প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
কৃত্রিম মেধা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহারে বদলে যাচ্ছে দুনিয়া
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে কম-বেশি আমরা অনেকেই অবগত আছি। তবে যারা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে জানেন না তাদের ক্ষেত্রে বলে রাখি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স হচ্ছে মেশিন দ্বারা প্রদর্শিত বুদ্ধি, সহজ ভাষায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স হচ্ছে প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করা কৃত্রিম মেধা।
এমন এক সময় ছিলো, যে সময়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কাল্পনিক বিষয় ছিলো। তবে বর্তমানে আমরা এই আধুনিক বিশ্বে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে স্বচক্ষে উপলব্ধি করতে পারছি।
ধরুন, আপনি কোনো বিষয় জানতে চাচ্ছেন, আপনার স্মার্টফোনটি থেকে গুগল এসিস্টেন্ট অন করে ওই বিষয় সম্পর্কে বললেই আপনাকে ওই বিষয়ের বিস্তরিত তথ্য সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া হবে। এগুলো হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধির বিশিষ্ট স্মার্ট হেলপার।
বর্তমান সময়ে অনেক কঠিনতর কাজও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর মাধ্যমে অনেক সহজে এবং দ্রুততার সাথে করে ফেলা যাচ্ছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টুলগুলোতে আপনি শুধু কমান্ড করবেন এবং ওই টুলসগুলো আপনার বাকি কার্যক্রম অটোমেটিক্যালি খুব দ্রুত সম্পন্ন করে দেবে।
কাজের ওপর ভিত্তি করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন ন্যারও এআই, আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স এবং সুপার ইন্টেলিজেন্স। বর্তমানে সব থেকে জনপ্রিয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টুলসগুলো হচ্ছে চ্যাট জিপিটি, গুগল ব্র্যান্ড, চ্যাট সনিক, মিডজার্নি, ডাল-ই, প্যারাডক্স, ট্যাব নাইন ইত্যাদি।
অনেকেরই মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর জনক কে? কে এটি তৈরি করেছিল? আমেরিকান বিখ্যাত কম্পিউটার বিজ্ঞানী জন ম্যাকার্থিকে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর জনক বলা হয়ে থাকে। ১৯৪০ সাল থেকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর পথচলা শুরু হয়।
বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রযুক্তিসহ অন্যান্য খাতেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাত রয়েছে যাতে উন্নত কার্যক্রমের ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার করা হয়েছে। নিচে বেশ কিছু ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
১. অনলাইন বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ব্যবহার : আমরা যখন গুগলে বা যে কোনো ধরনের সার্চ ইঞ্জিনে কোনো কিছু লিখে সার্চ করি তা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নজরে রাখে এবং আমাদের চাহিদা কী কী সকল বিষয়বস্তু আমাদের প্রয়োজন, ওই সকল বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে আমাদেরকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। এ কাজটি কিছু সেকেন্ডের মধ্যেই এআই-এর মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। তাহলে বুঝতেই পারছেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে কত দ্রুত একটি জটিল কাজকে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।
২. সোশ্যাল মিডিয়া আপডেট সংক্রান্ত বিষয়ে : আমরা যখন বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ব্যবহার করি, যেমন-ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি। সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে আমরা যে পেজগুলোতে লাইক করি ওই রিলেটেড পেজগুলোই আমাদের সামনে আসতে থাকে। এই কাজটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দ্বারা হয়ে থাকে। আর্টফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স আমাদের সমস্ত অ্যাক্টিভিটি দেখে ওই অনুযায়ী আমাদেরকে বিভিন্ন জিনিস প্রদর্শন করাতে থাকে।
এছাড়াও আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, ধরুন ফেসবুক বা ইউটিউবে আপনি কোনো ধরনের ভিডিও দেখছেন। একটি ভিডিও দেখার পর অটোমেটিক ওই ধরনের ভিডিওই আপনার সামনে চলে আসে অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আমাদের চাহিদা বুঝে ওই অনুযায়ী আমাদেরকে অনেক কিছু প্রোভাইড করে থাকে।
৩. বিজনেস ম্যানেজমেন্টে ব্যবহার : বড় বড় বিজনেস এনালাইসিসের ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহারের কার্যকারিতা অনেক। ব্যবসায়ের তথ্য ইনপুট করার মাধ্যমে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে যাবতীয় লাভণ্ডক্ষতির হিসাব খুব অল্প সময়ে জেনে নেওয়া যাবে। এছাড়াও এটি ভবিষ্যতের অবস্থা, অনলাইন মার্কেটপ্লেসে গ্রাহকরা কী চাচ্ছে অর্থাৎ গ্রাহকদের চাহিদা, কোন জিনিসের চাহিদাটা বেশি এ সমস্ত কিছুর একটি রিপোর্ট তৈরি করে বিজনেস ম্যানেজমেন্টকে পেশ করে থাকে। যার ফলে তারা গ্রাহকদের চাহিদা বুঝতে পেরে এ অনুযায়ী পণ্য বা সেবা গ্রাহকদেরকে প্রদান করে তা থেকে খুব সহজে লাভবান হচ্ছে।
৪. ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার : ব্যাংকিং সেবাতেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার হয়ে থাকে। আমরা তো সবাই এসএমএস পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত আছি। ব্যাংকে কোনো ধরনের লেনদেন বা ট্রানজেকশন সম্পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথেই গ্রাহকদের ফোনে এসএমএস চলে যায়। আর এটি কোনো মানুষ পাঠায় না, প্রসেসটি সম্পন্ন হয় পুরোপুরি অটোমেটিকভাবে। একটি নির্দিষ্ট সফটওয়্যার-এর দ্বারা এই কাজটি অটোমেটিকভাবে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। এর ফলে ব্যাংকিং প্রতারণার হাত থেকে মানুষ মুক্তি পায়।
কোনো কিছুতে সিদ্ধান্ত নিতে মানুষের সময় লাগে, কিন্তু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তা’ সেকেন্ডের মধ্যেই করে ফেলে। তবে এর খারাপ কিছু দিকও আছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে সাইবার আক্রমণ খুব সহজেই করা যেতে পারে। এর ফলে কোনো অসৎ ব্যক্তি অন্যের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে ক্ষতিসাধন করতে পারে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে ব্যবহার করে ক্ষতিকারক বস্তু তৈরি করা যেতে পারে। যেমন পারমাণবিক অস্ত্র, যা আমাদের পুরো বিশ্বকে নিমিষে ধ্বংস করে দিতে পারে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে মানুষকে সহজে ট্র্যাক করা যেতে পারে। এছাড়াও মানুষের সকল এক্টিভিটি পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। আমাদের প্রাইভেসি লঙ্ঘন ঘটবে।
এইআই-এর মাধ্যমে ডিপ ফেকিং করে অন্যের মুখের সাথে আপনার মুখ প্রতিস্থাপন করে বদলে দেওয়া সম্ভব। এটি অসাধু লোকরা ব্যবহার করে অনেকের বিভিন্ন ক্ষতিসাধন করতে পারে।