প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৩, ০০:০০
অস্টিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয় মানে শরীরের হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া। এতে হাড় অনেকটা মৌচাকের মতো ছিদ্র ছিদ্র বা ফুলকো হয়ে যায়। অতি অল্প আঘাতে এই দুর্বল হাড়ের দ্রুত ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি। এমনকি তেমন কোনো আঘাত ছাড়াও মারাত্মক হাড় ক্ষয়ে হাঁচি-কাশি দিলেও তা ভেঙে যেতে পারে।
৫০ বছর পেরোনোর পর হাড় ক্ষয় দ্রুতলয়ে হতে থাকে। যাদের হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি আগে থেকে বিদ্যমান, তাঁদের ৫০-এর আগেও শুরু হয়ে যায় এই প্রক্রিয়া। যেমন নারীদের মেনোপজের পর হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
যাদের হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বেশি
বয়স বৃদ্ধি, স্ত্রী লিঙ্গ, জিনগত ত্রুটি, অস্ত্রোপচারের কারণে ডিম্বাশয় না থাকা বা সময়ের আগেই মেনোপজ হয়ে যাওয়া, পুরুষ বা নারীর যৌন হরমোনের অভাব বা হাইপোগোনাডিজম, অতি খর্বাকৃতি, ভিটামিন ডির ঘাটতি, ধূমপান, অপুষ্টি, অতিরিক্ত চা, কফি, চকলেট গ্রহণের অভ্যাস, খাদ্যে বা বাতাসে ভারী ধাতুদূষণ, কোমল পানীয় ও মদ্যপান, দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা বা শয্যাশায়ী রোগী, যারা দীর্ঘদিন স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ সেবন করেন, তাঁদের অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বেশি। অন্যান্য হরমোনজনিত রোগ যেমন হাইপারথাইরয়িডিজম, হাইপারপ্যারাথাইরয়িডিজম, কুসিং সিনড্রোম, ডায়াবেটিস, অ্যাডিসন রোগ, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এসএলই ও কিডনি অকার্যকারিতা ইত্যাদি থাকলে হাড় ক্ষয় বেশি হয়।
উপসর্গ
প্রথমত, হাড় ক্ষয়ের তেমন কোনো শারীরিক লক্ষণ না-ও থাকতে পারে। সাধারণত হঠাৎ হাড় ভেঙে যাওয়াই এর প্রধান উপসর্গ। কারও কারও দৈহিক উচ্চতা কমে যায়, কুঁজো হয়ে যাওয়া বা সামনে ঝুঁকে থাকার সমস্যা দেখা দেয়। সংগোপনে মেরুদণ্ডে ফাটল বা চিড় ধরার কারণে কারও তীব্র কোমরব্যথা হতে পারে।
চিকিৎসা
প্রধান ও প্রথম পদক্ষেপ হলো ঝুঁকি শনাক্তকরণ, আর সম্ভব হলে তা রোধ করা। কিছু ওষুধ আছে যেগুলো চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করা যেতে পারে। আগেভাগেই রোধ করার জন্য সচেতন হতে হবে। কারা কতটুকু ঝুঁকিতে আছেন বা কারা ইতিমধ্যেই হাড় ক্ষয়ে ভুগছেন, তা নির্ধারণ করতে হবে ও উপযোগী চিকিৎসা নির্বাচন ও প্রয়োগ করতে হবে।
চাই সচেতনতা
নিয়মিত ব্যায়াম করুন, এতে হাড়ের শক্তি বাড়ে। নিয়মিত পরিমাণমতো ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-জাতীয় খাবার খান। হাড়ের প্রধান উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি। ক্যালসিয়ামের জন্য নিয়মিত মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুধজাতীয় খাবার খান। ভিটামিন ডির ৯০ ভাগ উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো।
তাই প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকুন, পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছ খান। এতে হাড় ভালো থাকবে। ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন। ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। অতিরিক্ত ওজন বহন করবেন না। বহন করলেও দুই হাতের ভারসাম্য যেন থাকে।
খাওয়ার পর ঘুম পায় কেন?
