প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
সবার জীবনেই দুঃখ-কষ্ট থাকে। প্রতিটি মানুষের মনেই লুকিয়ে থাকে কোনো না কোনো কষ্ট। তবে সমস্যা হলো সবাই দুঃখের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে মনে দুঃখ পুষে রাখলে তা এক সময় মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। এভাবেই মানুষ বিষণ্নতায় ভুগতে শুরু করেন। যদিও বিষণ্নতা শুরুর দিকে বোঝা যায় না। তবে দীর্ঘদিন এ সমস্যা পুষে রাখলে রোগী শারীরিক নানা সমস্যাতেও ভুগতে শুরু করে।
বিষণ্নতার লক্ষণ কী কী?
১. দিনের অধিকাংশ সময়ে মন খারাপ থাকা।
২. হঠাৎ খুব বেশি ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া।
৩. পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের প্রতি অনীহা।
৪. হঠাৎ ঘুম বেড়ে যাওয়া অথবা নিদ্রাহীনতা।
৫. নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া বা মানুষজনের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া।
৬. অতিরিক্ত রাগ ও অতিমাত্রায় অস্থিরতা।
৭. কাজে মনোযোগের অভাব।
৮. ব্যক্তি জীবনের প্রতি অনীহা।
৯. অতিমাত্রায় ভুলে যাওয়া ও জরুরি কাজে মনোযোগের অভাবে সিদ্ধান্তহীনতা।
১০. মানসিক অবসাদে কান্না করা।
১১. জীবনের প্রতি অনীহা ও আত্মহত্যার প্রবণতা।
১২. অতিমাত্রায় দুশ্চিন্তায় মাথা ঘোরা।
১৩. মাঝে মধ্যেই হৃদস্পন্দন খুব দ্রুত ওঠানামা করা।
১৪. মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথা ও বমি বমি ভাব লেগেই থাকা।
বিষণ্নতা রোধে করণীয়
* নিয়মিত মেডিটেশন করুন, এতে ইতিবাচক চিন্তা করার মনোভাব বাড়বে।
* নারী-পুরুষ সবাইকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। আর্থিক স্বচ্ছলতা মানসিকভাবে আপনাকে শক্তিশালী করবে।
* সব সময় নিজেকে পারিবারিক, সামাজিক ও ভালো কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে। অলসভাবে সময় পার করলে হতাশা কষ্ট গলা চেপে ধরবে।
* দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থেকেও হতে পারে বিষণ্নতা। তাই ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপসহ যে কোনো অসুখ থাকলে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
* মন খারাপ হয়ে যায় এমন বিষয় নিয়ে কখনো ভাববেন না। সব সময় নিজেকে কর্মমুখী ও সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখুন।
* নিজের শখগুলো কাজগুলো করার চেষ্টা করুন। অনেকেই গাছ লাগতে পছন্দ করেন। বাসায় গাছ লাগানোর সুযোগ না থাকলে, বাসার ছাদের উপর গাছ লাগান। ফুলের গাছের পাশাপাশি শাক সবজি ও ওষুধি গাছ উপকারে আসবে সবারই।
* সময় ও সুযোগ পেলেই বেড়াতে যান। স্বাস্থবিধি মেনে দূরে কোথাও অথবা আত্মীয়-স্বজনের বাসায় বেড়াতে যেতে পারেন। ভাবের আদান প্রদান হলে মনের প্রফুল্লতা বাড়বে।
* সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে। জীবনে যে কোনো সময়ে যে কোনো বিপর্যয় আসতেই পারে। মনোবল হারালে চলবে না।
* চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বছরের পর বছর ধরে একই জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধ খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অনেকের বিষণ্নতা হতে পারে। আবার সন্তান জন্মের পরেও কিছু নারী বিষণ্নতায় ভোগেন। সব ধরনের বিষণ্নতাজনিত অসুখ থেকে দূরে থাকতে মন ভালো রাখতে হবে।
* হঠাৎ ক্ষুধা, ঘুম বা ক্লান্তির পরিমাণ অনেক বেড়ে বা কমে গেলে রক্তে চিনির মাত্রা, রক্তচাপ একটানা কয়েকদিন মেপে নোট করে রাখবেন। হঠাৎ শরীর খারাপ লাগা বা উল্লেখিত সমস্যাগুলো খুব বেশি মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
* পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। মাঝে মধ্যে গেট টুগেদারের আয়োজ করুন, তাহলেদেখবেন মন ভালো থাকবে।
* সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্যের সফলতা দেখে অনেকেই হীনমন্যতায় ভোগেন। যদিও এমনকি করা উচিত নয়, তবুও অনেকেই বিষয়গুলো নিয়ে বিষণ্নতায় ভুগতে শুরু করেন। তাই প্রয়োজন ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার না করাই ভালো।
* বড় কোনো দুর্ঘটনা, ব্যর্থতা, না পাওয়া, কোনো কিছু হারিয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ খুব বেশি ভেঙে পড়লে মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
* ভুলে যাওয়া, অস্থিরতা, দিনের পর দিন চিৎকার করে কাঁদার ইচ্ছে, কাউকে মারতে ইচ্ছে করে বা আত্মহত্যার ইচ্ছে হলে কখনো নিজের প্রতি অবহেলা করবেন না।
* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগের লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]