বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাজীগঞ্জে সাদপন্থীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি
  •   অবক্ষয়ের কারণে সমাজে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে চলছে
  •   মুন্সিগঞ্জে মানবতার স্পর্শ
  •   স্বপ্নের বই হাতে পেয়ে আনন্দে ফেটে পড়ল চাঁদপুরের শিক্ষার্থীরা
  •   চাঁদপুরে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ ও অশ্লীল ভিডিও তৈরি: নারী সদস্য গ্রেফতার

প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৭

পায়ে রস বা পানি নামা

ডা. পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
পায়ে রস বা পানি নামা

ফলের রস বা ফুলের রস কাক্সিক্ষত হলেও দু পায়ে রস ভর করা অনভিপ্রেত। দুপেয়ে মানুষ দু পায়ে ভর করে হেঁটে চলেছে অবিরাম এই বিশ্বে। পথ চলতে চলতে কোনোদিন পথিক আঁৎকে উঠেন। নিত্যদিনের হাল্কা পা যেনো হঠাৎ ভারী হয়ে গেছে। অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করেন, পা রসে স্ফীত হয়ে উঠেছে। হঠাৎ রসভার ধীরে ধীরে চিন্তায় গ্রাস করে পায়ে হাঁটা মানুষকে। উদ্বিগ্ন ভুক্তভোগীর চিন্তা অপনোদনের প্রয়াসে ‘রসস্ফীত পা’ নিয়ে নিচের এই আলোচনা।

দু পায়ে রসস্ফীতির কারণ

* রক্ত সংবহনতন্ত্রের যে সকল রোগে শিরার অভ্যন্তরে রক্তচাপ বেড়ে যায়, যেমন : হৃদপিন্ডের ডান অংশের অসক্ষমতা বা রাইট হার্ট ফেইলিওর।

* রক্তনালীর অভ্যন্তরস্থ অনকোটিক চাপ হ্রাস পাওয়া, যেমন : রক্তে অ্যালবুমিন নামক প্রোটিন ঘাটতি, যা সাধারণত কিডনী ও লিভার ফেইলিওর-এ হয়।

* রক্তবাহী শিরাসমূহের অপর্যাপ্ত কর্মসচলতা, যেমন : দীর্ঘক্ষণ কেউ বসে থাকার ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক দু পা ফুলে যায়, যা স্বল্পস্থায়ী অথবা কেউ হিমোসাইডেরিন রঞ্জকাক্রান্ত এক্জিমায় ভুগলে দীর্ঘস্থায়ী পায়ে রসস্ফীতিতে আক্রান্ত হয়।

* নিফিডিপিন জাতীয় উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ সেবনে পায়ের দিককার রক্তনালীগুলো স্ফীত হয় এবং পরবর্তীতে মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে রক্তনালী হতে রস বের হয়ে কোষ ও কলা-অভ্যনৎদরে জমা হয়ে পা-স্ফীত করে।

* দেহের পেলভিক অঞ্চলে (শ্রোণী অঞ্চল) ভর বৃদ্ধি পেলে বা কোনো টিউমার থাকলে তবে দু পায়ে রস-স্ফীতি হয়।

* গর্ভাবস্থায় যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে, প্রস্রাবের নমুনায় প্রোটিন অধিক হারে নির্গত হলে কিংবা প্রি-অ্যাক্লাম্পশিয়া দেখা দিলে দু পায়ে রসস্ফীতি হয়।

এক পায়ে রস স্ফীতির কারণ

* ডীপ ভেইন থ্রম্বোসিস্ (ডিভিটি) বা পায়ের থোরের অভ্যন্তরের শিরায় রক্তের চাক জমাট হওয়া

* সেলুলাইটিস বা কোষ ও কলার প্রদাহ।

* পতঙ্গ দংশন।

* নেক্রোটাইজিং ফ্যাসাইটিস্ বা ফ্যাসার পচন।

* আক্রান্ত পায়ে হাড় বা মাংসপেশীর টিউমার।

* এক পায়ে আঘাত।

* কম্পার্টমেন্ট সিনড্রোম।

* নন পিটিং ইডিমা (আঙ্গুলের চাপে যা দেবে যায় না এমন)।

দুই পায়ের রসস্ফীতিতে ডিভিটি বা ডীপ ভেইন থ্রম্বোসিস আশঙ্কার মূল্যায়ন

সনাক্তকারী লক্ষণ মূল্যায়ন :

* চিকিৎসাধীন ক্যান্সার রোগী (কমপক্ষে ৬ মাস) ১ পয়েন্ট

* প্যারালাইসিস/পায়ে দুর্বলতা/পায়ে প্লাস্টার দ্বারা অচলতা ১ পয়েন্ট

* বড় ধরনের শৈল্য চিকিৎসা/সাম্প্রতিক একমাসে ৩ দিনের অধিক শয্যাশায়ী ১ পয়েন্ট

* পায়ে ব্যথা বোধ হওয়া ১ পয়েন্ট

* সম্পূর্ণ পা স্ফীতি ১ পয়েন্ট

* পায়ের থোড়-এর মাংসপেশী স্ফীতি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ সে.মি. অধিক ১ পয়েন্ট

