প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
কৈশোরের স্বাস্থ্য সচেতনতা
সব বয়সের জন্যে চাই স্বাস্থ্য সচেতনতা। শিশু ও বৃদ্ধদের যেমন খাবার ও শরীরের যত্ন জরুরি, ঠিক তেমনি কিশোরদের জন্যেও চাই স্বাস্থ্য সচেতনতা। শুধু সুস্বাদু খাবার খেলেই চলবে না, কিশোর-কিশোরীদের জানতে হবে কোন্ খাবারে কোন্ ধরনের পুষ্টি কতটুকু, কোন্ খাবার কতোটা জরুরি।
শৈশব, কৈশোর, প্রাপ্তবয়স্ক, বৃদ্ধ অবস্থাতে একেক বয়সে খাবারের চাহিদা থাকে একেক রকম। কিশোর বয়সে কিশোর-কিশোরীরা যদি প্রয়োজন বুঝে খাবার খেতে পারে, তাহলে তাদের পুষ্টি, বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশে সহায়ক ভূমিকা হবে। রোগ-জীবাণু থেকেও তারা দূরে থাকতে পারবে। নিজেকে সুস্থ-সবল হিসেবে গড়তে পারবে।
গরু, খাসি, মুরগির মাংসে যে আমিষ থাকে, তাকে বলে প্রাণিজ আমিষ। আর শস্য জাতীয় উৎস থেকে যে আমিষ পাওয়া যায়, তাকে বলে উদ্ভিদজ আমিষ বা প্রোটিন। দুই ধরনের আমিষই আমাদের দেহের জন্য ভীষণ উপকারী।
কিশোর-কিশোরীরা কিছু স্বাস্থ্য সচেতনতা অবলম্বন করলে, পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খেলে, রোগ-জীবাণু থেকে দূরে থাকা সম্ভব। কিশোর স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য কিছু চর্চা গড়ে তোলা দরকার। যেমন-
১. মাছ, মাংস, শাক সবজি ভীষণ জরুরি : অনেকেই গরুর মাংস পছন্দ করে, আবার অনেকে খাসির মাংস খেতে চায়না। দুই ধরনের মাংসই খাওয়া উচিত। বাড়ন্ত বয়সে পুষ্টিকর খাবার দরকার হয় খুব বেশি। দুই ধরনের মাংসতেই রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষ, ক্যালরি, খনিজলবণ ও স্নেহ পদার্থ।
অনেকেই আবার শুধু মাংস খেতে পছন্দ করে, শাক-সবজি পছন্দ করেনা। শাক-সবজিও খেতে হবে। শুধুমাত্র মাংস কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরি করবে। খাবার হজমে সমস্যা হবে। মাসের পর মাস মাংস ফ্রিজে সংরক্ষণ না করে, যতো তাড়াতাড়ি টাটকা অবস্থাতে খেয়ে ফেলা যায়, ততোই ভালো। টাটকা খাওয়াটা শুধু মাংসের জন্য নয়, সব খাবারের জন্য উপযোগী।
মাংসের পাশাপাশি মাছ, বিশেষত ছোট মাছ, সব ধরনের শাক সবজিও খেতে হবে।
২. চর্বিযুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে : যেসব কিশোর-কিশোরী বয়স অনুযায়ী অধিক ওজন সম্পন্ন তাদের অতিরিক্ত তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবার অতিমাত্রায় না খাওয়াই ভালো।
কিশোর বয়সে সব ধরনের খাবার দরকার। কিন্তু তারপরেও চিন্তা ভাবনা করতে হবে। যাদের বাবা-মার উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস রয়েছে তারা মাত্রাতিরিক্ত চর্বিযুক্ত মাংস, অতিমাত্রায় ফাস্টফুড, আইসক্রিম, মিষ্টি খাবারের পরিমাণ কিশোর অবস্থা থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
