প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৭
ঔষধ আবিষ্কারে কাজ করবে এআই মডেল
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির উৎকর্ষতা এখন প্রতিফলিত হচ্ছে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। শিক্ষা, গবেষণা, কারখানার উৎপাদন, কৃষি, চিকিৎসার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে ইতোমধ্যেই উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে শুরু করেছে এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স)। এআই প্রযুক্তিকে আরও কতোটা কার্যকরভাবে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায় সে নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। এমন এক উদ্ভাবনী গবেষণা থেকে তৈরি এআই মডেল এবার নতুন ঔষধ আবিষ্কারে কাজ করতে যাচ্ছে।
জৈবপ্রযুক্তি (বায়োটেক) নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান আয়েম্বিক থেরাপিউটিক মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) ‘এনচ্যান্ট’ নামের নতুন একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মডেল উন্মোচন করেছে। নতুন ঔষধ আবিষ্কারে গবেষকদের সহায়তা করবে নতুন এই এআই মডেল। এতে করে ঔষধ আবিষ্কারের সময় ও খরচ দুটোই উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে বলে দাবি করছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।
ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে উন্নত গবেষণায় এআই প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এক্ষেত্রে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারে বড়ো সাফল্য পেলো আয়েম্বিক থেরাপিউটিক।
উল্লেখ্য, এই বায়োটেক প্রতিষ্ঠানটিতে ইতোপূর্বে বিনিয়োগ করেছে জনপ্রিয় এআই চিপ নির্মাতা এনভিডিয়া।
গবেষণাগারে বিভিন্ন ঔষধের পরীক্ষায় ব্যবহৃত প্রি-ক্লিনিক্যাল ডেটাসেট দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে নতুন এআই মডেল ‘এনচ্যান্ট’কে। মানুষের ওপর পরীক্ষা করার আগে প্রাথমিকভাবে গবেষণাগারে চালানো পরীক্ষার ডেটাই হলো প্রি-ক্লিনিক্যাল ডেটা।
নতুন এআই মডেলটিকে এমনভাবেই তৈরি করা হয়েছে, যাতে করে এটি গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে একটি ঔষধ কেমন পারফর্ম করবে সেটা অনুমান করতে পারে। সম্প্রতি আয়েম্বিক তাদের নতুন এই উদ্ভাবন সম্পর্কে একটি শ্বেতপত্র (হোয়াইট পেপার) প্রকাশ করেছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, মানুষের শরীর নির্দিষ্ট কয়েকটি ঔষধ কতোটা ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারবে এ বিষয়ে সাফল্যের সাথেই অনুমান করতে পেরেছে ‘এনচ্যান্ট’ নামক এআই মডেলটি। এক্ষেত্রে মডেলটির অনুমিত ফলাফলের সাথে বাস্তব ফলাফলের তুলনা করা হয়েছে।
সঠিকভাবে অনুমানের ক্ষেত্রে মডেলটির সাফল্যের হার অনেক বেশি।
আয়েম্বিক জানিয়েছে, ‘এনচ্যান্ট’-এর সঠিকভাবে অনুমান করার সক্ষমতার হার শূন্য দশমিক ৭৪। যেখানে পূর্বের মডেলগুলোতে নির্ভুলভাবে অনুমান করতে পারার হার ছিল শূন্য দশমিক ৫৮।
কোনো একটি ঔষধ মানুষের শরীরে কতোটা কার্যকর হবে--এটা ‘এনচ্যান্ট’- এর মতো এআই মডেলগুলো যতোটা ভালোভাবে ও সঠিকভাবে অনুমান করতে পারবে ততোই নতুন ঔষধ আবিষ্কারে সময় ও খরচ কম হবে। কারণ ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন ঔষধ আবিষ্কারের ক্ষেত্রে সময় ও খরচের একটি বড়ো অংশই নির্ভর করে পরীক্ষায় ব্যর্থতার হারের (ফেইলিওর রেটের) উপর। অর্থাৎ, পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার হার যত বেশি হবে, সময় ও খরচও তত বেশি ব্যয় হবে।
এই প্রেক্ষিতে ‘এনচ্যান্ট’ মডেলটি নতুন ঔষধ আবিষ্কারে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
আয়েম্বিক থেরাপিউটিক-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) ফ্রেড ম্যানবি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন যে, তাঁদের তৈরি এআই মডেলটি ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন ঔষধ আবিষ্কারের খরচ অর্ধেক কমে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘নতুন পণ্য (ঔষধ) বাজারে নিয়ে আসার সম্ভাব্য খরচ ২ বিলিয়ন ডলার বলা হয়ে থাকে এবং এর একটি বড়ো অংশই প্রোগ্রামের খরচ নয়, বরং পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার কারণে সৃষ্ট খরচ। একেবারে শুরু থেকে কোনো একটি ঔষধ বাজারে নিয়ে আসা পর্যন্ত মোট খরচ তখনই বেড়ে যায় যখন একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে ব্যর্থ হতে হয়। ক্লিনিক্যাল ডেভেলপমেন্টের প্রতিটি পর্যায়ে যদি ১০ শতাংশ উন্নতিও করা যায়, তাহলে সার্বিকভাবে খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে।
২০১৮ সালে রসায়নে নোবেল জয়ী ফ্রান্সেস আর্নল্ড বর্তমানে আয়েম্বিকের বোর্ডের একজন সদস্য। তিনি রয়টার্সকে জানিয়েছেন যে, ঔষধ আবিষ্কারে এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ‘এনচ্যান্ট’ মডেলটি বড়ো এক অগ্রগতির প্রকাশ।