প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২২, ২২:১৮
শ্রীলঙ্কার চলার মতো জ্বালানি আছে আর মাত্র ১ দিনের
নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হওয়া শ্রীলঙ্কার হাতে আর মাত্র একদিনেরও কম সময়ের জ্বালানির মজুদ আছে। অর্থাৎ দেশটির কাছে যে জ্বালানির মজুদ আছে, তা দিয়ে একদিনও চলা যাবে না। দেশটির অর্থনৈতিক সংকট গুরুতর আকার ধারণ করায় গণপরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। রোববার শ্রীলঙ্কার জ্বালানিমন্ত্রী কাঞ্চনা উইজেসেকেরা এই তথ্য জানিয়েছেন।
রাজধানী কলম্বোতে পেট্রল এবং ডিজেলের দীর্ঘ সারি সাপের মতো এঁকে বেকে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত চলে গেছে। যদিও দেশটির বেশিরভাগ পাম্প স্টেশন দিনের পর দিন জ্বালানিবিহীন রয়েছে। মন্ত্রী কাঞ্চনা উইজেসেকেরা বলেছেন, দেশে প্রায় ৪ হাজার টন পেট্রল মজুদ আছে। যা দেশের একদিনের চাহিদারও কম।
কলম্বোতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে লঙ্কান এই মন্ত্রী বলেছেন, দেশে পেট্রলের পরবর্তী চালান আগামী ২২ এবং ২৩ জুলাএয়র মধ্যে আসতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, আমরা জ্বালানির অন্যান্য সরবরাহকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিন্তু ২২ জুলাইয়ের আগে নতুন কোনও সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছি না।
এর আগে, গত সপ্তাহে নগদ অর্থ সংকটে ভুগতে থাকা শ্রীলঙ্কা জরুরি পরিষেবা খাতের পরিবহন ছাড়া অন্যান্য যানবাহনের পেট্রল এবং ডিজেলের বিক্রিতে দুই সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। রোববার দেশটির বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। সোমবার ব্যাংক এবং অফিস পুনরায় চালু হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কার পরিবহন ব্যবস্থার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ যানবাহনই বেসরকারি মালিকানাধীন। জ্বালানির সংকটের কারণে এই খাতও ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশটির বেসরকারি মালিকানাধীন বাস পরিবহন সংস্থার চেয়ারম্যান গেমুনু উইজেরত্নে বলেছেন, আমাদের সদস্যদের মালিকানাধীন ২০ হাজার বাসের মধ্যে বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ১ হাজার বাস পরিচালনা করা হচ্ছে। ডিজেল পাওয়ার কোনও উপায় না থাকায় আগামীকাল এই পরিস্থিতি নিশ্চিতভাবেই খারাপ হবে। তিনি বলেন, সোমবার বাস পরিষেবা আরও হ্রাস করা হবে এবং এর তাত্ক্ষণিক কোনও সমাধান দেখা যাচ্ছে না।
১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এবারই সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। করোনা মহামারি, জাতীয় অর্থনীতি পরিচালনায় সরকারের অদক্ষতা, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। ডিজেলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। ফলে গত কয়েক মাস ধরে সেখানে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না।
বর্তমানে শ্রীলঙ্কার জ্বালানি তেলের পাম্পে সেনা প্রহরা বসানো হয়েছে। যারা জ্বালানি কিনতে আসছেন, সেনা সদস্যদের কাছ থেকে টোকেন নিয়ে পাম্পের সামনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। পাম্পে তেলের সরবরাহ এলে তবেই পেট্রল, ডিজেল কিনতে পারছেন তারা।
চলমান অর্থনৈতিক সংকটের সমাধানে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে বেলআউটের আবেদন করেছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে আইএমএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে লঙ্কান সরকারের আলাচনা শুরু হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জ্বালানি স্টেশনের বাইরে বিক্ষিপ্তভাবে সংঘর্ষও হয়েছে। গত সপ্তাহে রাজধানী কলম্বোর উত্তরের একটি জ্বালানি স্টেশনে সাধারণ জনগণের দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে গুলিবর্ষণ করে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী।