প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তন অথবা অবসান ঘটানো এখনই গুরুত্বপূর্ণ সময়
জাতিসংঘের সৃষ্টি করা হয়েছিল বিশ্বে শান্তি ও সহযোগিতার জন্যে, কিন্তু আজকের বিশ্বে এর কার্যকারিতা এবং ভূমিকা বিতর্কের বিষয়। বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্যে জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তন অথবা অবসান ঘটানো এখনই গুরুত্বপূর্ণ সময়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব জাতিসংঘ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। জাতিসংঘের কাজ শান্তির জন্যে কাজ করা, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। গ্লোবাল পলিসি ফোরাম সংস্থার একটি হিসাব অনুযায়ী, জাতিসংঘের সমগ্র কর্মকাণ্ডের বার্ষিক ব্যয় প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার। জাতিসংঘের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার এবং শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার কারণ কি নেই? বিশ্ব যখন মার্কিন গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতিনিধিত্ব করে এবং গণতন্ত্রকে উন্নীত করতে সাহায্য করে সে সম্পর্কে কথা বলে তখন এটি আকর্ষণীয় শোনায়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে, গণতন্ত্র প্রবর্তনের জন্যে দেশে তাদের হস্তক্ষেপ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতির দিকে নিয়ে গেছে, লাখ লাখ মানুষ সন্ত্রাস ও ভীতি প্রদর্শনের শিকার হয়েছে। এটি গুরুতর সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে গোটা বিশ্বের জন্যে।
>> দীর্ঘ ছয় বছর (১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল) পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে। বিজয়ী মিত্রশক্তি পরবর্তীকালে যাতে যুদ্ধ ও সংঘাত প্রতিরোধ করা যায় এই উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হয়। তখনকার বিশ্ব রাজনীতির পরিস্থিতি জাতিসংঘের সাংগঠনিক কাঠামোতে এখনও প্রতিফলিত হয়ে চলেছে।
>> উদাহরণস্বরূপ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ৫টি স্থায়ী সদস্যদের ভেটো প্রদানের ক্ষমতা। এই পাঁচটি দেশ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া এবং গণচীন। এর কারণ হলো, এরা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী দেশ।
>> অক্টোবর ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ১৯৩টি। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে অবস্থিত। সাংগঠনিকভাবে জাতিসংঘের প্রধান অঙ্গ সংস্থাগুলো হলো সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ, সচিবালয়, ট্রাস্টিশীপ কাউন্সিল এবং আন্তর্জাতিক আদালত। এছাড়াও রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনেস্কো, ইউনিসেফ ইত্যাদি।
>> জাতিসংঘের প্রধান নির্বাহী হলেন এর মহাসচিব। কথিত রয়েছে, পৃথিবীর বিভিন্ন সমস্যা এবং শত কোটি মানুষের জীবনের মান উন্নয়নে জাতিসংঘের মহাসচিব এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আর তাই এই কাজের জন্যে সেরা ব্যক্তিটিকে বেছে নেওয়া জরুরি। কিন্তু জানেন কি, এই নির্বাচন প্রক্রিয়া গোপনীয় এবং সেখানে মাত্র ৫টি রাষ্ট্র এই সিদ্ধান্তের ক্ষমতা রাখে? এটা আমাদের সবাইকে প্রভাবিত করে।
>> ভেটো কী এবং কে বা কারা ভেটো দেবার ক্ষমতা রাখে এবং কেন?
