শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৫, ০৮:০৬

পাঠক ফোরামের কবিতা

অনলাইন ডেস্ক

কাজী নজরুল ইসলাম নজু

বটগাছটার ছায়ায় ফিরে যাই

অফিস শেষে ক্লান্ত শরীরে বারান্দায় দঁাড়িয়ে চা খাই।

চোখ পড়ে দূরেÑএকটা বটগাছ,

তার ছায়ায় বসে ক’জন মানুষ,

আর কয়েকটা ছেলে গাছে উঠে হৈহুল্লোড় করছে।

দৃশ্যটা যেন আটকে যায় আমার চোখে।

হঠাৎ করেই মনে পড়ে যায়

আমার বাড়ির সামনে রেললাইনের পাশে দঁাড়িয়ে থাকা সেই বটগাছটার কথা।

যার ডালে চড়ে আমি একদিন আকাশ ছুঁতে চেয়েছিলাম।

যার ছায়ায় বসে দুপুর গড়িয়েছিল, বিকেল হেসে উঠেছিল,

আর সন্ধ্যা নামতো নিঃশব্দে নীরবে।

সূর্যাস্তের সোনালি রং গায়ে মেখে ঘরে ফেরা।

কতোদিন বসিনি তার ছায়ায়,

কতোদিন শুনিনি পাতার ফিসফাস পাখির কোলাহল

সে কি এখনো দঁাড়িয়ে আছে?

নাকি আমাকেই খুঁজে ফেরে প্রতিদিন

একটা ফঁাকা ছায়ার নিচে?

আমার শিকড় তো সেখানেই,

এই ইট-কাঠের শহর শুধু ঠিকানাÑ

বটগাছটা ছিলো আমার ঘর,

আর শৈশব ছিল তার ছায়ায় লুকিয়ে থাকা আমার গল্প।

এই কংক্রিট আর সময়ের দৌড়ে আমার সেই ছেলেবেলা,

সেই গাছটার নিচে কাটানো মুহূর্তগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।

তবু দূরের এই বটগাছটা প্রতিদিন আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয়Ñ

আমার একখণ্ড শৈশব এখনও কোথাও পড়ে আছে,

রেললাইনের পাশে দঁাড়িয়ে থাকা সেই পুরোনো গাছটার ছায়ায়।

আরিফ বিন মনির

অস্তিত্বের প্রতিচ্ছবি

আমি কি এক মুহূর্তের ছায়া মাত্র,

নাকি অসীম সময়ের এক রক্তিম রেখা?

চেতন আর অবচেতনের সন্ধিক্ষণে

নিরব প্রশ্নে জেগে ওঠে আত্মজিজ্ঞাসা।

সময় বয়ে চলে নদীর মতো,

বিস্মৃতির ঢেউয়ে ভেসে যায় ব্যথা।

চোখে দেখি যা, সবই কি বাস্তব?

না কি শুধু স্বপ্নের পাড়ায় কল্পজাল?

জীবনের মানে খুঁজি পাথরের মুখে,

শব্দহীন বাক্যে, নিঃসঙ্গ সুরে।

প্রতিটি হাসি এক দীর্ঘশ্বাসে বঁাধা,

আনন্দও যেন অজানা এক কঁাটা।

স্মৃতি, আশা, ব্যর্থতার বৃত্তে

চিরচেনা আমি অচেনা হতে হতে

তবু প্রশ্ন জাগে, এই যাত্রার শেষে

আছে কি কোনো আলো চিরন্তন হেসে?

নিভে যাও আলো, জেগে থাক ছায়া,

তোমারই মাঝে আমি খুঁজি মায়া।

কারণ যে পথ যায় না দেখা দূর,

সেই পথেই তো রয়েছে সত্যের সুর।

ছবি : ২৮। উজ্জল ভাই এই ছবিটা আমাদের বেলুয়া নদীর, দেখতে কেমন। আমার নিজের তোলা।

কাজী আজিজুল হাকিম নাহিন

বেলুয়া নদী

অবিরাম ছুটে চলে শান্ত এক নদী,

জোয়ার-ভাটায় চলে জীবনের গতি;

দুই ধারে তরু, পবণ করে খেলা,

পাখিরা গায় গান, ঊর্মি দেয় দোলা।

সূর্যের আলো পড়ে যেই বুকে,

চিকচিক করে সবার মুখে।

কলকল শব্দে ভরে উঠে মন,

ফসলি জমিতে ছুঁয়ে যায় জীবন।

বৈঠার শব্দে মাঝি দেয় পাড়ি,

ট্রলারে চলে দূর পথের ছবি।

ভেসে ওঠে শুশুক বেলুয়ার বুকে,

জেলেরা সেই দিকে জাল নিয়ে ছুটে।

খাল-বিলে ভরপুর, কচুরি পানায় ভরা,

মেঘের কালো ছায়ায় এক রোমাঞ্চকর খেলা।

রাতের অঁাধারে নিশ্চুপ নদী,

চঁাদের আলো পড়ে করে ঝিকিমিকি।

বেলুয়ার পাড়ে আছে বড়-ছোট বাজার,

বৃষ্টির ফেঁাটায় কান ভিজে সবার।

বেলুয়া নদী বয়ে যাবে যতদিন,

বেলুয়ার প্রতি ভালোবাসা রবে চিরদিন।

এন জে রাবেয়া

মোহনার বুকে চঁাদপুরের গঁাথা

চঁাদপুর মোহনায় জাগে জলের কঁাপন,

তিন নদী এসে মিলেÑমনে জাগে শিহরণ।

পদ্মা কঁাদে, মেঘনা হাসে, ডাকাতিয়া হয় চুপ,

মাটির মতো নিঃশব্দ, তবু বুকভরা হয় রূপ।

নৌকা ভাসে, লোক দঁাড়িয়ে, জালে তার হাত,

মুঠো মুঠো স্বপ্ন বোনে, কখন যেন দিন থেকে হয়ে গেল রাত।

ইলিশের ঘ্রাণে, চারদিক যায় ভরে, মনে পরে কারো ইলিশ ভাজার কথা,

বিধাতা লিখেছেন জননি মোহনার কোলে প্রিয় চঁাদপুরের গঁাথা।

দেখি, ঘাটে ঘাটে জাগে যে নারী,

ভাবি, সেও তো এক মোহনার কন্যা, কেমন হবে জলকথা তারি।

যখন গহীন রাতে সে শুনেছে নদীর বুকফাটা কান্না।

চঁাদপুর মোহনা শুধু জল আর ইলিশ নয়,

এ এক দৌহী মায়ের এমন করুণ কোল—

যেখানে নারী নদী হয়ে, জননী হয়ে

ধরে রাখে বাংলার সৌন্দর্য অটল।

ওহে মোহনা, হাজারো ব্যস্ততার মাঝে যখনি তোমার পানে আসি,

হৃদয়ের গহীন থেকে একটি কথাই আসে

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়