রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

চিন্তার সংকীর্ণতা দূর করতে হবে
জাহিদুল ইসলাম

চিন্তাশক্তি মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ। চিন্তার মাধ্যমে মানুষের অস্তিত্বের প্রকাশ ঘটে। দার্শনিক দেকার্ত তাই বলেছিলেন, ‘আই থিংক, দেয়ারফোর আই অ্যাম’- আমি চিন্তা করতে পারি, সেজন্যই আমি আছি। মহৎ চিন্তাশক্তি থেকেই সৃষ্টি হয় অন্যায়কে অন্যায় বলা এবং অন্যায়ের সঙ্গে আপস না করার বৈপ্লবিক ক্ষমতা। ইতিহাসে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের বিপ্লবী চিন্তাবিদ ও দার্শনিকের আগমন ঘটেছে।

নবজাগরণের যুগের অনেক দার্শনিক উপনিবেশের পক্ষে যুক্তি দিয়ে উপনিবেশবাদকে মহিমান্বিত করছেন। তাদের এ যুক্তিকে খ-ন করে বিখ্যাত দার্শনিক এইমে সেজায়ার ‘ডিসকোর্স অন কলোনিয়ালিজম’ নামে একটি বই লেখেন।

এ বইয়ে তিনি ঔপনিবেশিকতার আসল রূপ উন্মোচন করেন। সেজায়ার তার বইয়ে দেখিয়েছেন কিভাবে নবজাগরণের কথা বলে একেক দেশে একেকরকম আচরণ করা হয়। ইউরোপের ক্ষেত্রে স্বাধীনতার কথা বলা হলেও আফ্রিকা ও এশিয়ার জন্য ছিল তা উপেক্ষিত। সেজায়ারের মতে, হিটলার যে আচরণ করেছিলেন ইহুদিদের সঙ্গে, ইউরোপিয়ানরাও একই আচরণ করেছিল আফ্রিকানদের সঙ্গে।

এইমে সেজায়ারের সঙ্গে ২০০৫ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি দেখা করার অনুরোধ চেয়েছিলেন। কিন্তু সেজায়ার সারকোজির সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। কারণ সেজায়ার মনে করতেন একটি ঔপনিবেশবাদী রাষ্ট্র হিসেবে ফ্রান্স সেজায়ারের জন্মভূমি মার্টিনিক (পূর্ব ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত) দখল করেছে, সুতরাং এরকম একটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন নেই। সেজায়ার সুস্থ, স্বাভাবিক আদর্শবোধ ও বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে চিন্তা ও কাজ করেছেন। তার চিন্তা কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার ও আত্মপরিচয় সম্পর্কে সচেতন করেছিল।

একজন মানুষকে শারীরিকভাবে বন্দি করা গেলেও তার চিন্তাকে বন্দি করা যায় না। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ আন্তনিও গ্রামসি। তিনি ছিলেন বিশ শতকের অন্যতম একজন মার্কসীয় চিন্তাবিদ। গ্রামসি ১৯২৪ সালে ইতালীয় কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯২৬ সালে তাকে বন্দি করা হয় এবং ১৯২৮ সালে মুসোলিনির ফ্যাসিস্ট সরকার তাকে ২০ বছরের সাজা দেয়।

সাজা দেয়ার সময় তাকে বলা হয়েছিল, তার চিন্তাভাবনাকে ২০ বছর দমিয়ে রাখার জন্যই তাকে বন্দি করে রাখা হচ্ছে। কিন্তু গ্রামসি কারাগারে বসে ঠিকই তিরিশটা খাতা আর হাজার তিনেক পৃষ্ঠার খোলা কাগজে নিজের চিন্তা লিপিবদ্ধ করেন। সেই লেখাগুলো গোপনে বাইরে পাঠিয়ে দেন। ১৯৫০ সালে তা ‘প্রিজন নোটবুকস’ নামে প্রকাশিত হয়ে।

তার এ লেখাগুলোর কারণে তিনি হয়ে ওঠেন গুরুত্বপূর্ণ চিন্তক ও তাত্ত্বিকদের একজন। গ্রামসি ১১ বছর কারাগারে থেকে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তার ক্ষেত্রে ড. আলি শারিয়াতির একটি বিখ্যাত উক্তি যথার্থ, ‘একজন মানুষের মৃত্যু একটি জাতির অস্তিত্বকে নিশ্চিত করে।’ গ্রামসি এটা প্রমাণ করেছিলেন তার কাজ ও চিন্তার মাধ্যমে।

বর্তমান বিশ্বে এরকম নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ এবং আন্তরিকতার সঙ্গে চিন্তা ও কাজ করেন এমন রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবী কোন দেশে ক’জন আছেন? শক্তিশালী রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি, বাণিজ্যনীতি ও তাদের গণমাধ্যমের প্রচারনীতি বরাবরই তাদের অনুকূলে এবং দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর প্রতিকূলে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রব্যবস্থা ও বিশ্বব্যবস্থাকে উন্নত করা গেলে এতদিনে সব রাষ্ট্রের জনগণ নিরাপদ ও সম্মানজনক জীবনের অধিকারী হতো।

এজন্য প্রয়োজন সুন্দর মানসিকতা, সুস্থ ও বস্তুনিষ্ঠ চিন্তাভাবনা ও কর্ম, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রব্যবস্থা ও বিশ্বব্যবস্থাকে উন্নত করা যায়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়