প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
শরীরের নাম মহাশয়। যা সওয়াবেন তা-ই সয়। আদতে তা-ই নয়। শরীর সবসময় সবকিছু সহ্য করতে পারে না। প্রকৃতির প্রচণ্ড তাপদাহও শরীর সবসময় সহ্য করতে পারে না। আর তাই প্রচণ্ড তাপে শরীর কখনও কখনও নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
হিট স্ট্রোক কী
যখন পরিবেশের প্রচণ্ড তাপের সংস্পর্শে এসে দেহের তাপমাত্রা ১০৫-এর বেশি হয় এবং দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বিলোপ হয়, তখন তাকে হিট স্ট্রোক বলে। হিট স্ট্রোক কিন্তু জ্বর নয়।
হিট স্ট্রোকের উপসর্গ
* শুষ্ক ত্বক
* দ্রুত ও প্রবল হৃদস্পন্দন
* মাথা ঘোরা ও বমিভাব
* ১০৫ ডিগ্রির বেশি দৈহিক তাপমাত্রা
* ঘাম কমে যাওয়া
* কথায় জড়তা ও দ্বিধাগ্রস্ততা তৈরি হওয়া।
হিট স্ট্রোকের কারণ
যে সকল পদার্থ শীতলতাকে বাধাগ্রস্ত করে এবং পানিশূন্যতা তৈরি করে তা হলো অ্যালকোহল, ক্যাফেইন, বিবিধ উত্তেজক ঔষধ ইত্যাদি। এসব পদার্থ সংযোগ এবং বয়সজনিত শরীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের কারণে ক্ল্যাসিক হিট স্ট্রোক হয়। ক্রীড়াবিদ বা সৈনিকদের ক্ষেত্রে শারীরিক কসরতজনিত হিটস্ট্রোক হয়। এতে কোনো উত্তেজক ঔষধের ক্রিয়া থাকে না এবং স্বাস্থ্যেরও কোনো সমস্যা থাকে না। বরং অতিরিক্ত রৌদ্রে সময় অতিবাহিত করার কারণে হিট স্ট্রোক হয়। অনেক সময় শিশুরা গাড়িতে আটকা পড়লেও হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়।
হিট স্ট্রোকের পরিসংখ্যান
১৯৯৮ সাল এবং ২০১১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে পাঁচশ শিশু গাড়িতে আবদ্ধজনিত কারণে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় এবং তাদের শতকরা পঁচাত্তর ভাগ ছিলো দুই বছরের নিচে শিশু।
হিট স্টোক প্রতিরোধ
* হিট স্ট্রোক এড়াতে হলে অতি তাপজনিত প্রদাহ ও পানিশূন্যতা এড়াতে হবে।
* হাল্কা, ঢিলেঢালা, পোশাক পরিধান করতে হবে। কটন জাতীয় পোশাক শরীরের জন্য উপকারী।
* প্রশস্ত কিনার সমৃদ্ধ উজ্জ্বল রঙের টুপি পরিধান করতে হবে, যাতে দেহে তাপ না লাগে।
* অতি তাপদাহজনিত পরিবেশে অতিরিক্ত শারীরিক ব্যায়াম বা শারীরিক কসরৎ বর্জন করতে হবে।
* প্রচণ্ড তাপদাহে যথেষ্ট পরিমাণ পানি, খাবার স্যালাইন বা ফলের রস পান করা বাঞ্ছনীয়।
হিট স্ট্রোকের চিকিৎসা
* দ্রুত শরীরকে শীতল করতে হবে। প্রয়োজনে যান্ত্রিক সাহায্য নিয়ে হলেও উচ্চ তাপ কমাতে হবে।
* আক্রান্ত ব্যক্তিকে ছায়ায়, শীতল স্থানে এনে যথা সম্ভব গায়ের পোশাক কমাতে হবে।
* হিটস্ট্রোকে পানিশূন্যতায় ভুগলে দ্রুত আইসোটনিক স্যালাইন দ্বারা তা দূর করতে হবে।
হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন সম্ভাবনা
হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তি কদাচিৎ স্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তবে কেউ কেউ মারাত্মক কর্মজনিত দুর্বলতায় ভোগেন।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রায়শ্চিত্তে পৃথিবীর তাপ ক্রমশ বাড়ছে। গ্রীষ্মে সূর্যের খররোদের প্রকোপ দিনকে দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। পাশাপাশি বায়ূর আর্দ্রতা অধিক থাকায় গরমের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এই গরমে তাই হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ছাতা বা ক্যাপের ব্যবহার, পাতলা ও আরামদায়ক কাপড় পরিধান, শীতল ও ছায়াস্থানে বিরাজের মাধ্যমে গরম হতে দূরে থাকুন। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ করুন।
প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা
চিকিৎসাঙ্গন বিভাগ, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ
আলহাজ্ব ডাঃ এমএ গফুরের বাসভবন (২য় তলা) স্ট্র্যান্ড রোড, চাঁদপুর।
ই-মেইল : [email protected]