>> ভেটো ইংরেজি শব্দ। এর মানে বাধা। ভেটো হচ্ছে একপক্ষীয়ভাবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, দেশের মনোনীত প্রতিনিধি কর্তৃক কোনো সিদ্ধান্ত বা আইনের ওপর স্থগিতাদেশ প্রদান করা। অবশ্যম্ভাবী শব্দ হিসেবে ভেটো শব্দটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ব্যাপকভাবে পরিচিত ও এটি বৈশ্বিকভাবে বিরাট প্রভাব বিস্তার করে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া এবং ফ্রান্স এই ৫টি দেশের প্রত্যেকেই ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকারী। এর মাধ্যমে যে কোনো একটি দেশ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত যে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও আইন প্রণয়ন অনুমোদনে বাধা প্রদান করতে পারে। যার কারণে অন্য সব দেশ প্রস্তাবের পক্ষে থাকলেও কোনো কাজ হয় না। যেমন গণহত্যাসংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলো ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে বিধায় অনেক সমস্যার কোনো সমাধান নেই। নিরাপত্তা পরিষদের ৫টি স্থায়ী সদস্য দেশ বেসামরিক মানুষদেরকে রক্ষার চেয়ে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ বা ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থকে বেশি প্রাধান্য দেয়। সেক্ষেত্রে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বেসামরিক মানুষদেরকে রক্ষায় দারুণভাবে ব্যর্থ।
>> দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর এভাবেই চলছে জাতিসংঘের কাজ। বিশ্ব রাজনীতিতে জোর যার মুল্লুক তার (might is right) কনসেপ্ট ব্যবহৃত হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের মতো দেশের তেমন কোনো ক্ষমতা নেই জাতিসংঘে প্রভাব বিস্তার করা।
>> নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটিয়ে ধর্ম, বর্ণ, ভাষার দোহাই দিয়ে গণতন্ত্রের শাসন কায়েম করা সম্ভব হবে না। বরং দুর্নীতির অবসান ঘটাতে হবে। সন্ত্রাস দূর করার জন্যে বিশ্বে অপারেশন ক্লিনহার্ট, এনকাউন্টার, ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ ইত্যাদি চালানো হচ্ছে। জঙ্গিবাদ দমনের জন্যে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জঙ্গিবাদবিরোধী যুদ্ধে শামিল থাকার চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে।
>> এভাবে সমস্যার কোনো সমাধান হতে পারে না। বিশ্বে দিনে দিনে প্রতিশোধমূলক আচরণ এবং ঘৃণার বীজ বিশাল আকারে প্রভাব ফেলছে। এখন সময় এসেছে বুঝেশুনে কাজ করার। গণতন্ত্রের বিকল্প নেই, কিন্তু কীভাবে তা পাওয়া সম্ভব? স্বল্প সময়ে সবকিছু সহজে ফিরে পাওয়া যাবে না। কারণ উপরের বর্ণনায় বিশ্ব রাজনীতির অবস্থা এতোটাই দুর্বল যে, ন্যায়বিচার থেকে শুরু করে কোনো ভালো কিছুই আমরা আশা করতে পারি না। সেক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের সমস্যার সমাধান নিজেদেরকেই করতে হবে।
>> গোটা বিশ্ব এখন নানা সমস্যার মাঝে হাবুডুবু খেতে শুরু করেছে। গ্লোবালাইজেশন এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। বিশ্ব ভাবতে শুরু করেছে কীভাবে প্রযুক্তিকে আরও জোরালো করা এবং সেই সঙ্গে মানুষের ফিজিক্যাল মুভমেন্ট বন্ধ করা যায়। গ্লোবালাইজেশনের অবসান ঘটাতে হলে গ্লোবাল মুভমেন্টের বন্ধ করতে হবে। তাকি আদৌ সম্ভব এখন? ধর্ম, রাজনীতি, বর্ণ ভাষাগতভাবে মানব জাতি চেষ্টা করেছে পৃথিবীতে স্থিতিশীলতা আনতে, সম্ভব হয়নি। এখন কী করা বাকি রয়েছে বা আমাদের কী করণীয় যদি একটি সুন্দর পৃথিবী পেতে চাই?
