সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২২, ০০:০০

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে চা
অনলাইন ডেস্ক

যে পানীয় দ্রব্যের যাদুকরী স্পর্শ তথা গুণাগুণ এক নিমিষেই আপনাকে বিমোহিত করতে পারে, করতে পারে সতেজ, উদ্দীপ্ত এবং প্রাণবন্ত সে তরলিত পানীয়টির নামণ্ডচা। যার আদি নিবাস চীন। ১৬৫০ সালে এ তরল সুন্দরীর বিদেশভ্রমণ তথা বাণিজ্যিকভাবে বিশ্বভ্রমণ শুরু। ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় বাণিজ্যিক লক্ষ্যে চা বাগানের যাত্রা শুরু। যতোই দিন যাচ্ছে চায়ের জনপ্রিয়তা তথা চাহিদা বাড়ছে। দেহ-মনকে চাঙ্গা করা অথবা অতিথি আপ্যায়নে চায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। গোত্রবিচারে চা তিন প্রকারের। গ্রীন-টি বা সবুজ চা, ব্ল্যাক-টি বা কালো চা এবং উলং-টি। তবে আমাদের দেশে উৎপাদিত চা দু প্রকারে। সবুজ চা এবং কালো চা। নামে যা-ই হোক জনপ্রিয়তার তেমন হের-ফের নেই।

চায়ে আমিষ, শর্করা বা স্নেহ-জাতীয় উপাদান নেই বিধায় এ থেকে আমরা কোনো ক্যালরী পাই না সত্য-তবে চা বহু গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজ লবণের উৎস। এতে রয়েছে ক্যারোটিন, যা ভিটামিন এ-এর অগ্রদূত; থিয়ামিন তথা ভিটামিন-বি-১; রিবোফ্লোবিন অর্থাৎ ভিটামিন-বি-২; নিকোটিন এসিড, প্যান্টোথেনিক এসিড; অ্যাসকরবিক এসিড তথা ভিটামিন-সি; ফলিক এসিড; ম্যাঙ্গানিজ; পটাশিয়াম এবং ফ্লোরাইড। এতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকাতে আমাদের দেহ কোষের ফ্রি রেডিকেলগুলোর বিরূপ প্রতিক্রিয়াগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে আমাদের দেহকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ফ্রি রেডিকেল হলো আমাদের দেহের অভ্যন্তরে থাকা ভাঙ্গা তথা অকার্যকর অক্সিডেন্টের অণু, যা দেহের অভ্যন্তরীণ আবর্জনার মতো। আর এ জমানো আবর্জনা আমাদের দেহে ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায়। আর এ আবর্জনা হৃদপিণ্ডের রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে এবং দেহে ক্ষতিকর কোলেস্টরেলের সহায়তায় হৃদপিণ্ডের রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধে এবং হৃদাক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। চায়ে বিদ্যমান পলিফেনস ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন-ই এন্টিঅক্সিডেন্টের ক্ষমতাকে ২০ থেকে ৩০ গুণ বাড়িয়ে দেয়।

চায়ে বিদ্যমান ক্যাফিন দেহকে উত্তেজিত করে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। চায়ের সাথে দুধ না খাওয়াই ভালো। কারণ দুধের মিশ্রণে চায়ের ফ্লেভনয়েডের মাত্রা কমে যায়। এতে দাঁতের ক্ষতি হয়।

এক নজরে চায়ের উপকারিতা

* চায়ে থিয়াফ্লুবিন ও পলিফিনল থাকাতে ফ্লু-জাতীয় ভাইরাস অকার্যকর হয়ে যায়। সর্দি, কাশি এবং ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রতিরোধ ও উপশম হয়।

* চা পান করলে দেহের ত্বক ও চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ে। কারণ চায়ে টেনিন থাকাতে ভিটামিন-সি’র ধারণক্ষমতা বাড়ে।

* চা-ক্যাফিনসমৃদ্ধ হওয়ায় দেহের অবসন্নতা ও ক্লান্তি দূর করে দেহ-মনকে সতেজ করে কর্মস্পৃহা, চিন্তাশক্তি ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে।

* চা মানবদেহের ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

* চায়ে থিয়ারুবিন থাকার কারণে দেহের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস জাতীয় জীবাণু ধ্বংসে আমাদের চৌকষ র‌্যাবের মতো ভূমিকা পালনে সক্ষম।

* চাকে বলা যেতে পারে হৃদপিণ্ডের ‘এলিট ফোর্স’। চায়ে বিদ্যমান ফ্লেভারনয়েডস, ফ্লেভানলস, কেটমিনস এবং ক্যাফিন আ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতির ফলে রক্তে জমাট বাঁধা এবং ব্লাড ক্লোলেস্টরেল কমায়। হৃদপিণ্ড স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ, হৃদপিণ্ড সচল রাখা এমনকি উল্লেখযোগ্যভাবে স্ট্রোক প্রতিরোধ করে।

* নিয়মিত চা পান করলে চামড়ার উপর টিউমার, লিভার, ফুসফুস ও প্যানক্রিয়াসের টিউমার গঠন প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

* শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে।

* শরীরের বাতজনিত ব্যথা এমনকি যে কোনো বাত রোগের মহৌষধ।

* যেহেতু চায়ে ফ্লোরাইড থাকায় দাঁতের ক্ষয়রোধ, দাঁতের প্লাক ফরমেশন, দাঁত ও মাড়িকে শক্তিশালী করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

* মাথা ব্যথা, চোখের ব্যথা, হাড়ের সন্ধিস্থলের ব্যথা প্রশমনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

* বহুমূত্র রোগীদের গ্লুকোজ তথা শর্করা-জাতীয় খাবারের সহ্যক্ষমতা বাড়ায়।

* চায়ে বিদ্যমান ফ্লেভানয়েডস সূর্যালোকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দেহকে রক্ষা করে।

* চায়ে বিদ্যমান খনিজ উপাদান ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক পটাশিয়াম শিশু-কিশোরদের হাড় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

* বাধর্ক্যজনিত রোগ যথা চোখের পানি পড়া, দেহের চামড়া ভাঁজ পড়া, প্রতিরোধ করে তথা দেহে দেরীতে বাধর্ক্য আনয়ন করে।

তবে সব কিছুরই পরিমাণ এবং সময় নির্ধারিত থাকা উচিত। খাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে এবং খাওয়ার একঘণ্টা পরে চা খাওয়া উচিত। খাওয়ার সাথে সাথে চা খেলে হিতে বিপরীত হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে সামান্য মুড়ি বা বিস্কুটসহ চা পান করলে শরীর-মন চাঙ্গা হয়ে যাবে। এরপর সকাল সাড়ে দশটা-এগারটার দিকে সামান্য নাস্তার সাথে চা পান মনোদৈহিক সতেজতার জান্য উপকারী। রাতে ১০টা ১১টায়ও চা পান করা যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত চা পান করা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। দুধ-বিহীন লাল চা-এর সাথে যদি আদা, তেজপাতা, লং, এলাচি দেয়া যায় তাহলে তা মানবদেহের জন্যে বিশেষ উপকারী হিসেবে পরীক্ষিত। সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা, এলার্জি বাসা বদলাতে বাধ্য। সবাই সুস্থ থাকুন-ভালো থাকুন।

তথ্যসূত্র : পটার এন.এল.-ফুড সাইন্স ও রিক পার্কার ইনট্রাডাকশন টু ফুড সার্ভিসেস।

আহমেদ উল্লাহ ভূইয়া : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আয়কর আইনজীবী।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়