* আঙ্গুলের চাপে পায়ে ত্বক দেবে যাওয়া ১ পয়েন্ট

* ডিভিটির আশঙ্কাগ্রস্ত শিরার সমান্তরাল শিরার সংবহন ১ পয়েন্ট

* ডিভিটির সদৃশ ভিন্ন কোন রোগের দ্বিমত ২ পয়েন্ট

যদি স্কোর ৩ বা তার বেশি হয় তবে ডিভিটির আশঙ্কা অধিক। স্কোর ১-২-এর মধ্যে হলে ডিভিটির আশঙ্কা মৃদু।

বিমান ভ্রমণ ও ডিভিটি : ১৯৫৪ সালে বিজ্ঞানী হোম্যান প্রথম বিমান ভ্রমণকারীদের মধ্যে ডিভিটি হওয়ার প্রবণতা ও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিরূপণ করেন। যারা সাধারণত ১০ ঘণ্টার অধিক বিমান ভ্রমণ করেন তাদের ডিভিটি ঝুঁকি ৪%-৬% ভাগ। যারা দীর্ঘ যাত্রার বিমান ভ্রমণ করেন তাদের মধ্যে শতকরা ০.০১%-০.০৪% ভাগ লোকের ডিভিটি হতে পারে।

বিমান ভ্রমণে ডিভিটিজনিত রসস্ফীতি ঠেকানোর উপায় :

* চাপ প্রদানকারী দীর্ঘ মোজা ব্যবহার।

* অগ্রিম অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ একক মাত্রায় সেবন।

* পায়ের ব্যায়াম।

* অধিক পানি পান।

* উড্ডয়নকালীন ধূমপান ও অ্যালকোহল-বিরতি।

রসভারানত পা সম্পন্ন ভুক্তভোগীর প্রতি নয়টি প্রশ্ন :

* রসস্ফীতি কি উভয় পায়ে?

* আক্রান্ত ব্যক্তি কি গর্ভবতী?

* আক্রান্ত ব্যক্তি কি চলাচল সম্পন্ন?

* আক্রান্ত ব্যক্তির কি পায়ে জখম বা আঘাত আছে?

* পায়ের গোড়ালির উপরে আঙ্গুলের চাপে কি দেবে যায়?

* অতীত রোগের ইতিহাস ও ঔষধ সেবনের ইতিহাস কি?

* রসস্ফীত পায়ে ব্যথা বোধ হয় কি?

* আক্রান্ত পা-এর ত্বকের বর্ণ কি পরিবর্তিত?

* শরীর-এর অন্য কোথাও কি কোনো রসস্ফীতি আছে?

পায়ে রসভারাক্রান্ত ব্যক্তির পরীক্ষণ

মূত্রের নমুনা পরীক্ষণ

চব্বিশ ঘণ্টার মূত্র-নমুনায় অ্যালবুমিন নামক প্রোটিন যদি তিন গ্রামের অধিক হয় তবে তাকে প্রোটিনিউরিয়া বলে। প্রোটিনিউরিয়া হলে তা পায়ে রসস্ফীতির কারণ নির্দেশ করে।

ইকোকার্ডিওগ্রাম : হৃদপিন্ডের ইকোকার্ডিওগ্রামে কনজেস্টিভ কার্ডিয়াক ফেইলিওর সম্বন্ধে অবগত হওয়া।

বুকের এক্সরে

বুকের পিছন হতে সামনের দিকে নেওয়া এক্স-রে ছবিতে হৃদপিন্ডের আকার বর্ধিত হলে হার্ট ফেইলিওর প্রমাণিত হয় যা দুই পায়ে (এবং মুখে) রসস্ফীতির কারণ।

পায়ে রসভার হওয়ার চিকিৎসা

প্রকৃত কারণ চিকিৎসা দ্বারা নিরাময়

* অ্যানিমিয়া সংশোধন।

* কিডনী ফেইলিওর নিয়ন্ত্রণ।

* হার্ট ফেইলিওর নিয়ন্ত্রণ।

* লিভার ফেইলিওর নিয়ন্ত্রণ।

* প্রোটিন-এনার্জি ম্যালনিউট্রিশন সংশোধন।

* মূত্রবর্ধক ঔষধ (ডাই-ইউরেটিক) প্রদান। অ্যামলোডিপিন জাতীয় প্রেসারের ঔষধ স্থগিতকরণ। আক্রান্ত পা-কে বসার সময় টুলের বা মোড়ার উপরে রাখা।

* শোওয়ার খাটের পায়ের দিকের দুই পায়ার নীচে ইট স্থাপন করে হাল্কা উঁচু রাখা (শিয়রের দিকের চেয়ে)

* পায়ে লম্বা ও টাইট মোজা দীর্ঘদিন পরিধান যা পায়ের নিম্নাংশে প্রতিনিয়ত চাপ প্রদান করে আন্তঃকোষীয় স্থানে রক্তনালী হতে পানি সঞ্চিত হতে বাধা দেয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়