প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
ঠাণ্ডা, সর্দি ও কাশি প্রায়ই হতে দেখা যায় এবং প্রতিবারই ঔষধ সেবন করলে এটি সাময়িকভাবে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু কিছুদিন পর শরীর যখন স্বাভাবিক হয়, তখন তা আবার দেখা দেয়। এভাবে দুই থেকে পাঁচ বছর চললে তখন একে ঠাণ্ডাজনিত অ্যালার্জি বলে। কখনো কখনো এ ধরনের অ্যালার্জির ক্ষেত্রে শ্বাসনালীতে রক্ত জমাট বাঁধে। তখন তাকে ব্রাংকাইল অ্যালার্জি বলে।
অ্যালার্জির মূল কারণ
দেহের বাড়তি তাপ : ঠাণ্ডা-সর্দির প্রকৃত কারণ যদিও জানা সম্ভব নয়, কারণ মানব দেহ আল্লাহ তা’আলার এক বিচিত্র সৃষ্টি। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর মূলে রয়েছে এ বাড়তি তাপ। দেহের এই তাপজনিত ঠাণ্ডা চলতে থাকলে থাইরয়েড/প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্যে সময়মতো এর চিকিৎসা করা প্রয়োজন। সময়মতো চিকিৎসা না করা হলে-
১. ক্যালসিয়াম বিপাকক্রিয়া ধীরগতিসম্পন্ন হয় এবং দেহে ক্যালসিয়াম ঘাটতি দেখা দেয়।
২. এটি এড্রিনাল গ্রন্থিকে নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং এই গ্রন্থিটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এড্রিনাল গ্রন্থি দুর্বল হয়ে পড়ে। এড্রিনাল গ্রন্থি দেহের তাপ নিয়ন্ত্রক অঙ্গগুলো যেমন লিভার, পিত্তথলি ও প্লিহাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং দেহে উপযুক্ত অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করে। এজন্যে এ গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থিটি ধীরগতিসম্পন্ন হলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে।
আবার ঠাণ্ডা-সর্দিকে বন্ধ করার জন্যে ঔষধ সেবন করলে তা দেহের উত্তাপ বাড়িয়ে দেয়। যা তাপ নিয়ন্ত্রক অঙ্গগুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই দূষিত চক্র যখন দুই/তিন বছর ধরে চলতে থাকে। তখন ফুসফুসের, দেহে উৎপন্ন টক্সিন বের করে দেয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে দেহে টক্সিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। তা আমাদের স্নায়ু ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করে। অর্থাৎ রোগী অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়।
অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার পরবর্তী অবস্থা : এই সময় কিছু বিশেষ বস্তু যেমন ধূলিকণা, সুগন্ধি দ্রব্য, রেণু ইত্যাদির সংস্পর্শে আসলে এবং কিছু বিশেষ খাবার যেমন : ইলিশ মাছ, গরুর মাংস, চিংড়ি মাছ, পুঁই শাক ইত্যাদি খাদ্য গ্রহণ করলে এমনকি কোনো কারণে শরীরে উত্তেজনা (রাগ, দুঃখ, ভয় ইত্যাদি) সৃষ্টি হলে স্নায়ু ব্যবস্থা উত্তেজিত হয়। এর প্রভাবে লিভার ধীরগতিসম্পন্ন হয় এবং দেহের উত্তাপ বেড়ে যায়। একই সময় মস্তিষ্কে দেহের এসব সমন্ধে জরুরি সংকেত পৌঁছে যায়। মস্তিষ্ক (দেহ বিদুতের পাওয়ার হাউজ) তখন ঐ+ (হিস্টামিন) উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ঐ+ আয়ন বায়ু থেকে গৃহীত অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে পানিতে পরিণত হয়। এই পানি সর্দি, অশ্রু, কফ অথবা বমি আকারে বের হওয়ার সময় দেহ থেকে এই বাড়তি তাপ শোষণ করে নিয়ে যায়। সমাজের অধিকাংশ লোকেরই বিষয়গুলো অজানা। এজন্যে দেহের বাড়তি তাপ বের করা এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পরিবর্তে অ্যালার্জির ঔষধ (এন্টি-হিস্টামিন) সেবন বরে দেহ থেকে বাড়তি তাপ বের দেয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে অ্যালার্জি এমন অবস্থায় পৌঁছে যে, একসময় সামান্য পরমাণু সাদৃশ্য ধূলিকণাও সহ্য করতে পারে না। এই দূষিত চক্র চলতে থাকলে এড্রিনালগ্রন্থি অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অক্সিজেন সংবহন ক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসক্রিয়া কষ্টসাধ্য হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিন দিন হ্রাস পেতে থাকে এবং রোগীর মনে বিষন্নতা নেমে আসে।
আকুপ্রেশার চিকিৎসায় অ্যালার্জি ভালো হয়। চিকিৎসার শুরুতে যদি রোগীর সর্দি আরম্ভ হয় তবে তা দ্রুত আরোগ্যের লক্ষণ।
চিকিৎসা
* দেহ থেকে টক্সিন বের করে দিন।
* অ্যালার্জি মারাত্মক হলে ডান হাতের তালুর ২১ বিন্দু এবং এর বিপরীত পাশের্^ সমানভাবে চাপ দিন।
* দেহের বাড়তি তাপ বের করে দিন।
সকালে খালি পেটে এক চামচ মধু গলার মধ্যে এমনভাবে ফেলুন যেনো তা জিহ্বা স্পর্শ না করে। তা দেহের দুর্বলতা হ্রাস করে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
* ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণের জন্যে হোমিও বায়োকেমিক ঔষধ ক্যালকেরিয়া ফস-১২ ও তিনটি করে বড়ি দিনে দুবার সেবন করুন
প্রতিদিন দুবার ৮, ১১, ২২, ২৩, ২৮ ও ৩০ নং বিন্দুতে চাপ দিন। (চলবে)
অধ্যাপক কে. এম. মেছবাহ্ উদ্দিন : বিভাগীয় প্রধান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজ। ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।
[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]