>> আমি মনে করি নিজ নিজ জায়গা থেকে পরিবর্তন আনতে হবে। Agree to disagree concept -এ বিশ্বাস আনতে হবে। দরিদ্রতা দূর করতে হবে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ কমাতে হবে, respect and be respected, accept and be accepted কনসেপ্টের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। ভিক্ষা, ধার বা অনুদান কখনও স্বাধীনতা দিতে পারে না।
>> সবশেষে জাতিসংঘের পরিবর্তন ঘটাতে হবে। যেমন ৫টি সুপার পাওয়ার নয়, ১৯৩টি দেশের সমন্বয় ঘটাতে হবে সব ধরণের সিদ্ধান্তে, তা না হলে সত্যের জয় কখনও হবে না। সেক্ষেত্রে বলা যেতে পারে বর্তমানে জাতিসংঘ বিশ্ব সমস্যার সমাধানে 'গুড ফর নাথিং' ভূমিকা পালন করছে। সেক্ষেত্রে ভুল হবে কি যদি বলি, জাতিসংঘের পরিবর্তন ঘটাতে হবে আর তুলে নিতে হবে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা।
এটা যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ঠিক আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রাজধানীর বিকেন্দ্রীকরণ করা।
>> ব্যাল্যান্স বা ভারসাম্য কী? কীভাবে তা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব? আদৌ সম্ভব কিনা তা প্রতিষ্ঠিত করা? মানবজাতির দৈনন্দিন জীবনের ২৪ ঘণ্টাকে যদি তিন ভাগে ভাগ করি যেমন ৮ ঘণ্টা ঘুম, ৮ ঘণ্টা কাজ, বাকি ৮ ঘণ্টা যা খুশি তাই করা, তাহলে আমাদের জীবনযাপনে ভারসাম্য থাকার কথা।
>> এখন আমরা সামাজিক জীব এবং বাস করছি পৃথিবীতে। যেখানে রয়েছে নানা ধরণের বাধাবিঘ্ন বা সুবিধা-অসুবিধা। সব মিলে সম্ভব হয়ে উঠছে কি ভারসাম্য ঠিক রাখা? উঠছে না।
>> তখন আমরা হয় কোনো রকমে মানিয়ে চলি অথবা অনিয়মের মধ্য দিয়ে চলি। যেমন ৮ ঘণ্টা কাজের জায়গা হয় ১০ ঘণ্টা বা কোনো সময় ৬ ঘণ্টা কাজ করি। যার কারণে বাকি যে ১৬ ঘণ্টা ছিল, তাও ছিল ৮ ঘণ্টা করে, তা আর ঠিক রাখা সম্ভব হয় না। ফলে ভারসাম্য যেভাবে থাকার কথা তা থাকে না। ভারসাম্য যখন ঠিক থাকতে পারে না তখন হয় ডেভিয়েশন বা চ্যুতি। আর এই ডেভিয়েশনের কারণে সৃষ্টি হয় উচ্ছৃঙ্খলতা এবং দূষণ পরিবেশ, যা ঘটছে বিশ্বের সর্বত্র।
>> তবে বাংলাদেশে, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় এর পরিমাণ মাত্রার সীমা ছাড়িয়ে চলেছে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। যা সমাজের জন্যে কখনও মঙ্গলজনক কখনও বা অমঙ্গলজনক।
>> বাংলাদেশে ট্রাফিক নিয়ম না মানার কারণে গত কয়েক বছর আগে বয়ে গেল ঝড় সারাদেশ জুড়ে। স্কুলের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা চোখের ভেতর আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দিল সবার ভুল ত্রুটি। পরে দুই তিন সপ্তাহ না যেতেই চলে এলো ঈদুল আযহা। সবাইকে তার আপনজনের কাছে যেতে হবে তাও একই সময়ে। কী করা! আইন বলে যে কথা আছে সেটা সবাই ভুলে আগের জায়গায় ফিরে গেল।
>> যদি ট্রাফিকের নিয়ম অনুযায়ী যানবাহন চলাচল করে, তবে সীমিত যানবাহন চলাচলের সুযোগ রয়েছে পুরোদেশে। আমরা বিষয়টি ছোটবড় সবাই জানি। কিন্তু মাঝে মাঝে দেখা যায়, চাহিদার তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা কম, যার ফলে সম্ভব হয়ে উঠে না নিয়ম মাফিক ও নিরাপদে যানবাহন চালানো। পৃথিবীর কোথাও এমনটি নিয়ম নেই যে, গাড়ির বা ট্রেনের ছাদে করে যাত্রী চলাচল করতে পারে, যা বাংলাদেশে রয়েছে। তবুও সরকার, যানবাহনের মালিক এবং জনগণ সব নিয়ম কানুনের কোরবানি দিয়ে যার যা খুশি তাই করছে কোনো বাধা ছাড়া।
>> সবাই জানে যে, একটি অঘটন ঘটলে কত মানুষ প্রাণ হারাতে পারে। তারপরও হচ্ছে কি ভারসাম্য রক্ষা করা? হচ্ছে না। কারণ কী? সব সময় যদি 'hand to mouth ' কনসেপ্ট ব্যবহার করা হয় তখন এমনটিই ঘটে থাকে। যে সমস্যাগুলো আমাদের নিজেদের তৈরি সে সমস্যার সমাধান করতে হলে আমাদেরকে শর্ট এবং লং টার্ম পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এগুতে হবে।
>> একটি দেশ চালাতে হলে সেই দেশের ভৌগোলিক ক্যাপাসিটি বা ক্যাপাবিলিটি সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণ জ্ঞান থাকতে হবে। আছে কি সেটা আমাদের? থাকলে কীভাবে সব কিছুই ঢাকাতে স্থাপন করা হচ্ছে দিনের পর দিন? সারাদেশের সবকিছুই কি হতে হবে ঢাকাতে? তাহলে বাকি দেশটার কী হবে?
