সোমবার, ১২ মে, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ১২ মে ২০২৫, ০৯:৪০

নারীর হাড় ক্ষয় : একটি নীরব ঘাতক

ডা. ফারহানা মোবিন
নারীর হাড় ক্ষয় : একটি নীরব ঘাতক

আমাদের দেশে বেশ আয়োজন করে মা দিবস পালন করা হয়। কিন্তু মায়ের স্বাস্থ্যের দিকটা বরাবরই থাকে উপেক্ষিত। অথচ সুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য গর্ভবতী মাকেও হতে হবে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। এজন্য স্বাস্থ্য সচেতনতা যেমন জরুরি তেমনি জরুরি মায়ের পুষ্টিকর খাবার। ঙংঃবড়ঢ়ড়ৎড়ংরং বা হাড় ক্ষয় ও দুর্বল তেমন একটি রোগ যার অন্যতম কারণ অপুষ্টি। আজ আমরা ঙংঃবড়ঢ়ড়ৎড়ংরং বা হাড় ক্ষয় ও দুর্বল রোগের বিষয়ে আপনাদের বিস্তারিত ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো।

নারীদের ঙংঃবড়ঢ়ড়ৎড়ংরং (হাড় ক্ষয় ও দুর্বল) হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

আগেই বলেছিÑঅস্টিওপরোসিস (ঙংঃবড়ঢ়ড়ৎড়ংরং) মানে হাড় দুর্বল ও হাড়ের মধ্যে ছোট ছোট ছিদ্র হয়ে যাওয়া। নারীদের অস্টিওপরোসিস হয় পুরুষের তুলনায় শতকরা ৮০ ভাগ বেশি। নারীদের প্রায় ৩৫ এবং পুরুষের সাধারণত বয়স ৪০ হওয়ার পর থেকে হাড় দুর্বল হতে শুরু করে।

প্রতি বছর পুরো দেহের চেক আপ করাতে হবে। আমাদের অজানা কোনো অসুখ থাকলে পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়বে। অনেক রোগী আছেন যাদের দেহের কোনো কোনো হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে অথচ কোনো সমস্যা হচ্ছে না। যখন রোগী অনেক সিরিয়াস পর্যায়ে পৌঁছে যায় তখন ধরা পড়ে। এই জন্য প্রতি বছর পুরো দেহের চেক আপ করালে অনেক ক্ষতিকর পরিণতি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

সঠিক খাদ্যাভাস ও জীবন-যাপন পদ্ধতির অভাবে হাড় ক্ষয় হয়ে যায়। হাড় আমাদের পুরো দেহের ওজন বহন করে, আমাদেরকে সঠিক ভাবে চলাচল করতে সাহায্য করে, আমাদেরকে সোজাভাবে দাঁড়াতে এবং দৌড়ানোর জন্য অবদান রাখে।

নারীদের অস্টিওপরোসিস হওয়ার কারণ

১. প্রতি মাসে নারীদের পিরিয়ড এর মাধ্যমে রক্তপাত হয়। দীর্ঘদিন বা দীর্ঘ বছর যাবত সঠিক ভাবে পুষ্টিকর খাবার এর অভাব।

২. মা হওয়ার পর সন্তানকে খাওয়ানো এবং সেই অনুপাতে সঠিক পরিমাণে খাবার ও বিশ্রামের অভাবে মায়েদের হাড় দুর্বল হয়ে যায়। এই দুর্বলতা নারীদের বয়স ৪০ হওয়ার পর থেকে আরো প্রকট হতে শুরু করে।

৩. কিশোর বয়সে অতিমাত্রায় কায়িক পরিশ্রমের অভাব, বয়স বৃদ্ধি, দেহের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন তৈরি না হওয়া বা সঠিক ভাবে কাজ করতে না পারা। যেমন : মেনোপজ হওয়ার পর থেকে অধিকাংশ নারীদের অস্টিওপরোসিস হতে শুরু করে। মেনোপজ মানে পিরিয়ড চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া। মেনোপজ হলে নারীদের দেহে জরুরি কিছু হরমোনসহ বহুবিধ পুষ্টির ঘাটতি দেখা যায়। এই ঘাটতিগুলো হাড়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।

