প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
শীতকালীন রোগের প্রকোপ বেড়েছে। ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ডায়রিয়ায় গত এক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এর পরই রয়েছে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত সমস্যা, নিউমোনিয়া, জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, জ্বরসহ নানা রোগব্যাধি।
যেহেতু এই তীব্র শীতে শিশুরা নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিসহ নানা রোগে খুব সহজেই আক্রান্ত হয়, সেহেতু তাদের শীতের কাপড়ে যথেষ্ট যত্ন নিতে হবে। গরম কাপড় দিয়ে শিশুর মাথা ঢেকে রাখলে শরীরের তাপমাত্রা বজায় থাকবে। রুম হিটার ব্যবহার করতে পারেন। তবে লম্বা সময় ধরে রুম হিটার ব্যবহার করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। সম্ভব হলে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ঘর থেকে বাইরে বের না করাই উত্তম। অ্যাজমা প্রতিরোধে শিশুদের অবশ্যই ধুলোবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। জামাকাপড় নিয়মিত সাবান দিয়ে ধুয়ে দিতে হব। শীতবস্ত্র, লেপ-তোশক নিয়মিত রোদে দিতে হবে।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে অবশ্যই শিশুকে পর্যাপ্ত স্যালাইন খাওয়াতে হবে। শীত বলে ঠাণ্ডা লাগার ভয়ে অনেকে এ সময় শিশুদের স্যালাইন খাওয়াতে চান না, যা মোটেই ঠিক নয়। সেইসঙ্গে স্বাভাবিক খাবারও খাওয়াতে হবে। আবাসস্থল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং বিশুদ্ধ বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
এই শীতে বিশেষ করে বয়স্কদের আর্থ্রাইটিস বা বাতের সমস্যা বেশি বাড়ে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এনকাইলোজিং স্পন্ডিওলাইটিস, স্পন্ডাইলো আর্থ্রাইটিস, রি-অ্যাকটিভ আর্থ্রাইটিস, অস্টিও-আর্থ্রাইটিস রোগীদের শীতের চলাফেরা বা মুভমেন্ট কম হয় বলে ব্যথার প্রকোপ বেড়ে যায়। এ জন্য যথাসম্ভব গরম উত্তাপে থাকা, মোজা পরিধান করা, ব্যথার স্থানে হালকা গরম সেক দেওয়া, যতটুকু সম্ভব ঘরেই হালকা মুভমেন্ট করা উচিত। তা ছাড়া তীব্র ঠান্ডায় বাতের কিছু রোগীর হাত-পা নীল হয়ে যেতে পারে (রেনোড ফেনোমেনা)। অনেকের গ্যাংগ্রিনও হয়। এ জন্য চিকিৎসকদের নির্দেশনা মেনে চলা উচিত। এসব রোগীর বারবার পানি ব্যবহার না করাই শ্রেয়।
তীব্র শীতে বিশেষ করে ভোরের দিকে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। এক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস আক্রান্তদের ঝুঁকি বেশি। তাই এই শীতে কুয়াশার মধ্যে না হেঁটে, একটু রোদ উঠলে হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করা উচিত। তীব্র শীতের আরেকটি মারাত্মক সমস্যা হলো হাইপোথার্মিয়া, এতে রোগীর মৃত্যুও ঘটতে পারে। এই পরিস্থিতিতে কেউ পড়লে রোগীকে দ্রুত গরম আবহাওয়ায় এনে গরম কাপড় পরিধান করে গরম পানি পান করাতে হবে।
এ সময় সবার উচিত কুসুম কুসুম গরম পানি পান করা। এতে শ্বাসনালিতে মিউকাস তৈরি হয়ে রোগজীবাণু বের হয়ে যায়। এ ছাড়া গোসল ও অন্যান্য কাজে গরম পানি ব্যবহার করাই উত্তম।
এই শীতে কমলা, মাল্টা, বেদানা, মধু, তুলসীপাতা, পালং ও সরিষার শাক, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, রসুন, পেঁয়াজ, আদা, সবুজ শাকসবজি, গ্রিন-টি বেশি করে খাওয়া উচিত। এগুলোর মধ্যে উপস্থিত ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের সজীবতা বজায় রাখে, খাদ্য হজমে সাহায্য করে। শরীরের নিস্তেজভাব কাটায়। টাটকা ফল ও সবজিতে রয়েছে বায়োটিন যা ত্বক ও চুল ভালো রাখে।