>> নৌ-বাহিনীর হেড কোয়ার্টার, বনজ সম্পদের হেড কোয়ার্টার, কবরস্থানের হেড কোয়ার্টার--এগুলোও কি ঢাকাতেই থাকতে হবে? এখন যেহেতু সবকিছু ঢাকাতে, সেহেতু সবার দৌড় ঢাকার দিকে। যার ফলে শুধু ট্রাফিক নয়, সর্বক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এর থেকে রেহাই পেতে হলে ঢাকাকে ফাঁকা করতে হবে প্রথমে এবং তা সম্ভব বিকেন্দ্রীকরণের মধ্য দিয়ে।
>> ৬৪টি জেলার ভূমি ও অবকাঠামোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা খুবই প্রয়োজন এখন। হাজার হাজার কোটি ডলার খরচ করে স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে মহাকাশে। সেই স্যাটেলাইটের যুগে কি আছে দরকার সবকিছু এক জায়গায় থাকার? রাজধানীকে দূষণমুক্ত এবং বসবাসের উপযুক্ত করতে হলে সত্বর সরাতে হবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে। যে কোনো অবস্থাতেই ঢাকায় বসবাস করতে হবে এ মনমানসিকতা দূর করতে হলে প্রথমে যে কাজগুলো করতে হবে তা হলো : কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে নানা শিল্প-কারখানা, প্রতিরক্ষা বাহিনীর হেডকোয়ার্টার ইত্যাদি ঢাকা থেকে সরাতে হবে। এতে করে উন্নত হবে পুরো দেশ এবং হবে দেশের জনসংখ্যার সঠিক বিন্যাস। এর ফলে লজিস্টিকের ভারসাম্যতা থাকবে নিয়ন্ত্রণে।
>> ঢাকা শহরের উপর চাপ কমাতে আরো যে কাজগুলো করতে হবে সেগুলো হলো : ঢাকা শহরের ভেতরে শিল্প, ব্যবসা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপনে কড়াকড়ি নিয়ম আরোপ করতে হবে, প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে এবং ঢাকা শহরকে পরিবেশগত ও সামাজিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
>> জেলা শহরগুলোয় ঢাকার সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া দরকার। যাতে যেকোনো কারণেই মানুষের ঢাকায় আসতে না হয়। আমাদের সবার দায়িত্ব ঢাকা শহরকে পুরোপুরি মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানোর। এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। এতে করে অন্য শহরগুলোর সুযোগ-সুবিধা বাড়বে, দ্বিতীয় সারির শহরগুলো উন্নত হবে, সমগ্র গ্রাম এলাকায় কর্মসংস্থান ও সুযোগ-সুবিধা বাড়বে।
>> মানবজাতির অধঃপতন তখনই ঘটে যখন তারা শুধু নিজেকে নিয়ে এবং ক্ষণিকের সময়টুকু নিয়ে ভাবে। একটি দেশ যখন নতুন প্রজন্মকে ভুলে যায় তখনই হিসাবের গরমিলটা বড় আকারে দেখা দেয়।
>> ধরা যাক, বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে নতুন সরকার যদি কালই গঠন করা হয়, কী মনে হয়? আগামী রমজান মাসে কেউ কি ছাদে করে নিয়ম ভেঙ্গে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাবে না? নিয়মের বাইরে কিছু করবে না? না তা হবে না। কিছু লোক পাল্টাবে, তাদের ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধার জন্যে তারা কিছু নিয়মকে অনিয়মের আওতায় আনবে। সঙ্গে নতুন সমস্যা এবং আগের পুরানো সমস্যার বোঝা বাড়তে থাকবে। সহজ ভাষায় বলতে হয়, ব্যাংকে ঋণ রয়েছে, নতুন ঋণ নিয়ে কিছু পুরানো ঋণ শোধ দেওয়া। সঙ্গে সুদে মূলে নতুন ঋণের বোঝা বাড়ানো। উদাহরণ, গ্রামীণ ব্যাংকের ধার শোধ করতে ব্র্যাক ব্যাংকে যেতে হবে, তারপর আশা ব্যাংকে এবং সর্বশেষে হতে হবে সর্বহারা! এমনটি যদি জাতির ম্যানেজমেন্ট স্টাইল হয়, তাহলে বাংলাকে সোনার বাংলা করা হবে কি? না, হবে না। বাংলা হবে কোটি কোটি মানুষের অভিশাপের বাংলা, দুর্নীতির বাংলা, অন্যায় অত্যাচারের বাংলা।
