প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
সদ্য প্রয়াত চিকিৎসক ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেলের প্রয়াণে সহকর্মী সহযোদ্ধা চিকিৎসকদের শোকবাণী
* বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে চাঁদপুরের অন্যতম সম্মুখযোদ্ধা ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল। তিনি ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের সাবেক আবাসিক মেডিকেল অফিসার এবং বর্তমানে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজে ফরেনসিক মেডিসিনের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার মৃত্যুতে চাঁদপুরের স্বাস্থ্য-সেবা খাতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তার মৃত্যুতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী গভীরভাবে শোকাহত।
-ডাঃ মোহাম্মদ সাহাদাৎ হোসেন সিভিল সার্জন, চাঁদপুর।
* ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল একজন দায়িত্বপরায়ণ চিকিৎসক ছিলেন। তিনি আন্তরিকতার সাথে যে কোনো দায়িত্ব পালন করতেন। কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে তিনি তার সেবার মাধ্যমে চাঁদপুরবাসীকে ঋণী করে গিয়েছেন। তার মতো নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসককে হারিয়ে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
-ডাঃ এ. কে. এম. মাহাবুবুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, চাঁদপুর।
* আমি চাঁদপুর মেডিকেলে যোগদানের পর ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা রুবেলের সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর তিনি চাঁদপুর মেডিকেল কলেজে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে লেকচারার পদে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেন। সে সময় তিনি ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আগ্রহ প্রকাশের পর তাঁর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়। এ সময় আমি তাকে দায়িত্ব পালনে নিবেদিত হিসেবে দেখিছি। তিনি খুব বিনয়ী ছিলেন। আমি যতোটুকু জানি, ছাত্রজীবনে তিনি বিভিন্ন সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি খুব সদালাপী ও বিনয়ী মানুষ ছিলেন। গত ১০/১৫ দিন আগে আমার সাথে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতির আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমি তার পদোন্নতির বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণে আশ্বস্ত করি। কিন্তু তিনি আকস্মিক মৃত্যুর কবলে ঢলে পড়েন। তার শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। তিনি খুব অল্প বয়সে ইন্তেকাল করেছেন। তার মৃত্যুতে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা গভীরভাবে শোকাহত। তার স্মৃতি রক্ষার্থে আমরা চেষ্টা করবো।
-অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হারুন অর রশিদ অধ্যক্ষ, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ।
* ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা রুবেল ছিলেন আমার খুব কাছের, খুব আপনজন বড়ভাই। মেডিকেল ছাত্রজীবন থেকেই আমরা একে-অপরের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত ছিলাম। আমরা ভিন্ন ভিন্ন মেডিকেল কলেজের হলেও দুজন ছিলাম রক্তের সূত্রে গাঁথা, রক্তের সূত্রে আপনজন- এই অর্থে যে, আমরা দুজনেই ছিলাম আর্তমানবতার সেবায় রক্ত নিয়ে কাজ করা সন্ধানীর কর্মী। রুবেল ভাই ছিলেন সন্ধানী বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সভাপতি আর আমি ছিলাম সন্ধানী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সভাপতি। ফলে সাংগঠনিকভাবেও আমরা ছিলাম পরষ্পর সম্পৃক্ত। যতোবারই বরিশাল মেডিকেল কলেজে গিয়েছি তিনিই ছিলেন আমাদের হোস্ট। আমি যেহেতু চাঁদপুরেরই একজন, রুবেল ভাই ইন্টার্নী শেষ করে চাঁদপুরে আসার পর আমাদের ঘনিষ্ঠতা ও যোগাযোগ আরো সহজতর হয়। আমরা সরকারি চাকুরিতে যোগদানের এক পর্যায়ে রুবেল ভাই চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাপাতালের আরএমও হলেন, আর আমি হলাম চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক। সর্বশেষ রুবেল ভাই আমার সহকর্মী হিসেবে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করলেন মাত্র কয়েকমাস আগে। আমরা বেশিদিন তাকে পেলাম না, তিনি আমাদের ছেড়ে না-ফেরার দেশে চলে গেলেন। যা কিছুতেই মানতে পারছি না। আল্লাহ তাঁকে পরপারে শান্তিতে রাখুন, জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারকে এই শোক বহন করার শক্তি দান করুন- এই দোয়া করি।
-ডাঃ মোঃ হারুন-অর-রশিদ সহযোগী অধ্যাপক (সার্জারী), চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ এবং সাধারণ সম্পাদক, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতি।
