বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

তবুও কত আপন!

তবুও কত আপন!
কাদের পলাশ

আমার কন্যা কিমিয়া অসুস্থ। বেশ ক’দিন জ্বর। আমি সাধারণত পরিচিত কাছের ডাক্তারদের সাথে কথা বলে চিকিৎসা শুরু করে দেই। কিন্তু এবার আর তা না করে চলে যাই মেয়েকে নিয়ে শহীদ মিনারের সামনের একটি ক্লিনিকে। গিয়ে শুনি ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল ভাই ওখানে চেম্বার করেন। আমি বেজায় খুশি। কারণ এমনটি প্রত্যাশা ছিলো না। সবশেষ রুবেল ভাই বেলভিউ হাসপাতালে থাকাবস্থায় আমার নিকটাত্মীয়দের চিকিৎসা করতেন তিনি। আমার বাবাকেও চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করেছেন। বাবা এখন দিব্যি সুস্থ আছেন।

চেম্বারের দরজা হালকা খুলে উঁকি দিতেই রুবেল ভাই বললেন, আরে পলাশ ভাই। আসেন। মেয়েকে নিয়ে প্রবেশ করি। বলতে বলতে ওষুধ লিখলেন। আর এনএস-১ টেস্ট দিলেন। মূলত এবার আমি ফোন করে কারো পরামর্শ নেইনি। কারণ অন্তত এমন একটা টেস্ট করিয়ে নিবো বলে। মেয়ের রক্ত দেয়া হলো, রিপোর্ট আসলো, রিপোর্ট ভালো, ডেঙ্গু নেই।

কিছুক্ষণ গল্প হলো। ফাঁকে বিভিন্ন বীজের মিশ্রণে এক কেজি ওজনের একটি কৌটা দিলেন। অন্তত দশটি প্যাড ও ডজন খানেক কলম দিলেন। যখনই চেম্বারে দেখা হতো এমনটি আমাকে সবসময়ই দিতেন। আমার বাচ্চারা ছোট, মূলত তাদেরকে দেয়া এমনটি আগেই বলে রেখেছেন। তাই কিছু দিলে আমি নির্দ্বিধায় নিয়ে দেই। বললাম, আমার অফিসের কাছে চাঁদপুর রিসোর্ট। একদিন আপনার বিশেষ দাওয়াত।

-আপনি যেদিন বলবেন এবং যখন বলবেন তখনই।

আমি বললাম, ঠিক আছে। আমি সকল আয়োজন করে আপনাকে বলবো। চওড়া হাসি দিয়ে বললেন, ওকে। আপনি আয়োজন করেন। নানান ব্যস্ততায় আর আয়োজন করা হলো না। দাওয়াতও দিতে পারিনি। আমার এক ঘনিষ্ঠজনকেও বলেছি দাওয়াত দেয়ার বিষয়ে। প্রায় মাস খানেক পেরিয়ে। আয়োজন করতে পারিনি বলে কলও দেইনি। ভেবেছি ভাইকে বিশেষ দাওয়াত দিবো, আমার ফ্রি সময়টা একটি দীর্ঘ হতে হবে। আমার ফ্রি সময় হতে হতে ভাই আমার ছুটি নিয়ে নিলেন। এমন ছুটি নিলেন, আমার কলিজায় আফসোসের বাসা বেঁধে গেলেন। শনিবার দুপুরের পর থেকে হঠাৎ ভাটায় পড়া পুঁটি মাছের মতো কলিজাটা ছটফট ছটফট করছে। বারবার গলা শুকিয়ে আসছে। চোখের কোণ বারবার ভিজে উঠছে। পাঁচণ্ডসাত বছরের সম্পর্ক। খুব বেশি নিবিড় নয়। তবুও কত আপন। জানাজায় অংশ নিতে গিয়ে একপলক কোমল মুখ দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারিনি। কাউকে ধরে চিৎকার দিয়ে কাঁদতেও পারিনি। হুপিয়ে হুপিয়ে বিয়োগ ব্যথা বিসর্জন দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাই। কিন্তু পারছি না। এ ব্যথা আরো কিছুদিন বয়ে বেড়াতে হবে জানি। কিন্তু রুবেল ভাই, এমন তো কথা ছিলো না। আপানার সাথে স্মৃতির পসরা সাজানোর সময়তো আমার পাওনা ছিলো। আমার এ আফসোস আমৃত্যু তাড়া খাওয়া মাছের মতো গন্তব্য খুঁজবে। কিন্তু আর সে সুযোগ হবে না। ভাবতে দীর্ঘশ্বাস ছোট হয়ে আসা। যেন দম আটকানো কষ্ট।

এখন আর আগের মতো চাঁদপুর সদর হাসপাতালে যাওয়া হয় না। করোনাকালীন সময়ে যতোটা গিয়েছি। এখন মাঝে মাঝে আরএমও-এর রুমের পাশে গেলে আনমনে রুবেল ভাইকে খুঁজি। কিন্তু তিনি যে বদলি হয়েছেন তা মনে পড়ে স্বাভাবিক হওয়ার পর।

আমার দৈনিক শপথ পত্রিকাটির বিশেষ শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন ডাঃ রুবেল ভাই। আমি তার আন্তরিকতায় এতোটাই মুগ্ধ ছিলাম যে, একবার অফার দিয়েছি পত্রিকার কোটায় রুবেল ভাইকে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সদস্য বানাবো। কিন্তু তিনি মনে করিয়ে দিলেন তাঁর প্রকৃত বাড়ি চাঁদপুর না। মানে তিনি চাঁদপুরের ভোটার নন। আমি যেন আসমান থেকে পড়ি। হয়তো আমার মতো অনেকেই মনে করেন রুবেল ভাইয়ের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কোনো না কোনো স্থানে। অনেকে শনিবার ডাঃ রুবেল ভাই প্রয়াত হওয়ার পর জেনেছেন তিনি জন্মসূত্রে বরিশালের ছেলে। বেড়ে উঠেছেন রাজধানী ঢাকা শহরে।

কিন্তু রুবেল ভাই আপনি আপনার আচার-আচরণ এবং কর্মগুণে চাঁদপুরের মানুষ হয়ে রইলেন। আপনাকে যারা চিনে বিশ্বাস করুন সবাই খুব ভালোবাসে। কতো ভালোবাসে আপনি তা চিন্তাও করতে পারেননি। আমার মতো অনেকেই আপনার পরকালীন সুখ প্রত্যাশা করে। আপনি ভালো থাকুন, ঘুমান পরম শান্তিতে।

কাদের পলাশ : সম্পাদক, দৈনিক শপথ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়