রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

ইনাম আল হকের পাখির কথা
গাজী মুনছুর আজিজ

বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত এ বছর ‘মেহের কবীর বিজ্ঞানসাহিত্য পুরস্কার’ পেয়েছেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও পাখি বিশারদ ইনাম আল হক। ২৪ ডিসেম্বর বাংলা একাডেমির সাধারণ পরিষদের ৪৪তম বার্ষিক সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার দেয়া হয়।

পাখি বিষয়ে জানতে ও গবেষণা করতে ইনাম আল হক তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার কাদাচর, হাওর অঞ্চলের বিল, বিভিন্ন বনাঞ্চলসহ দেশের এক পান্ত থেকে অন্যপ্রান্তর ঘুরে বেড়িয়েছেন। আর এ পাখি দেখতে গিয়ে কখনও জলদস্যু, কখনও বনদস্যু, কখনও পুলিশের বাধার মুখে পড়েছেন। আবার কখনও পড়েছেন শিকারিদের মুখে। এরকম নানা অভিজ্ঞতার কথা তিনি বিভিন্ন সময় পত্রিকায় লিখেছেন। এছাড়া পাখি বিষয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তিনি দেশেরে মানুষকে জানিয়েছেন অতি সরল ভাষায়। এসবের পাশাপাশি পাখি বিষয়ে নিয়মিত দেশ-বিদেশের বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা বা জার্নালে লিখছেন নিয়মিত। এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে পাখিবিষয়ক তার একাধিক বই।

পাখিদেরও আছে নাকি মন : পাখিদেরও আছে নাকি মন? থাকাটাই তো স্বাভাবিক। কারণ, পাখিরাও তো প্রাণী। আর প্রত্যেক প্রাণীরই রয়েছে মনের অস্তিত্ব। কিন্তু আমরা ক’জনইবা পাখিদের সেই মনের অস্তিত্বকে বুঝতে পারি। পাখিবিদ ইনাম আল হক তেমনই একজন মানুষ, যিনি পাখিদের মনের কথা বুঝতে চেষ্টা করেন। আর তাই তিনি তার এ বইয়ের নাম দিয়েছেন ‘পাখিদেরও আছে নাকি মন।’ বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের উদ্যোগে প্রকাশিত বইটির প্রকাশক মাজেদা হক।

বইটি মূলত সাহিত্যে পাখির নানা প্রসঙ্গ ও ভ্রমণকাহিনিভিত্তিক। পাখি দেখতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতার কথাই তিনি বইটিতে তুলে ধরেছেন বৈঠকি ঢঙের লেখায়।

বইটিতে তিনটি অধ্যায় রয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে আছে পাখির প্রাণ, দ্বিতীয় অধ্যায়ে পাখির মন ও তৃতীয় অধ্যায়ে রয়েছে পাখির অস্তিত্ব। কঠিন কোনো কথা ইনাম আল হক বইটিতে লেখেননি। কিংবা পাখিবিষয়ক বিশেষ কোনো জ্ঞানও তিনি দেয়ার চেষ্টা করেননি পাঠককে। সাধারণ ভাষায় ঠিক তিনি যা দেখেছেন, যা শুনেছেন তাই লিখেছেন এই বইয়ে।

বইয়ের মুখবন্ধে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান লিখেছেন ‘ইনাম আল হকের অনেক পরিচয় আছে। তিনি একজন বিশিষ্ট আলোকচিত্রী, পর্বতারোহীদের সংগঠক, পক্ষীবিশারদ। তার লেখায় ও আলোকচিত্রে সুশোভিত এই বইটিতে আছে পাখিদের সম্পর্কে বিচিত্র কথা।’

