প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:৪৫
চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
শান্তির ঘুম ভাঙল
অরুণাচল প্রদেশের আনজাও জেলার দুর্গম কাপাপু এলাকায় চীনের সেনাদের অনুপ্রবেশ নিয়ে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারত-চীন সীমান্ত পরিস্থিতি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, চীনা সেনারা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ওই এলাকায় ক্যাম্প স্থাপন করে অবস্থান করেছিল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার এবং ইন্ডিয়া টুডে-র প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
|আরো খবর
প্রতিবেদনগুলোতে জানানো হয়েছে, চীনের সেনারা ম্যাকমোহন লাইন থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার ভেতরে হাদিগ্রা পাসের কাছে অবস্থান নেয়। তাদের উপস্থিতির প্রমাণ হিসেবে পাথরের গায়ে চীনা লেখা, রং এবং চীনা খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেটের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এমনকি পাথরের গায়ে ইংরেজিতে "২০২৪" লেখা দেখা গেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
দ্য ডনলিটপোস্টের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, চীনা সেনারা এলাকায় আগুন জ্বালিয়ে এবং অন্যান্য চিহ্ন রেখে নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে। তবে বর্তমানে চীনা বাহিনী এলাকাটি ছেড়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া :প্রথমে কেন্দ্রীয় সরকার চুপ থাকলেও পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরণ রিজিজু ঘটনাটিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। টাইমস নাও-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “ভারতের জমিতে ঢুকে চীন তাদের চিহ্ন রেখে গেলে, তা কখনো সত্য হতে পারে না। আমাদের বাহিনী এলএসি-তে কঠোর নজরদারি চালাচ্ছে এবং চীনা সেনাদের স্থায়ী নির্মাণ করতে দিচ্ছে না।”
তিনি আরও বলেন, "প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার (এলএসি) কিছু অনির্ধারিত এলাকা রয়েছে। এ ধরনের জায়গায় দুই দেশের সেনাবাহিনী মাঝেমধ্যে টহল দেয় এবং চিহ্ন রেখে যায়। তবে এসব কোনোভাবেই দখলদারির প্রমাণ নয়।"
সীমান্ত পরিস্থিতি ও উত্তেজনা :অরুণাচল প্রদেশ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যের অন্যতম। চীনের সঙ্গে এই রাজ্যের ১,১২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। চীন দীর্ঘদিন ধরে পুরো অরুণাচলকে নিজের বলে দাবি করে আসছে। এই ভূখণ্ড নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকবার উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার চীনের দাবিকে অস্বীকার করছে, তবে চীনের সাম্প্রতিক কার্যকলাপ নতুন করে সীমান্তের উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ :এই অনুপ্রবেশ ভারত-চীন সম্পর্কের জটিলতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সীমান্তে এই ধরনের কার্যকলাপ সামরিক এবং কূটনৈতিক দিক থেকে দুই দেশের জন্য উদ্বেগজনক। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে সীমান্ত নজরদারি আরও জোরদার করার পরামর্শ দিচ্ছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।
সীমান্ত বিবাদ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত থাকলেও এর দীর্ঘস্থায়ী সমাধান এখনো অনিশ্চিত। ভারত সরকারের জন্য এটি কেবল সীমান্ত রক্ষার বিষয় নয়, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিজের অবস্থান দৃঢ় করারও বড় পরীক্ষা।