মৃণাল সাহা
দুপুরের খাবার খেয়ে বিপুল উদ্যমে অফিসের ডেস্কে এসে বসেছেন, ভাবছেন ফেলে রাখা কাজগুলো একঝটকায় করে ফেলবেন। কথায় আছে, পেট শান্তি তো শরীর শান্তি। কিন্তু কাজ করবেন কি, দুই চোখের পাতা খোলা রাখাটাই যে দায় হয়ে উঠেছে। কেন এমন হয়? খাওয়ার পরই কেন দুই চোখে হানা দেয় ঘুম?
কেন হয়?
বাসায় থাকলে অনেকেই দুপুরে খাবারের পর শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দেন। বলতে গেলে শরীরকে ছোটখাটো একটি ব্রেক দেন। বাংলা ভাষায় একে বলে ‘ভাতঘুম’। খাওয়ার পর ঘুম পাওয়ার পেছনে নির্ভর করে কী খাচ্ছেন ও কখন খাচ্ছেন, তার ওপর। আমাদের শরীরে একটি নির্দিষ্ট স্লিপ সাইকেল রয়েছে। দুপুরবেলা আমাদের শরীরের তাপমাত্রা একটু কমে যায়, ফলে শরীরে ক্লান্তি ভর করে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয় দুপুরের খাবার।
* খাওয়ার পর ঘুম পাওয়ার পেছনে নির্ভর করে কী খাচ্ছেন ও কখন খাচ্ছেন, তার ওপর
* খাবার হজম করতে শরীরকে বেশ ভালো পরিমাণ শক্তি খরচ করতে হয়। কাজের মধ্যে থাকায় পাকস্থলী চায় দ্রুত খাদ্য হজম করতে, তখন শরীরের রক্তপ্রবাহের বেশির ভাগ পাকস্থলীর দিকে চালিত হয়। ঠিক সে সময়টায় শরীরে ঘুম ঘুম ভাব আসে। এ ছাড়া খাবার বাছাইও প্রভাব ফেলে ঘুমের ওপর। বিশেষ করে হাই কোলেস্টেরল ও কম প্রোটিনের খাবারে ক্লান্তি বেশি অনুভূত হয়। রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা শরীরকে ক্লান্ত করে তোলে।
কীভাবে ক্লান্তি দূর করবেন?
* স্বাস্থ্যকর, সুষম খাদ্য বাছাই করুন
* দুপুরের খাবারের জন্য সুষম খাবার বাছাই করুন। প্রোটিনযুক্ত স্বাস্থ্যকর খাবার শরীরে চিনির পরিমাণ স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে। ফলে মধ্যাহ্নভোজের পরপর সহজে শরীরে ক্লান্তি ভর করে না। দুপুরে কাজের চাপ থাকলে ভারী চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। কারণ, খাবারগুলো শরীরকে আরও ক্লান্ত করে।
* দুপুরে কাজের চাপ থাকলে ভারী চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন
* পর্যাপ্ত পানি খান
* কাজের চাপে অনেকেই পর্যাপ্ত পানি খেতে ভুলে যান। ফলে পানির অভাবে শরীর ক্লান্ত বোধ করতে পারে। ক্লান্ত বোধ না করতে চাইলে সারা দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে ভুলবেন না। তবে ক্লান্তি দূর করতে ক্যাফেইন-জাতীয় পদার্থ গ্রহণ করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। সাময়িকভাবে ক্লান্তি কাটলেও সামগ্রিক ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
* হাঁটাহাঁটি করুন
* ব্যায়াম রক্ত চলাচল ও শরীরে শক্তির মাত্রা বাড়াতে বেশ সাহায্য করে। তাই দুপুরের খাবারের পর কিছুক্ষণ হাঁটলে তা ক্লান্তি দূর করে।
* ব্যায়াম রক্ত চলাচল ও শরীরে শক্তির মাত্রা বাড়াতে বেশ সাহায্য করে
* পর্যাপ্ত ঘুমান
* দুপুরে খাবারের পর ঘুম আসার আরেকটি কারণ হতে পারে রাতে অপর্যাপ্ত ঘুম। রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে সারা দিন তার প্রভাব থাকে। ফলে খাওয়ার পর যখন শরীরের তাপমাত্রা সামান্য কমে যায়, তখন ঘুম পায়। রাতে পর্যাপ্ত ঘুম, দিনের ক্লান্তি অধিকাংশ দূর করে।
তথ্যসূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।