বইয়ের ভূমিকায় ‘গৌরচন্দ্রিকা’ শিরোনামে ইনাম আল হক লিখেছেন ‘বিদায়ী পাখিদের নিয়ে মনে মেলা কথা আছে। পাখি হারিয়ে গেলে আমি বিলাপ করিনে, পাখিটি যে এ দেশে ছিল তা লিখি। ছাপাখানায় এর পুনর্জন্ম হয়, টিকে থাকে কিছু দিন কাগজের কন্দরে, মানুষের মনে।’

পাখির প্রাণ অংশে বইয়ের প্রথম লেখার শিরোনাম প্রসন্ন সাঁঝের পাখি ও ভয়াল রাতের নদী। শীতের সময় জানুয়ারিতে উপকূলে পাখিশুমারি করতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়া, পাখি শিকারিদের কাছ থেকে পাখি উদ্ধারকরাসহ নানা বর্ণনা রয়েছে এ লেখায়। এ অধ্যায়ে চকাচকির চোখে বাংলাদেশ শিরোনামের লেখাটি পড়ে পাঠক জানতে পারবেন পাখির অন্য এক ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কথা। পাখির মন অধ্যায়ের লেখাগুলোতে অতি সহজ ভাষায় লেখক তুলে ধরেছেন পাখিদের জীবনযাপন সম্পর্কে। এ অধ্যায়ের ‘পাখির পোশাকের মনসুন কালেকশন’ লেখাটি পাঠককে জানিয়ে দেবে পাখিদের বিচিত্ররকম সাজসজ্জার কথা। এ ছাড়া এই অধ্যায়ের ‘জীবনানন্দেরও ছিল নাকি মন, পাখির মতন’ শিরোনামের লেখাটি পাঠকদের মনে করিয়ে দিবে জীবনানন্দ দাশের কবিতায় পাখির উপস্থিতির কথা। জীবনানন্দ তার কবিতায় বাংলাদেশের নানা প্রজাতির পাখির বর্ণনা দিয়েছেন নানাভাবে, সেইসব পাখির কথাই রয়েছে এই লেখায়।

পাখির অস্তিত্ব অধ্যায়ে বাংলাদেশের হারিয়ে হাওয়া বা বিপন্ন পাখির কথা উঠে এসেছে। পরিবেশ নষ্টের কারণে বা শিকারিদের কারণে অনেক পাখি হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশ থেকে। তেমন পাখির বর্ণনাই রয়েছে এ অধ্যায়ের লেখাগুলোয়। এছাড়া প্রতিটি অধ্যায়ে রয়েছে পাখি নিয়ে বিখ্যাতদের কথা। অন্যদিকে সাহিত্যের একটি বড় অংশ দখল করে আছে নানা পাখির বর্ণনা। ইনাম আল হক সাহিত্যের সেই অংশটুকু তার লেখায় তুলে এনেছেন খুবই যতেœর সঙ্গে।

অভিনেতা আফজাল হোসেন ও তানিয়া আহমেদ পাখি নিয়ে একটি গান রচনা করেছেন। গানটি গেয়েছেন এসআই টুটুল। তিনি বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের নামে গানটি উৎসর্গ করেছেন। বইয়ের শিরোনামটি এ গান থেকেই নেয়া হয়েছে। বইটির শুরুতে গানটিও দেয়া আছে।

১৫৬ পৃষ্ঠার এ বইটি পুরোটাই রঙিন। প্রতিটি লেখার সঙ্গেই রয়েছে সংশ্লিষ্ট পাখি ও বর্ণনার ছবি। তিনটি অধ্যায়ে বিভিন্ন শিরোনামে মোট ২০টি লেখা রয়েছে বইটিতে। পাখির মতোই সুন্দর প্রতিটি শিরোনামও। বাংলাদেশের পাখিচর্চার পথিকিৃৎ কাজী জাকের হোসেন ও পক্ষী সংখ্যা সম্পাদক মীজানূর রহমানকে বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে। শিল্পী আনোয়ার হোসেনের ছবি অবলম্বনে প্রচ্ছদ করা এ বইটির দাম ৪৫০ টাকা।