* ২০০৫-২০০৬ সালে সম্ভবত ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল এবং ডাঃ সাজেদা বেগম পলিন (বর্তমানে নড়াইলের সিভিল সার্জন) আমাদের সেন্ট্রাল হসপিটালে যোগ দেয়। ২০০৮ সালে ডাঃ দীপু মনির নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে তারা দুজন প্রচুর কাজ করে। ২০০৯ সালে তাদের বিসিএস হয়। তারা পোস্টিং হয়ে বিভিন্ন জায়গায় যোগ দেয়। পরে আবার চাঁদপুরে যোগ দেয়। আমার ক্লিনিকে রোগীদের সেবা দেয়ার জন্যে বিভিন্ন সময় ডাঃ রুবেলকে বলতাম। অনেকে বলতো ‘ডাঃ রুবেল আমার সন্তান’। সে সার্জারি ও মেডিসিনে খুব অভিজ্ঞ ছিলো। ৭/৮ বছর আগে তার যখন প্রথম হার্টের সমস্যা দেখা দেয় তখন সে আমার ক্লিনিকে ছিলো। পরে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই।
ডাঃ রুবেলের সাথে আমার কত স্মৃতি। আমি তাকে ভুলবো কীভাবে? সে আমার পরিবারের সদস্যের মতো ছিলো। রুবেলের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
একটি কথা অবশ্যই বলতে হয়, তা হলো- করোনা মহামারির সময় ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল প্রচুর কাজ করেছে। রোগীদের সেবা দিতে তাকে রাত-বিরাতে আমি কত ফোন দিয়েছি, সে হিসাব নেই। অনেক রোগীকে রুবেল নিজের পকেটের টাকা দিতো ওষুধ খাওয়ার। তাকে করোনাযোদ্ধাই বলা যায়। সে নিবেদিতভাবে কাজ করতো।
-ডাঃ এস এম সহিদ উল্লাহ চাঁদপুর জেলা প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।
* করোনার সময় আমার স্বামী ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা (রুবেল) অত্যন্ত তৎপরতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছে। সে কিন্তু নিজে হার্টের রোগী ছিলো। তবুও নিজের প্রতি খেয়াল না রেখে কীভাবে রোগীদের দ্রুত সুস্থ করে তোলা যায়, সে ব্যাপারে খুবই আন্তরিক ছিলো। দায়িত্ব পালনকালে সে নিজের ব্যাপারে খুব বেশি চিন্তা করতো না। নির্ভয়ে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা দিতো। তাঁকে নিজের প্রতি খেয়াল রাখার কথা বললে বলতো, ‘আল্লাহ যা করার করবে, তুমি চিন্তা করো না’। আমি তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল কিংবা চাঁদপুর মেডিকেল কলেজে কিছু করার দাবি জানাই।
-ডাঃ সাজেদা বেগম পলিন ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা (রুবেল)-এর স্ত্রী; সিভিল সার্জন, নড়াইল।
* আমরা একজন মানবিক এবং গুণী চিকিৎসককে হারালাম। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেনো এই মানব সেবক চিকিৎসককে ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতবাসী করেন। তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
-ডাঃ সৈয়দ নূরুল হুদা চাঁদপুর জেলা বিএমএ’র সভাপতি।
* ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা (রুবেল)-এর আমার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো। তিনি যখন চাঁদপুর সেন্ট্রাল হসপিটালে যোগদান করে তখন থেকেই তার সাথে আমার সখ্যতা গড়ে উঠে। একসাথে আমরা সংগঠন করতাম। গত ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ শনিবার যখন ডাঃ রুবেল আমাকে ফোন দিয়ে তার অসুস্থতার কথা জানায় এবং হাসপাতালে যেতে বলে। আমি হাসপাতালে গিয়ে তাকে জীবিত পাইনি।
ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল এককথায় অসাধারণ একজন মানুষ ছিলেন। মানব দরদী মানুষ ছিলেন। করোনা মহামারির সময় যখন অনেকে রোগী দেখা থেকে বিরত ছিলো তখন ডাঃ রুবেল নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। আল্লাহ তার বেহেশত নসিব করুন।
-ডাঃ দেলোয়ার হোসেন সদস্য সচিব, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, চাঁদপুর।
* ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল আমার খুব ঘনিষ্ঠ ছোট ভাই ছিলো। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের সেবা দেয়া থেকে শুরু করে প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজ একসাথে করতাম। করোনার সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রুবেল রোগীদের সেবা দিতো। সে চাঁদপুরের মানুষ না হয়েও চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে চাঁদপুরের মানুষের আপন হয়ে যায়। আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
-ডাঃ মাহমুদুন্নবী মাসুম সাধারণ সম্পাদক, চাঁদপুর জেলা বিএমএ।
* প্রিয়ভাজন অনুজপ্রতিম সহযোদ্ধা চিকিৎসক ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেলের অকাল প্রয়াণ আমাকে এবং চিকিসক সমাজকে শোকস্তব্ধ করে দিয়েছে। তার মতো কর্মনিষ্ঠ, রেগীবান্ধব চিকিৎসক আজকাল দুর্লভ। আমি ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেলের স্মৃতি রক্ষার্থে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের কক্ষটিকে তার নামে নামকরণের দাবি জানাই এবং সে যেহেতু দীর্ঘদিন চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ছিল, এ কারণে আরএমওর কক্ষে তার নামে একটি কর্নার স্থাপনের আবেদন জানাই।
-ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া সভাপতি, বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল প্র্যাকটিশনার্স এসোসিয়েশন (বিপিএমপিএ), চাঁদপুর।