প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
দশদিন চোরের একদিন গৃহস্থের : ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল
চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ রোগীদের খাবার চুরি করে আসছিলো ॥ হাতেনাতে আটক
কথায় আছে ‘দশদিন চোরের একদিন গৃহস্থের’। এ প্রবাদটি ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের খাবার চোরচক্রকে আটকের মধ্য দিয়ে সত্য প্রমাণিত হলো। হাসপাতালের রোগীদের জন্যে বরাদ্দকৃত খাবার চুরির সময় হাতেনাতে এক চোরকে আটক করেছে স্থানীয়রা। আটক চোরের নাম শাকিল (২৫)। তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। এই চোর হচ্ছে হাসপাতালের বাবুর্চি রিজিয়ার নাতি। আর এই চোরচক্রের মূল হোতা হিসেবে ওয়ার্ডমাস্টার মনিরের নাম উঠে আসে।
|আরো খবর
গতকাল বিকেল ৩টায় হাসপাতাল ভবনের পূর্ব অংশে ইপিআই কেন্দ্রের সামনে অ্যাম্বুলেন্স চালক রাজ্জাক, স্থানীয় বাবু ও কাউছারসহ অন্যরা খাবার পাচারকালে চোর শাকিল ও অটোবাইক চালককে হাতেনাতে আটক করে। এ সময় চাল, পিচ করা মাছ, রুটি, কলা, আলু জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছে চোর শাকিল ও অটোবাইক চালক। যদিও পরে অটোবাইক চালক পালিয়ে যায়।
জানা যায়, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবৎ বাবুর্চির কাজ করছেন রিজিয়া বেগম। সে সুবাদে তিনি ও তার নাতি শাকিলসহ একটি চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ খাবার চুরি করে আসছিলো। তারা রোগীদের ঠিক মতো খাবার না দিয়ে এসব খাবার বাইরে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। গতকাল এ চক্রটিকে হাতেনাতে আটক করা হয়।
‘খাবার চুরি’র খবর শুনে ভুক্তভোগী এক রোগী বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ভালো মানের খাবার পাচ্ছি না। খাবার চাইলে বাবুর্চি দুর্ব্যবহার করে। এভাবে খাবার চুরি হওয়া দুঃখজনক।
আটক শাকিল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব খাবার ফ্রিজে সংরক্ষণের জন্যে নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে।
এদিকে আটককারী অ্যাম্বুলেন্স চালক রাজ্জাক, বাবু ও কাউছার জানান, চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ খাবার চুরি করে আসছে। অনেকদিন পাহারা দেয়ার পর আজ (গতকাল) তাদের হাতেনাতে ধরতে সক্ষম হয়েছি। এই চোর চক্রটি হচ্ছে হাসপাতালের বাবুর্চি রিজিয়া বেগম ও তার নাতি শাকিল। ঠিকাদারও এর সাথে জড়িত। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত খাবার রোগীদের না দিয়ে চুরির মতো কাজ কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা অভিযুক্তদের যথাযথ শাস্তি দাবি করছি। একই সাথে তদন্ত করে চক্রের বাকি সদস্যদের চিহ্নিত করার দাবি জানাই।
এদিকে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে, এই চোরচক্রের মূল হোতা হচ্ছে ওয়ার্ডমাস্টার মনির। মনিরের যোগসাজশেই দীর্ঘদিন যাবৎ রোগীদের খাবার পাচার হয়ে আসছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, ওয়ার্ডমাস্টার মনিরসহ রোগীদের খাবার বণ্টনের দায়িত্ব যাদের তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে দিনের পর দিন এভাবে খাবার পাচার হয়ে আসছে! তার সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক। তাহলেই রোগীরা তাদের প্রাপ্য খাবার পাবে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আসিবুল আহসান চৌধুরী বলেন, খাবারসহ একজনকে আটক করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে অভিযুক্তদের সাসপেন্ড করা হবে এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহাবুবুর রহমান বলেন, শনিবারই আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বসে প্রথমে বাবুর্চিকে বরখাস্ত করা হবে। এর তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাসপাতালে খাবার পরিবেশনের ঠিকাদার সঞ্জিত পোদ্দার জানান, বাবুর্চি রিজিয়ার ঘটনা আজকের না, এটা বহুদিনের। খাবার চুরির সাথে অভিযুক্ত এ নারীর বিরুদ্ধে একাধিকবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। কেনো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না তা আমার বোধগম্য না। তবে নিশ্চয়ই এ চুরির সাথে বাবুর্চি একা না, একটি চক্রের যোগসাজশে এমন ঘৃণ্য কাজ হচ্ছে। মাঝখানে ঠিকাদারের বদনাম হচ্ছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হোক।
চাঁদপুর মডেল থানার এসআই শাহরিন বলেন, আটক শাকিলকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।