মাংস খাবার সঙ্গেসঙ্গেই দুধ বা আইসক্রিম খাওয়া অনুচিত। দুধ মানে উচ্চমাত্রার প্রোটিন। আর দুধের থেকে মাংসতে প্রোটিন আরও বেশি। দুই ধরনের প্রোটিন একসঙ্গে হলে অনেকের হজমের সমস্যা হয়। তাই মাংস খাবার পর কিছু সময় বাদ দিয়ে দুধ জাতীয় খাবার খাওয়া ভালো।
৩. কলিজা নিয়মিত খাওয়া উচিত : কলিজাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রণ আছে। আয়রণ হলো রক্ত তৈরির প্রধান উৎস। তাই শুধু কুরবানির ঈদে নয়, সারাবছর কলিজা খাওয়া উচিত। কিশোর-কিশোরীদের দেহের অভ্যন্তরীণ গঠনের জন্য আয়রণ যথাযথ পরিমাণে দরকার।
যেসব পরিবারের মানুষজনের মাঝে রক্ত শূণ্যতার ইতিহাস থাকে, তাদেরকে কলিজা, ডালিম, কচুরশাক, কচুরলতি, কাঁচাকলা নিয়মিত খাওয়া উচিত। যারা নিয়মিত খেলাধুলা, নাচ, কারাতে, জুডো খেলে তাদের নিয়মিত মাংস, কলিজা, সব ধরনের শাক সবজি খাওয়া দরকার।
৪. নিয়মিত পানি পান করতে হবে : প্রতিদিন এক থেকে দেড় লিটার পানি অবশ্যই পান করতে হবে।
৫. মগজ, ভুড়ি, পায়া ভীষণ ক্যালরি সম্পন্ন খাবার : অনেকেই এই খাবার পছন্দ করে না। কিন্তু এসব খাবার ভীষণ পুষ্টিকর। শিশু-কিশোরদের জন্য দরকারি। ‘পায়া’ খাবারটি তৈরি হয় গরু-ছাগলের পা দিয়ে। পায়া বা নিহারীতে ক্যালসিয়াম, খনিজ লবণ থাকে। কিশোর বয়সে দাঁত, হাঁড়, চুল, নখ, ত্বক ভালো রাখার জন্য এই খাবার যথেষ্ট উপকারী।
৬. পারিবারিক কাজ, নিয়মিত দাঁত ব্রাশ ভীষণ জরুরি : করোনা ভাইরাসের জন্য সব বাসাতেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে যেয়ে কাজের পরিমাণ বেড়ে গেছে। পিতামাতাকে পারিবারিক কাজে সহযোগিতা করার অভ্যাস কিশোর বয়স থেকেই হওয়া উচিত। পারিবারিক কাজগুলোর মাধ্যমে ব্যায়াম হয়।
হাড়ের সঠিক বর্ধনের জন্য ব্যায়াম, খেলাধুলা ভীষণ জরুরি। আর সেই সঙ্গে চাই নিয়মিত দাঁতব্রাশ। মাংস, মিষ্টি খাবার, কোমল পানীয় পান করার পর নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা উচিত। সামান্য কিছু সতর্কতা কিশোর-কিশোরীদের করবে আরও বেশি সুস্থ-সবল।
যাদের ঠাণ্ডাজনিত ওষুধ নিয়মিত খেতে হয়, থাইরয়েড-এর জন্য ওষুধ লাগে, তাদের অভিভাবকেরা সঠিক পরিমাণে ওষুধ কিনে রাখবেন। ফার্স্টএইড বক্স বাসাতে হাতের কাছে রাখবেন।
৭. বাসার বাইরে নিয়মিত ফেস মাস্ক পরতে হবে। করোনা ভাইরাসের স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৮. কিশোর বয়স থেকেই ধর্মকর্ম ভীষণ জরুরি। ধর্মকর্ম কিশোর-কিশোরীদের মন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।