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, বিষয়টি আমি শুনে শিক্ষা কর্মকর্তা স্যারকে জানিয়েছি। তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ মাহবুব হাসানের মুঠোফোনে জানান, আমি ঢাকা আছি। অবরোধের কারণে আসতে পারছি না। তাই প্রধান শিক্ষককে বলেছি, তিনি যেন ম্যানেজিং কমিটির সভা ডেকে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, বিষয়টি এটিও সাহেব ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন। আমি প্রধান শিক্ষককে ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশনসহ লিখিতভাবে জানানোর নির্দেশনা দিয়েছি। পরে তদন্তপূর্বক বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ রাশেদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বলছি। তিনি তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।