প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
ষড়ঋতুর বাংলাদেশে শীতের জড়বিবশতা কেটে গিয়ে আসে বসন্তের দখিনা মলয়। কিন্তু এ সুখ নিরবচ্ছিন্ন সুখ নয়। এ সুখের আড়ালেই অসুখের হাতছানি। বসন্তের আগমনের ফাঁকে দখিনা হাওয়ায় ভর করে চলে আসে ভাইরাস নামে অতি আণুবীক্ষণিক জীবাণু-সম্প্রদায়। এদের দৌরাত্ম্যে মানবজীবন হয়ে ওঠে অস্থির। এ সময় ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কারণে ভাইরাল ফ্লুর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। উচ্চতাপমাত্রার জ্বর ও ঘন ঘন পিপাসা দেখা দেয় আক্রান্তের মাঝে। পাঁচ বছরের নিচের বয়সী বাচ্চারা বিশেষতঃ বার মাসের নিচে বয়সী শিশুরা এই ভাইরাল ফ্লুতে অধিক শিকার হয়। বয়োজ্যেষ্ঠ যারা পঁয়ষট্টির অধিক বয়সী তাদের মধ্যে ফ্লু-তে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি লক্ষ্যণীয়।
লক্ষণ
আক্রান্ত হওয়ার প্রথমদিকে সাধারণ ঠাণ্ডা মতো উপসর্গ নিয়ে ফ্লু আবির্ভূত হয়, যাতে সর্দি, হাঁচি-কাশি, গলাব্যথা থাকে। ঠাণ্ডা প্রকোপ ধীরে ধীরে বাড়লেও ফ্লু-র আক্রমণ হঠাৎ করে হয়। ফ্লুর আক্রমণে তীব্র অস্বস্তি লাগে।
* এতে জ্বর থাকে ১০০.৪০ ফাঃ
* মাংশপেশি ব্যথা হয়
* ঠাণ্ডা ও শীত শীত লাগে এবং ঘাম দেয়
* শুষ্ক কাশি হয় যা দীর্ঘদিন থাকে
* ক্লান্ত অবসন্ন লাগে
* দুর্বলভাব তৈরি হয়
* নাক জ্যাম হয়ে যায়
* গলা ব্যথা করে
চিকিৎসা
* প্যারাসিটামল সেবন
* অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ সেবন
* অ্যাসাইক্লোভির জাতীয় অ্যান্টি ভাইরাল সেবন
ফ্লুর কারণ
বাতাসের মাধ্যমে থুথু, কাশি, হাঁচি বা কথা বলার সময় বিন্দু বিন্দু থুথুর মাধ্যমে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস জীবাণু চোখণ্ডনাক-মুখ দিয়ে সংক্রমিত হওয়া যেমন : হাত না ধুয়ে তা চোখে বা নাকে বা মুখে দেওয়া।
শিশু ও বৃদ্ধ যাদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে তাদের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন এই সংক্রমণ বজায় থাকে। ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পাঁচদিন পরে রোগের উপসর্গ প্রকাশ পায়।
দিন দিন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস তার ধরণ পরিবর্তন করছে। তাই একবার আক্রান্ত হওয়ার পর পরবর্তী আক্রমণে পূর্বে উৎপন্ন হওয়া অ্যান্টিবডি কোন কাজে আসে না।
আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি-উপাদান
বয়স : এক বছরের নিচে শিশু এবং পঁয়ষট্টি বছরের ওপরে বৃদ্ধরা আক্রান্ত হওয়ার অধিক ঝুঁকিতে থাকে।
বসবাস ও কর্মস্থলের অবস্থা : হাসপাতাল,নার্সিং হোম, সেনা-ক্যান্টনমেন্ট, ব্যারাক, বস্তি এগুলো ঝুঁকিতে থাকে অধিক।
শারীরিক অবস্থা : ক্যান্সারাক্রান্ত রোগী, ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী, হৃদরোগী ইত্যাদি দৈহিক অবস্থার রোগীরা সহজেই ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়। যারা এইডস্ আক্রান্ত রোগী, যারা অঙ্গস্থাপনকারী রোগী তারাই অধিক আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। যারা দীর্ঘদিন স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবন করছেন কিংবা যারা যক্ষ্মাক্রান্ত রোগী তারাও এই ঝুঁকির আওতায়।
গর্ভাবস্থায় কিংবা ঊনিশ বছরের নিচে যারা দীর্ঘদিন অ্যাস্পিরিন সেবন করছেন তারাও ফ্লু-তে আক্রান্ত হওয়ার অধিক ঝুঁকিতে থাকেন।
জটিলতা
* নিউমোনিয়া
* ব্রঙ্কাইটিস
* অ্যাজমা উদ্দীপ্ত হওয়া
* কানের সংক্রমণ
প্রতিরোধ
* ছয় মাস ও তার ঊর্ধ্বে বয়সীদের বছরে একবার ফ্লু-ভ্যাকসিন দেওয়া।
* যত্রতত্র হাঁচি-কাশি না দেওয়া
* হাত সাবান দিয়ে ভালো করে ধোয়া
* নাকে-মুখে মাস্ক ব্যবহার করা
* আক্রান্ত কারো সাথে কোলাকুলি বা হাত না মেলানো।