শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

বিষয়টি নিয়ে তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর এসে ‘নিরুদ্দেশ’ কয়েক তরুণ-যুবক

কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর এসে ‘নিরুদ্দেশ’ কয়েক তরুণ-যুবক
স্টাফ রিপোর্টার ॥

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ সাত কলেজছাত্রের কয়েকজন কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর এসে নিরুদ্দেশ হবার খবর পাওয়া গেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহ, ‘জঙ্গিবাদে জড়িয়েই’ তারা লাপাত্তা হয়েছে।

১৭ দিনেও তাদের সন্ধান না মিলায় দিশেহারা অবস্থা তাদের পরিবারের সদস্যদের। সন্তানদের খোঁজে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে ঘুরছেন। র‌্যাব, পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরাও তাদের খোঁজে মাঠে নেমেছে।

অভিভাবকরা জানিয়েছেন, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একটি দল বুধবার কুমিল্লায় গিয়ে তাদের সঙ্গে চার ঘণ্টা বৈঠক করেছেন। তারা যা যা জানেন, তা বলেছেন। কিন্তু তাদের ছেলেরা জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে-এটা তাদের বিশ্বাস হতে চাইছে না।

এ বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যানাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, তারা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় একেক পরিবারকে একেক রকম কথা বলে গেছে। তাদের পরিবারের সাথে আমাদের কথা হয়েছে, তারাও জানেন না কোথায় গেছে ছেলেরা। আমরা এ নিয়ে কাজ করছি।

নিখোঁজ শিক্ষার্থীরা হলেন : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইমরান বিন রহমান ওরফে শিথিল (১৭), একই ক্লাসের মোহাম্মদ আস সামি (১৮), কুমিল্লা সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম (১৮) ও নিহাল আবদুল্লাহ (১৭), ভিক্টোরিয়া কলেজের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত (১৯), একই কলেজের স্নাতক (সম্মান) ৩য় বর্ষের আমিনুল ইসলাম আলামিন (২৩) ও ঢাকাস্থ ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ¯œাতক (সম্মান) সম্পন্ন করা সরতাজ ইসলাম ওরফে নিলয় (২৫)।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, নিখোঁজদের উদ্ধার ও ঘটনার তদন্তে মাঠে কাজ করছে ঢাকা ও কুমিল্লার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দল। আশা করছি, দ্রুত আমরা সব কিছু জানাতে পারবো।

র‌্যাব-১১ সিপিসি ২, কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, আমরা গত ক’দিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে খুবই তৎপর। আমাদের বেশ ক’টি টিম মাঠে কাজ করছে। বাকিটা পরবর্তীতে জানানো হবে।

নিখোঁজ শিক্ষার্থী নিহালের বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, ২৩ অগাস্ট তার ছেলে বাসায় কিছু না জানিয়ে নিরুদ্দেশ হওয়ার পরদিন ভোরে চাঁদপুর শহরের রেলস্টেশন সংলগ্ন চাঁদপুর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট থেকে সফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি তাকে ফোন করেন। নিজেকে ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তি জানান, আমার ছেলেসহ তার বন্ধুদের পুলিশ ওই হোটেলে দিয়ে গেছে। আমরা যেন গিয়ে তাদের নিয়ে আসি।

সাইফুল জানান, ওই সময় তিনি হোটেল ম্যানেজারের ফোন থেকে নিলয়ের সাথে কথাও বলেন। নিলয় তাকে ওই হোটেলে যেতে নিষেধ করে এবং তক্ষুণি ফেরার জন্য রওনা হবে বলে জানায়। কিন্তু তারা আর ফিরেনি।

এ বিষয়ে চাঁদপুর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার সফিকুল ইসলাম বলেন, ২৩ অগাস্ট রাত পৌনে ২টা থেকে ২টার দিকে সদর মডেল থানার নতুনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির এসআই খায়রুল ইসলাম তিন তরুণকে নিয়ে হোটেলে আসেন। খায়রুল তখন বলেছিলেন, তারা বাড়ি থেকে অভিমান করে চলে এসেছে। একটু তাদের অভিভাবকদের ফোন দিয়ে যেন আমরা জানিয়ে দিই, যাতে সকালে তারা এসে নিয়ে যায়।

পরদিন সকাল ৬টায় শিফট শেষ হলে আরেক ম্যানেজার হেদায়েত উল্লাহকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে যাওয়ার কথা জানান সফিকুল। তিনি বলেন, পরে শুনেছি, আমি যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ওই তরুণরা হেদায়েত উল্লাহকে বলেছে, আমাদের অভিভাবক এসেছে, এজন্যে চলে যাচ্ছি। হেদায়েত উল্লাহ মনে করেছে, সত্যি সত্যি তাদের অভিভাবক এসেছে, এজন্য সে তাদের চলে যেতে বলেছে। পরে বিভিন্ন বাহিনীর লোকজন এসে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

সফিকুল বলেন, আমরাতো হোটেল চালাই। পুলিশ যদি হোটেলে না রেখে থানায় নিয়ে যেতো, তাহলে তো আর এই সমস্যা হতো না। আমরাতো জানি না ছেলেগুলো ভালো নাকি খারাপ।

সেই রাতে কী ঘটেছিল জানতে চাইলে এসআই খায়রুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের ফাঁড়ির ইনচার্জ মিন্টু দত্ত স্যারসহ আমরা একটা অভিযানে যাচ্ছিলাম। তখন দেখি, চাঁদপুর কালীবাড়ির সামনে এই ছেলেগুলো যার যার ব্যাগ নিয়ে বসে আছে। স্যার জানতে চাইলে কেউ বলে বাসা কুমিল্লা, আবার কেউ বলে বাসা ঢাকা। বন্ধুর বাসায় এসেছিল, এখন গাড়ি নেই তাই বসে আছি। তখন আমরা ওই তরুণদের হোটেলে উঠিয়ে দিয়ে অভিযানে যাই। বলে যাই সকালে অভিভাবকদের ফোন করে যাতে ছেড়ে দেয়।

নিরুদ্দেশ আল-আমিনের বাবা নুরুল ইসলাম ও শিথিলের বাবা মোঃ মুজিবুর রহমান বলেন, হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে নিহাল ও নিলয়কে তারা চিনতে পেরেছেন, কিন্তু বাকিদের চিনতে পারেননি। সে কারণে তাদের ধারণা, নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের তালিকা আরও দীর্ঘ হতে পারে।

এ বিষয়ে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ সহিদুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তের পরই সকল বিষয় পরিষ্কার হবে।

তথ্যসূত্র : বিডিনিউজটুয়েন্টিফোরডটকম।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়