প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:৩৩
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল
বন্ধ হয়ে গেল ভুটান-নেপাল-মায়ানমার বাণিজ্যের পথ, বেনাপোল থেকে ফেরত গেল চার রপ্তানি ট্রাক

ভারত হঠাৎ করে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় রপ্তানি বাজারে বড় ধরনের ধাক্কা এসেছে। এর প্রভাব প্রথম দিনেই দৃশ্যমান—বাংলাদেশ থেকে চারটি রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাককে বেনাপোল বন্দর থেকেই ফেরত পাঠাতে হয়েছে।
|আরো খবর
গত ৮ এপ্রিল ভারত সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কাস্টমস সার্কুলার নং ১৩/২০২৫-কাস্টমস কার্যকর হয়। এতে করে বাংলাদেশের পণ্য ভুটান, নেপাল এবং মায়ানমারে পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে এসব দেশে দ্রুত ও স্বল্প খরচে পণ্য পরিবহনের পথ এখন কার্যত রুদ্ধ।
বুধবার দুপুরে বেনাপোল থেকে ফেরত পাঠানো রপ্তানি পণ্যবাহী চারটি ট্রাকের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হলো ডিএসভি এয়ার অ্যান্ড সি লিমিটেড। ফেরত যাওয়া ট্রাকগুলোর রেজিস্ট্রেশন নম্বর হলো:
যশোর ট ১১-১৮০২, ঢাকা মেট্রো ট ১১-৯২২১,ঢাকা মেট্রো ট ২০-৪৪৬০, ঢাকা মেট্রো ট ২০-১৩১২,
এই ট্রাকগুলো নেপাল ও ভুটানে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ভারতীয় কাস্টমস তাদের প্রবেশ করতে দেয়নি।
পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, “ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই চিঠির ভিত্তিতেই পেট্রাপোল কাস্টমস এসব পণ্যকে প্রবেশে বাধা দিয়েছে।”
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, “এ ধরনের সিদ্ধান্ত দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক আস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমরা ভারত সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, যেন তারা এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে।”
সিএন্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, “ট্রানজিট সুবিধা বন্ধ হওয়ায় রপ্তানিকারকদের ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। এর প্রভাব বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক হতে পারে।”
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) সজিব নাজির জানান,“ভারত পেট্রাপোল কাস্টমস এখন আর তৃতীয় দেশের পণ্যে কার্পাস ইস্যু করছে না। ফলে ট্রানজিট সুবিধা বাতিলের ফলে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো প্রবেশ করতে পারছে না।”
তবে তিনি জানান, ভারতের অভ্যন্তরে সরাসরি রপ্তানি হওয়া পণ্যের চলাচল এখনো স্বাভাবিক রয়েছে।
ভারতের এই সিদ্ধান্ত শুধুই বাংলাদেশের জন্য আঘাত নয়, বরং আঞ্চলিক বাণিজ্য নীতির উপর একটি বড় ধাক্কা। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-অবস্থানীয় সেতুবন্ধনের দায়িত্ব পালন করছিল। ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হওয়া মানে হলো, বাংলাদেশকে বাণিজ্যিক দিক থেকে একঘরে করে ফেলা।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারক মহল ভারতের এই পদক্ষেপকে "আক্রোশমূলক" বলেই বিবেচনা করছেন এবং পারস্পরিক সুসম্পর্কের স্বার্থে দ্রুত এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
ডিসিকে/এমজেডএইচ