প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
শীতকাল যেন হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর যমদূত। এই মৃত্যু আমাদের অনুসন্ধানী করে তোলে, শীতকালে হার্ট অ্যাটাক কেন বেশি হয় সে বিষয়ে।
হার্ট অ্যাটাক কী?
হার্ট একটি মাংসপেশিসমৃদ্ধ রক্ত সঞ্চালন যন্ত্র, যা সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং নিজের দেহে রক্ত সরবরাহ করে। মানবদেহে বিভিন্ন বিপাকীয় ক্রিয়া ও শ্বসনকার্য সম্পাদনে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ার যথাযথ সচলতা বজায় রাখা দরকার। নচেৎ অক্সিজেনের অভাবে সংশ্লিষ্ট অংশে পঁচন প্রক্রিয়ার সূচনা হতে পারে। হার্ট যখন সংকুচিত হয় তখন দেহের অন্যান্য অঙ্গসমূহ রক্ত সরবরাহ পায়। আর হার্ট যখন সংকোচন শেষে প্রসারিত হয় তখন সে নিজে রক্ত সরবাহ পেয়ে থাকে। যদি হার্টের নিজদেহে রক্ত সংবহনকারী কোনো রক্তনালীর ছিদ্র চর্বি বা প্ল্যাক বা দলা পেকে আটকে যায় এবং সম্পূর্ণভাবে পরবর্তী অংশে কোনো রক্ত সরবরাহ না যা যায় তাহলে ধীরে ধীরে হার্টের মাংসপেশির সে অংশে পঁচন ধরতে থাকে এবং রক্ত সরবরাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হলে ঐ পঁচন স্থায়ী রূপ লাভ করে। ফলে হার্ট এক পর্যায়ে অকেজো হয়ে যায় এবং অ্যাটাকের শিকার হয়। অর্থাৎ হার্ট অ্যাটাক হলো মূলত রক্ত সরবরাহ বিঘিœত হওয়ার কারণে হার্ট বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়া।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ
১. বুকে ব্যথা। ব্যথা তীব্র হয়। বিশ্রামেও এ ব্যথা উপশম হয় না।
২. ব্যথা বুকের বামদিক, মধ্যভাগ বা সারাবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যথা কখনো কখনো বামদিকে উপরের পেটের অংশেও বিস্তৃত হয়।
৩. ব্যথা ধীরে ধীরে বাম কাঁধ, ঘাড়, বাম হাতে ছড়িয়ে পড়ে।
৪. শ্বাসকষ্ট বা নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা লাগে।
৫. হাল্কা ঘাম দেয়।
হার্ট অ্যাটাকের পরিণতি
১. হার্ট ফেইলিওর
২. আকস্মিক মৃত্যু
৩. কার্ডিওজেনিক শক
৪. হার্ট রাপচার বা ফেটে যাওয়া
৫. কার্ডিয়াক অ্যারিদমিয়া বা হৃদস্পন্দনের তালহীনতা
শীতকালে হার্ট অ্যাটাক বেশি হওয়ার কারণ
১. রক্তনালীসমূহ শীত মোকাবেলায় তাপের সমতা বজায় রাখতে কুঞ্চিত অবস্থায় থাকে। ফলে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়।
২. অতিরিক্ত শীতে ছোট ছোট রক্ত নালী বা ক্যাপিলারীর রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। এর ফলে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।
৩. শীতে দেহকে অতিরিক্ত তাপ উৎপাদন করতে হয় বিধায় রক্তের কাজ বৃদ্ধি পায় এবং এর মাধ্যমে হার্টের কাজও বেড়ে যায়। ফলে এ সময় হার্টের নিজের রক্তপ্রাপ্তি হ্রাস পায় যা হার্ট অ্যাটাকের জন্যে দায়ী।
৪. শীতকালে রক্তনালীসমূহের গতি পথের পরিধি কুঞ্চিত হয় বিধায় রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় যা হার্ট অ্যাটাকের জন্যে দায়ী।
৫. রক্তে কোলেস্টেরলের মান ও মাত্রা শীতকালে তুলনামূলক বৃদ্ধি পায়। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
৬. শীতকালে তাজা খাদ্য উপকরণ, পিঠাপুলি, রস ও মিষ্টির প্রাচুর্যের কারণে খাবারগ্রহণের হার ও মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
৭. নিয়মিত ব্যায়ামের ঘাটতির কারণে শীতকালে শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়। ফলে দেহের সকল স্থানে রক্ত সরবরাহের সাম্য বজায় থাকে না। এই কারণে শীতে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বাড়ে।
৮. বাংলাদেশে শীতকালে উৎসবের আয়োজন বৃদ্ধি পায় যেখানে খাদ্য গ্রহণের সীমা লঙ্ঘিত হয় মাঝে মাঝে আর তা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
হার্ট অ্যাটাক হতে বাঁচার উপায়
১. ধূমপান ও অ্যালকোহল পান হতে বিরত থাকা।
২. নিয়মিত ব্যায়াম করা।
৩. দৈনিক তিরিশ মিনিট হাঁটা। তবে একনাগাড়ে নয়, ভাগে ভাগে।
৪. অতিরিক্ত তৈল-চর্বি ও লবণাক্ত খাবার গ্রহণ না করা এবং পাতে আলগা লবণ না নেয়া।
৫. মানসিক চাপ ও উত্তেজনা পরিহার করা এবং সর্বদা প্রফুল্ল থাকার চেষ্টা করা।
৬. শরীরের ওজন বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণে রাখা।
৭. পরিমিত ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ। মুখরোচক খাবারের চেয়ে খাদ্যের পুষ্টিমানের দিকে গুরুত্ব দেয়া। দৈনিক পঞ্চাশ গ্রাম বাদাম, সামুদ্রিক মাছ খাদ্য তালিকায় রাখলে হার্ট অ্যাটাক হতে বাঁচা যায়।
৮. নিয়মিত ঘুম ও বিশ্রাম গ্রহণ করা।
৯. পর্যাপ্ত বিনোদনে সময় ব্যয় করা।
১০. চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিরেকে ঔষধ সেবন না করা।