>> ঋণমুক্ত, অভাবমুক্ত ও সুন্দর সোনার বাংলা পেতে হলে মানবতা ও মনুষ্যত্বের ভারসাম্য রক্ষা করা দরকার আগে এবং এর জন্য দরকার সবার মানসিকতার পরিবর্তন। তা না হলে সম্ভব হবে না বাংলাদেশের ভারসাম্য বা ব্যাল্যান্স নিয়ন্ত্রণে আনা।
>> বর্তমানে বিশ্বের সভ্যজগতে চলছে ধ্বংসাত্মক অ্যাক্টিভিটিজ, যার ফলে ইউক্রেন হারাতে বসেছে তার হেরিটেজ। অন্য দিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ধ্বংসাত্মক ক্ষতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে চলেছে, যার জ্বলন্ত প্রমাণ এই মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টিপাত। যদি প্রকৃতি হঠাৎ করে বাংলাদেশ তথা রাজধানীকে ছোবল মারে, তবে ঢাকাকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে আর দেরি নয় দেশকে, দেশের রাজধানীকে প্রকৃতির হাত থেকে রক্ষা করতে প্রোঅ্যাক্টিভ পদক্ষেপ এবং ক্রিয়েটিভ পদ্ধতির ব্যবহারই একমাত্র সমাধান।
>> ধরুন একটি ঝুড়িতে ১৮টি আম, তার মধ্যে একটি আমের পচন ধরেছে, বাকি ১৭টি আম শত চেষ্টা করলেও পচা আমটিকে ভালো করতে পারবে না। তবে একটি পচা আম ১৭টি আমকে পচাতে পারবে। ঠিক একইভাবে দেশের পরিকাঠামো যদি দুর্নীতিগ্রস্ত এলিট গ্রুপের কারণে সঠিক পরিকল্পনা থেকে পথভ্রষ্ট হয়ে থাকে, তাহলে তাকে এখন নিয়ন্ত্রণাধীনে আনতে হবে। অর্থাৎ ১৭ কোটি মানুষের রাজধানী ঢাকাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। ভয়াবহ এবং ধ্বংসাত্মক প্রাকৃতিক আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ঢাকাকে অবিলম্বে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ততোই শ্রেয়।
>> আমি এখন বসত করি বিশ্বের এক উন্নত দেশে, যেখানে শব্দ দূষণ, ট্রাফিক জ্যাম, ঘনবসতিপূর্ণ জীবন বা দুর্নীতির কোনো বালাই নেই। সাগরের পাড়ে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে আছি প্রায় চল্লিশ বছর ধরে, তারপরও মাতৃভূমিকে, তার পরিকাঠামোকে সুন্দর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠতে দেখতে চাই। বড় সাধ জাগে, সেই দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মতো করে দেখতে আমার দেশকে, কারণ--পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখী, কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি, গুঞ্জরিয়া আসে অলি, পুঞ্জে পুঞ্জে ধেয়ে, তারা ফুলের উপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে। এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।
রহমান মৃধা : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। [email protected]