প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
হাজীগঞ্জ উপজেলায় হাতেগোণা সমৃদ্ধ প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ (জেএন) উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কারিগরি কলেজ। ১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটির বয়স ১০০ পূর্ণ হতে ৭ বছর বাকি। এমতাবস্থায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত একজন নারী, যার নাম খোদেজা বেগম। তিনি তার পেশাগত জীবনের ২৩ বছর এই বিদ্যালয়ে কাটিয়ে পালন করছেন বর্তমান দায়িত্ব। এসএমসি বা গভর্নিংবডি তার এ দায়িত্ব পালনে নির্ভার যে আছেন, সেটা সাধারণ পর্যবেক্ষণে অনুমিত হয়। তার সাথে চাঁদপুর কণ্ঠের নারীকণ্ঠ বিভাগের পক্ষ থেকে কথা হয়।
নারীকণ্ঠ : পুরো বলাখালে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বালিকাদের নামীয় প্রতিষ্ঠানেও যেখানে শীর্ষপদে নারী নেই, সেখানে বালকদের প্রতিষ্ঠানে এমন পদে আপনার অধিষ্ঠান--সরল অনুভূতি ও বাস্তবতায় কেমন লাগছে?
খোদেজা বেগম : বলাখালে ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ (জেএন) উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কারিগরি কলেজ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০০০ সালের পূর্ব পর্যন্ত কোনো নারী শিক্ষক ছিলো না এই প্রতিষ্ঠানে। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠানটি মাধ্যমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির নাম হয় ‘বলাখাল জেএন উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কারিগরি কলেজ’। ২০০০ সালে আমি প্রথম নারী শিক্ষক হিসেবে কারিগরি শাখায় প্রভাষক পদে যোগদান করি। এ প্রতিষ্ঠানে প্রধানের পদে কোনো নারী আসবে এটা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাইরে অনেকেই মানতে কষ্ট হয়েছিলো। বর্তমানে তিনটি শাখা নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে চলছে। তিনটি শাখার কারিকুলাম তিন ধরনের। যা একজন প্রতিষ্ঠানপ্রধানকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। তাই কিছুটা কষ্টসাধ্য হলেও চরমভাবে উপভোগ করছি।
নারীকণ্ঠ : নিজ কর্মস্থল নিয়ে আপনার আশাবাদকে কি কোনো হতাশা বা প্রতিবন্ধকতা কখনও গ্রাস করতে চায়?
খোদেজা বেগম : কর্মস্থলে আমার ব্যক্তিগত কোনো আশা নেই। আমার সকল কর্ম থাকে প্রায় ১২শ’ ছাত্রী-ছাত্রী, ২৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ৫ জন কর্মচারী নিয়ে। কোনো কাজ করতে গেলে একটু মতানৈক্য থাকবে এটা স্বাভাবিক। প্রতিষ্ঠান নিয়ে যে সমস্যাগুলো এসেছিলো তা সকলকে নিয়ে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি। তাই এ পর্যন্ত কর্মস্থলে কাজ করতে গিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা আমাকে গ্রাস করতে পারেনি।
নারীকণ্ঠ : প্রতিষ্ঠানটিকে নবোদ্যমে সাজাবার কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
খোদেজা বেগম : অবশ্যই আছে। আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর অদ্যাবধি প্রতিষ্ঠানটিকে নবোদ্যমে সাজিয়ে যাচ্ছি। ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের নিয়ে বিভিন্ন ক্লাব যেমন বিতর্ক ক্লাব, বিজ্ঞান ক্লাব, ইংলিশ স্পোকিং ক্লাব, ক্রীড়া ও স্কাউট দল গঠন করে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠতার যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত অনেক পরিবর্তন চলছে। জীর্ণশীর্ণ টিনের চালের মসজিদটি প্রায় ২৪০০ স্কয়ার ফিটের তিনতলা ফাউন্ডেশনে নূতনভাবে নির্মিত হচ্ছে। নিচতলা প্রায় শেষ হওয়ার পথে। প্রতিষ্ঠানের মূল ফটকটিকে নতুন করে এসএস পাইপ দিয়ে নান্দনিকভাবে তৈরি করা হয়, যাতে প্রতিষ্ঠানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। রাস্তার পাশের বাউন্ডারির উপরে গ্রীল দিয়ে ঊর্ধ্বমুখি সম্প্রসারণ ও তার মাঝখানে আলোকসজ্জার কাজ সহসাই শুরু হতে যাচ্ছে।
নারীকণ্ঠ : আপনার বাকি কর্মকালে যে দায়িত্বেই থাকুন না কেনো, প্রতিষ্ঠানটির শতবর্ষ উদযাপনের কোনো পরিকল্পনা, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোনো সংগঠন গড়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন কি?
খোদেজা বেগম : শতবর্ষ উদযাপন কথাটি ভাবলেই কিছুটা রোমাঞ্চিত হই। যদি বেঁচে থাকি তাহলে আর মাত্র ৭ বছর বাকি শতবর্ষ উদযাপনের। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সাথে শতবর্ষ নিয়ে আলোচনা করি, তারা উৎসাহবোধ করেছেন এবং কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। আমি সেগুলো নোট করে রেখেছি। ১৯৬৮ সালে পাস করা শিক্ষার্থীদের সাথেও এ বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ হয়েছে। তাদের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহে রাখছি। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে অবশ্যই সংগঠন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ছাড়া শতবর্ষ উদযাপন কখনোই সম্ভব নয়।
নারীকণ্ঠ : উপরোক্ত প্রশ্নের বাইরে কোনো কিছু বলার আছে কি?
খোদেজা বেগম : আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব¡ সততা, ন্যায় ও নিষ্ঠার সাথে যেনো পালন করতে পারি সেজন্যে সকলের কাছে দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি।