সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২২, ০০:০০

ইটিং অর্ডার : খাদ্য গ্রহণের ধারাক্রম

ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া

ইটিং অর্ডার : খাদ্য গ্রহণের ধারাক্রম
অনলাইন ডেস্ক

রন্ধন একটা শিল্প হলেও খাদ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া হলো বিজ্ঞান। কাজেই খাদ্যগ্রহণের সময় কোনটার পর কোনটা খাবো কিংবা কোন্ খাবারের সাথে কোন্ খাবার খাওয়া যায় না তা আমাদের জানা উচিত। এতে হজমপ্রক্রিয়া যেমন সুসম্পন্ন হয়, তেমনি পুষ্টিপ্রক্রিয়াও সম্পূর্ণতা পায়। গ্রামে-গঞ্জে একটা প্রবাদ চালু আছে, আনারস আর দুধ একসাথে খাওয়া যায় না। কথাটি শোনামাত্রই উড়িয়ে দিলেও খাদ্যগ্রহণের বিজ্ঞান দিয়ে বিবেচনা করলে তা আমাদের মনে যথেষ্ট ভাবনা তৈরি করে বৈকি। আসলে কোন্ খাবারের পরে কোন্ খাবার খাওয়া উচিত, কিংবা কোন্ খাবারের সাথে কোন্ খাবার খাওয়া যাবে না তা আমাদের জেনে নেয়া কর্তব্য।

আমাদের পাকস্থলী ও অন্ত্রে খাবার হজম হওয়ার জন্যে বিভিন্ন পরিবেশের প্রয়োজন হয়। কোন্ খাদ্য অম্লীয় পরিবেশে, কোন্ খাদ্য ক্ষারীয় পরিবেশে এবং কোন্ খাবার নিরপেক্ষ পরিবেশে হজম হয়। এই পরিবেশ তৈরিতে খাদ্যমণ্ডের রাসায়নিক পিএইচণ্ডএর মান অত্যন্ত জরুরি। পাকস্থলী ও অন্ত্রে পিএইচণ্ডএর মান সাত হওয়া মানেই নিরপেক্ষ পরিবেশ। আর সাতের নিচে হলে তা অম্লীয় এবং সাতের উপরে হলে তা ক্ষারীয় পরিবেশ বলেই বিবেচিত হয়। খাদ্যবিজ্ঞানীরা পরিপাকের জন্যে প্রয়োজনীয় পিএইচ অনুয়ায়ী খাদ্যকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা :

১. অম্লীয় বা এসিডিক খাদ্য : প্রোটিন জাতীয় খাদ্য যেমন : মাছ, মাংস, দুধ ও দুধ-জাতীয় খাদ্য ইত্যাদি।

২. ক্ষারীয় বা অ্যালকালাইন জাতীয় শর্করা বা স্টার্চ খাদ্য যেমন : ভাত, আলু, রুটি ইত্যাদি।

৩. নিরপেক্ষ খাদ্য যেমন : ফল, সবজি, চর্বি ও চর্বি-জাতীয় খাবার, বাদাম ইত্যাদি।

হে-ডায়েট

খাদ্যগ্রহণের ধারাক্রম বা ইটিং অর্ডার নিয়ে বিজ্ঞানী হে একটি তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। এই তত্বটি বেশ ভালোভাবে গৃহীত হলেও এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে আজও বিভাজিত মতামত রয়েছে। হে-তত্ত্ব অনুযায়ী প্রণীত হয় হে-ডায়েট।

হে-ডায়েট হচ্ছে একটা পুষ্টি-পদ্ধতি, যা নিউইয়র্কের ফিজিশিয়ান উইলিয়াম হাওয়ার্ড হে ১৯২০ সালে প্রস্তুত করেন। তাঁর মতে সকল খাদ্য রাসায়নিক বিক্রিয়াগত দিক থেকে ক্ষারীয়, অম্লীয় বা এসিডিয় এবং নিরপেক্ষ- এই শ্রেণিতে বিভক্ত। এসিডিক খাদ্য ক্ষারীয় খাদ্যের সাথে যুক্ত নয়। এসিডিক খাদ্যগুলো হলো আমিষ জাতীয় বা প্রোটিন। যেমন : মাংস, মাছ, দুগ্ধজাত খাবার ইত্যাদি। ক্ষারীয় পিএইচণ্ডএর খাদ্য হলো কার্বোহাইড্রেট প্রধান, যেমন : ভাত, শস্য, আলু ইত্যাদি। সংযুক্ত খাদ্যের আহারও বলে।

১৯৭০ সালে গ্যারি অ্যা মার্টিন নিউট্রিপ্যাথি নামে একটি তত্ব আবিষ্কার করেন যা হে-তত্বের অনুরূপ। ব্রাইট (উচ্চ রক্তচাপ+নেফ্রাইটিস) রোগে আক্রান্ত হে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্যে গবেষণা করতে করতে একসময় হে-তত্ব আবিষ্কার করেন।

তিনি বলেন, শর্করা-জাতীয় খাদ্য হলো ক্ষারীয় পিএইচণ্ডএর খাদ্য যাদের পরিপূর্ণ হজমে ক্ষারীয় মাধ্যম প্রয়োজন হয়। কিন্তু এদের যদি প্রোটিনের সাথে খাওয়া হয় তবে প্রোটিন এসিডিক পিএইচণ্ডএর হওয়ায় তারা শর্করা জাতীয় খাবারের পিএইচকে প্রশমিত করে ফেলে। ফলে শর্করা খাবারও হজম হয় না, প্রোটিনও হজম হয় না। আবার প্রোটিনকে টক-জাতীয় ফলের সাথে আহার করলে বা অন্য কোনো প্রোটিনের সাথে আহার করলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায় ও পাকস্থলীর হজমে বিঘœ হয়।

‘হে-তত্ত্ব’ মোতাবেক দিনে তিনটা আহার গ্রহণ করা উচিত। এর মধ্যে আহার-১ হবে সম্পূর্ণ ক্ষারীয় পিএইচ সম্পন্ন কার্বোহাইড্রেট জাতীয় আহার। আহার-২ হবে প্রোটিন জাতীয় খাবার, সালাদ, শাকসবজি ও ফল জাতীয় খাদ্য। আহার-৩ হবে শর্করা, সালাদ, শাক-সবজি ও মিষ্টি ফল। এক আহার হতে আরেক আহারের বিরাম থাকবে চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা। তখনকার দিনে রেস্তোরাঁয় হে-বান্ধব খাদ্য তালিকা মোতাবেক খাবার দেয়া হতো।

হে-তত্ত্বের ব্যাখ্যা

কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটি ইত্যাদির সাথে প্রোটিন যেমন মাংস, দুধ ইত্যাদি খাবার খেলে পেটে গ্যাস হয়, পেট ফেঁপে যায়, হজমে দুর্বলতা দেখা দেয় এবং পরিণামে খাদ্যসার শোষণে বিভ্রাট তৈরি হয়। তাই খাদ্য হজম প্রক্রিয়ার সুবিধার্থে খাদ্য সংযোগের নীতিগুলো মেনে চলা উচিত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে।

খাদ্য হজম প্রক্রিয়ার সুবিধার্থে করণীয়

১. খালি পেটে ফল খান। সকালের নাশতায় শুরুতেই ফল খাওয়া বাঞ্ছনীয়।

২. যে সকল ফলে শ্বেতসার নেই তাদের সাথে আমিষ বা প্রোটিন, চর্বি ও শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া যায়। এতে হজম ভালো হয়।

৩. সবুজ শাক-সবজির সাথে প্রোটিন, চর্বি ও শর্করা-জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা যায়।

৪. এক শ্রেণিভুক্ত খাদ্য গ্রহণের কমপক্ষে ৩-৪ ঘণ্টা পরে অন্য শ্রেণিভুক্ত খাবার গ্রহণ করা যাবে।

যা করবেন না

১. একই আহারে শর্করা ও প্রোটিন খাবার গ্রহণ করবেন না। এতে শর্করার ক্ষারীয় পিএইচ প্রোটিনের অম্লীয় পিএইচ দ্বারা নিরপেক্ষ হয়ে যায়।

২. একই আহারে প্রোটিন ও চর্বি-জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করবেন না। এতে নিরপেক্ষ পিএইচণ্ডএর চর্বির হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।

৩. যে সকল খাদ্য আহারে এসিড তৈরি হয় তার সাথে শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করা যাবে না।

৪. আহারে বিভিন্ন জাতের প্রোটিনের সমাহার ঘটাবেন না।

৫. ফল ও শাক-সবজি একই সময়ে খাবেন না।

৬. আহারের সাথে তরল পানীয় গ্রহণ করবেন না।

ইটিং অর্ডার : খাদ্য গ্রহণের ধারাক্রম

ভেজিটেবল এবং প্রোটিন দিয়ে খাবার শুরু করুন। কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা দিয়ে খাবার শেষ করুন। তাতে রক্তে গ্লুকোজের মান নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সকালের নাশতায় মিষ্টি খাবারের চেয়ে সুস্বাদু খাবারের ওপর জোর দিন।

লাঞ্চ ও ডিনারে সবুজ শাক-সবজি, ব্রকলি ইত্যাদি দিয়ে শুরু করুন। সাথে চর্বি-জাতীয় খাবার যেমন : অ্যাভোক্যাডো, বাদাম, অলিভ অয়েল ইত্যাদি। এরপর শর্করা গ্রহণের আগেই প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন। ডেজার্ট জাতীয় খাবার শেষে খান। যদি ¯œ্যাকস হিসেবে স্টার্চ জাতীয় খাবার খান, যেমন : কলা, তাহলে তার সাথে একটু পনির বা আমন্ড বাদাম বা ফাইবার জাতীয় খাবার যোগ করুন যাতে আহারোত্তর গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে। কারণ প্রোটিন কার্বোহাইড্রেট থেকে রক্তধারায় গ্লুকোজ নিঃসরণকে বিলম্বিত করে। এতে রক্তে শর্করার হঠাৎ উচ্চমান রোধ করা যায়। এই ইটিং অর্ডার তাই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্যে বেশ উপযোগী।

যারা স্থূলদেহী, যাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস, তাদের ক্ষেত্রে আহারোত্তর রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয় যদি কার্বোহাইড্রেট খাদ্য গ্রহণের পূর্বে প্রোটিন এবং ভেজিটেবল জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা যায়। এর মাধ্যমে দৈহিক স্থূলতাও রোধ করা যায়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়