প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
হৃৎপিণ্ড আমাদের দেহের ভীষণ জরুরি একটি অঙ্গ। আমাদের সারা শরীরে রক্ত সরবরাহ করে হৃৎপিণ্ড। আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি, তখনো কাজ করতে থাকে। এক সেকেন্ডের জন্য তার কাজ বন্ধ হয় না। মায়ের পেটে থাকার সময় থেকেই আমাদের হৃৎপিণ্ড তৈরি হওয়া শুরু হয়। বাঁ পাশের বগলের গোড়া থেকে তিন বা চার ইঞ্চি দূরে আমাদের হৃৎপিণ্ডের অবস্থান। হৃৎপিণ্ডের কাজ অনেকটা পানির পাম্পের মতো। পানির পাম্প বিশাল একটা দালানের নিচে থেকে সবচেয়ে ওপরের অংশে পানি সরবরাহ করে। আমাদের দেহে হৃৎপিণ্ড নামের জরুরি অঙ্গটি ঠিক সেই কাজই করে। পায়ের আঙুল থেকে মাথা পর্যন্ত রক্ত পৌঁছে দেয়।
পানির পাইপলাইনে ময়লা জমলে পানি সঠিকভাবে চলাচল করতে পারে না। ঠিক তেমনি আমাদের শরীরের শিরা-উপশিরাতে ময়লা জমলে রক্ত সঠিকভাবে চলতে পারে না।
রক্তের ময়লার নাম অ্যাথেরোলোস্কেরোসিস। এই অ্যাথেরোস্কেলোরোসিস (রক্তনালিতে জমে থাকা চর্বি) তৈরি হয় দেহের তুলনায় অধিক পরিমাণে চর্বিজাতীয় খাবার, মাদকদ্রব্য, ধূমপান থেকে। বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে হৃৎপিণ্ডের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়। তখন হৃৎপিণ্ড সারা দেহে সঠিকভাবে রক্ত সরবরাহ করতে পারে না। পরিণামে তৈরি হয় হৃৎপিণ্ডের নানাবিধ অসুখ, যা কখনোই কাম্য নয়।
হৃৎপিণ্ডের অসুখের জন্য দায়ী বিষয়গুলো হলো
১. অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও অক্লান্ত পরিশ্রম।
২. ভয়ানক দুশ্চিন্তা, হতাশা।
৩. বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বেশি থাকা।
৪. দীর্ঘ বছর সঠিকভাবে ঘুমের অভাব।
৫. কোনো ওষুধের দীর্ঘ বছরের প্রতিক্রিয়া।
৬. অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ।
৭. কিডনির অকার্যকারিতা।
৮. মাদকদ্রব্য সেবন ও অতিরিক্ত ধূমপান।
সিগারেটের নিকোটিন
রক্তনালির সংকোচন করে। ফলে হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ কমে যায়।
৯. পারিবারিক ইতিহাস, অর্থাৎ রক্তের আত্মীয়স্বজনের হৃদ্রোগ থাকলে আপনার হৃদ্রোগ হতে পারে।
যদি আপনি সঠিকভাবে নিজের যত্ন না নেন।
১০. কোনো জটিল রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
১১. হৃৎপিণ্ডের অপারেশন বা কোনো অসুখের পর চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে না চলা।
হৃৎপিণ্ড ভালো রাখার জন্য আমাদের করণীয়-
১. বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
২. অতিরিক্ত মিষ্টি ও চর্বিজাতীয় খাবার, মাদকদ্রব্য, ধূমপান পরিহার করতে হবে।
৩. ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৪. জীবন মানেই একটার পর একটা যুদ্ধ। মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত নিজেকে খুশি রাখা উচিত।
৫. ধর্ম পালন, মেডিটেশন মানসিক প্রশান্তি দেয়।
হৃৎপিণ্ড ভালো রাখার জন্য মানসিক প্রশান্তি ভীষণ জরুরি।
৬. পারিবারিক ইতিহাসে হৃৎপিণ্ডের অসুখ থাকলে আগে থেকেই সচেতন হোন।
৭. হৃৎপিণ্ডের অসুখ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় থাকাটা ভীষণ জরুরি।
৮. প্রতিবছর পুরো দেহের চেকআপ করান। আমাদের দেহ বিশাল এক কারখানা। একটা মেশিন দুর্বল হলে আশপাশের মেশিনে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই সচেতন হোন।
৯. অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খাবেন। নিয়মিত দুই লিটার পানি খাওয়া জরুরি। অতিরিক্ত তেল, মসলা, চর্বিজাতীয় খাবার বাদ দিলে ভালো।
১০. সুযোগ হলেই হাঁটবেন। খোলা আকাশের নিচে হাঁটতে পারলে খুব ভালো হয়।
সুযোগ না থাকলে ঘরের কাজগুলো নিয়মিত করার চেষ্টা করবেন।
১১. সঠিক সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন।
১২. সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা, হৃৎপিণ্ডের জন্য ভালো। তবে হৃদ্রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করবেন।
১৩. হতাশা দূর করতে নিজেকে সৃষ্টিশীলতা ও মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত রাখবেন। ভালো কাজ আমাদের দেয় আত্মতৃপ্তি। মন ভালো থাকলে হৃৎপিণ্ড ভালো থাকবে।
আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি, তখনো আমাদের হৃৎস্পন্দন সচল থাকে। হৃৎপিণ্ডের কম্পন থেমে গেলে আমাদের জীবনটাও থেমে যাবে।
আমাদের সবার উচিত হৃৎপিণ্ড ভালো রাখার উপায়গুলো মেনে চলা এবং অন্যদের সচেতন করা।