৪. গর্ভাবস্থার সময়ে সঠিকভাবে আয়রন ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি, পরবর্তীতে হাড় দুর্বল করে ফেলে।

৫. অতিমাত্রায় শারীরিক পরিশ্রম কিন্তু সেই অনুপাতে পর্যাপ্ত খাবারের অভাব।

৬. দীর্ঘ বছর যাবৎ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, রক্তশূন্যতা, নিয়মিত সূর্যের আলোতে না থাকা।

৭. দীর্ঘ বছর অতিমাত্রায় খাবার নিয়ন্ত্রণ, অতিরিক্ত ব্যায়াম, কোনো ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতে হাড় দুর্বল হতে পারে।

৮. কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, দীর্ঘ বছর মাদকদ্রব্য সেবনের জন্য নারী-পুরুষ উভয়ের হাড় ক্ষয় হতে পারে।

হাড় ক্ষয় ও দুর্বল রোগের প্রতিকার

১. নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার যেমন : শাক—সবজি, বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফল, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, দুধ এবং দুধ দিয়ে তৈরি খাবার খেতে হবে।

২. বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

৩. নিয়মিত হাঁটাÑচলা, বাসার কাজে অংশগ্রহণ, যতটা পারা যায় সিঁড়ি দিয়ে ওঠা—নামা করতে হবে।

৪. অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বা নির্ণয় হওয়া কোনো অসুখ থাকলে সেই মোতাবেক চিকিৎসা করাতে হবে।

৫. বাড়ন্ত বয়স, গর্ভাবস্থা, মাতৃদুগ্ধ দান করার সময়ে, মেয়েদের পিরিয়ডের সময়ে, বড় কোনো অপারেশন হবার পরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিনÑডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।

৬. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হাড়ের ব্যথা কমানোর ঔষধ খাওয়া অনুচিত।

৭. দেহের কোনো মাংস পেশি অথবা হাড়, কোমর, ঘাড় বা পায়ের পাতার মধ্যে দীর্ঘ বছর যাবৎ ব্যথা বা জ্বালা পোড়া, অবশভাব থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

৮. ইউটিউব দেখে বা গুগল থেকে লেখাপড়া করে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যায়াম করা, কোনো ঔষধ খাওয়া বা কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো থেকে বিরত থাকবেন।

৯. প্রতি বছর পুরো দেহের চেক আপ করাতে হবে। আমাদের অজানা কোনো অসুখ থাকলে পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়বে। অনেক রোগী আছেন যাদের দেহের কোনো কোনো হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে অথচ কোনো সমস্যা হচ্ছে না। যখন রোগী অনেক সিরিয়াস পর্যায়ে পৌঁছে যায় তখন ধরা পড়ে। এই জন্য প্রতি বছর পুরো দেহের চেক আপ করালে অনেক ক্ষতিকর পরিণতি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

১০. যাদেরকে অতিমাত্রায় শারীরিক পরিশ্রম করতে হয় তাদেরকে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এর পাশাপাশি নিয়মিত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।

১১) যে-সব নারীর বার বার গর্ভপাত হয়, তাদেরকে পরবর্তীতে সন্তান নেয়ার আগে থেকেই চিকিৎসকের অধীনে থাকতে হবে। কারণ বার বার গর্ভপাত হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিনÑডিসহ বহুবিধ পুষ্টির অভাব হয়।

এসব নিয়ম কানুন মেনে চললে আমরা অবশ্যই ঙংঃবড়ঢ়ড়ৎড়ংরং বা হাড় ক্ষয় ও দুর্বল রোগের হাত থেকে রক্ষা পাবো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়