পাখিদের সুখদুখের কথা : ‘পাখিদের সুখদুখের কথা’ নামের এ বই লিখেছেন পাখিবিশারদ ইনাম আল হক। প্রচ্ছদ ও অলংকরণও করেছেন তিনি। প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। ৪২টি পাখির বর্ণনা পাওয়া যাবে এতে। বর্ণনাগুলো সহজ ভাষায় লেখা। প্রতিটি পাখির বর্ণনার সঙ্গে রঙিন একাধিক ছবি আছে। পুরুষ পাখি ও স্ত্রী পাখির ছবিও আলাদা দেয়া আছে।

ফেদারর্ড স্প্যান্ডার্স বার্ডস অব বাংলাদেশ : ‘ফেদারর্ড স্প্যান্ডার্স বার্ডস অব বাংলাদেশ’ বইটি ইংরেজিতে লেখা। এ বইয়ের লেখকও ইনাম আল হক। চমৎকার এ বইটিতেও রয়েছে পাখির রঙিন ছবিসহ বর্ণিল বর্ণনা।

পাখির ফিল্ডগাইড : বাংলাদেশের পাখির তথ্য নিয়ে প্রকাশিত বই ‘পাখির ফিল্ডগাইড’। বইটি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব। এটি বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম পাখির ফিল্ডগাইড। লিখেছেন ইনাম আল হক। সহলেখক হিসেবে রয়েছেন তারেক অণু বইটিতে বাংলাদেশে সচরাচর দেখা মেলে এমন ৫০৬ প্রজাতির পাখির বাংলা নাম, ইংরেজি নাম ও বৈজ্ঞানিক দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণীকোষ (পাখি) : এশিয়াটিক সোসাইটি ২০০৯ সালে প্রকাশ করে ‘বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণীকোষ’ নামের কোষ। এ কোষগুলোর অন্যতম সম্পাদক ইনাম আল হক। এছাড়া এ কোষের ২৬তম খ-টি পাখিবিষয়ক। এ খ-েরও অন্যতম সম্পাদক ইনাম আল হক। বইটির প্রচ্ছদও করেছেন তিনি।

বেঙ্গমা-বেঙ্গমীর মতো কত পাখি : ‘বেঙ্গমা-বেঙ্গমীর মতো কত পাখি’ নামের এ বইয়ের লেখকও ইনাম আল হক। বইটি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব। মজার এ বইয়ে আছে পাখিবিষয়ক রূপকথা, উপখ্যান ও লোককথা। বাংলাদেশের পাখি নিয়েও আছে মজার অনেক গল্প। সেই সঙ্গে বইয়ের প্রতিটি পাতায় আছে পাখির রঙিন চিত্র ও অলংকরণ। বইয়ের আলোকচিত্রগুলো ইনাম আল হকের তোলা।

ডাক টিকিটে পাখির ছবি : শকুন নিয়ে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ বিশেষ ডাকটিকিট, স্যুভেনিরশিট ও খাম প্রকাশ করেছে। পাখিবিশারদ ইনাম আল হক নিজের তোলা আলোকচিত্র দিয়ে এসব ডাকটিকিট, স্যুভেনিরশিট ও খামের নকশা করেছেন। এছাড়া ‘বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখি’; ‘বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের সুদর্শন পাখি’; ‘বাংলাদেশের পাখির বাসা’; ‘বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী’; ‘ইন্দোনেশিয়া ২০১২ বিশ্ব ডাকটিকিট চ্যাম্পিয়নশিপ ও প্রদর্শনী’ শীর্ষক পাখিবিষয়ক বিশেষ ডাকটিকিট, স্যুভেনিরশিট ও খাম প্রকাশ করেছে ডাক বিভাগ। এসবও পাখিবিশারদ ইনাম আল হক নিজের তোলা আলোকচিত্র দিয়ে নকশা করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়