শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

ফুটবল-ভক্তদের নতুন উপহার উয়েফা কনফারেন্স লীগ
ক্রীড়া প্রতিবেদক ॥

এতদিন আমরা ইউরোপীয় ক্লাব প্রতিযোগিতা বলতে চিনতাম কেবল চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ও ইউরোপা লীগকে। এই তালিকাতে এবার ভাগ বসাতে চলে এসেছে ইউরোপা কনফারেন্স লীগ। ক্লাব র‌্যাংকিংয়ের নিচের সারির দলগুলোকে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতার অভিজ্ঞতা আর আমাদের তাদের খেলার স্বাদ পাইয়ে দিতে উয়েফার নতুন সংযোজন এটি।

কনফারেন্স লীগ ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর তৃতীয় সারির মহাদেশীয় প্রতিযোগিতা। ইউসিএল ও ইউরোপা লিগের পরই এখন এর অবস্থান। এই ২০২১-২২ মৌসুম থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ও ইউরোপা লীগের পাশাপাশি চলবে এটিও।

গত মৌসুমে যখন ইউরোপীয় সুপার লীগ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, ঠিক সে সময় উয়েফা তাদের চলমান প্রতিযোগিতাগুলোয় বেশ কিছু পরিবর্তন আনার ঘোষণা দেয়। এ রকম কিছু পরিকল্পনা আরো আগে থেকেই চলছিল অবশ্য। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ীই এই মৌসুমে উয়েফা ইউরোপা কনফারেন্স লীগের আবির্ভাব। ইউরোপা লীগে এর আগে ৪৮টি দল দিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করলেও এই মৌসুমের এখানে কেবল ৩২টি দল থাকবে। বাকিরা চলে যাচ্ছে এই নতুন কনফারেন্স লীগে। ইউরোপীয় এলিট ক্লাব পর্যায়ের বাইরে যেসব ক্লাব রয়েছে, তাদের মহাদেশীয় ফুটবলের স্বাদ পাইয়ে দিতে এটি প্রভূত ভূমিকা রাখবে।

বস্তুত আগে এটি ইউরোপা লীগ করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে দেখা যায়, যে ৮টি দল চ্যাম্পিয়ন্স লীগ থেকে বাদ পড়ে, তাদের অনেকেই একদম শেষ পর্যন্ত ইউরোপা লীগে দাপট দেখায়। এই ৮ দলের মধ্যে অনেক সময় একদম খুব ভাল মানের দলও চলে আসে। তাই এখন যারা মানের দিক দিয়ে নিচের দিকে থাকবে, তারাই কেবল এই টুর্নামেন্টে থাকবে।

প্রথমদিকে তৃতীয় সারির একটি ক্লাব প্রতিযোগিতার ধারণাটি এসেছিল ২০১৫ সালে। কিন্তু এটি উয়েফার নির্বাহী কমিটির অনুমোদন পেতে পেতে ২০১৮ সাল লেগে যায়। নতুন এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মহাদেশীয় ক্লাব প্রতিযোগিতায় ক্লাবের সংখ্যাও বেড়ে যায়। ২০২১-২২ মৌসুমে শুরু করার পর আপাতত বর্তমান পরিকল্পনা ও ফরম্যাট অনুযায়ী এটিকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নেয়া হবে। ২০২৪ সাল থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফরম্যাট পরিবর্তিত হবে। সেই অনুযায়ী এই কনফারেন্স লীগের ফরম্যাটও পরিবর্তিত হওয়ার কথা।

নতুন এই প্রতিযোগিতা নিয়ে উয়েফার প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার ক্যাফেরিন বলেন,

“আমরা আমাদের প্রতিযোগিতাগুলো আরো বিস্তার করার চেষ্টা চালাচ্ছি, যাতে করে ক্লাব ও তাদের সমর্থকেরা ইউরোপীয়ান প্রতিযোগিতার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। এইজন্যই আমরা এই কনফারেন্স লীগকে সামনে নিয়ে এসেছি। বর্তমানে উয়েফার সদস্য হিসেবে রয়েছে ৫৫টি দেশ। এদের সবার থেকে ক্লাব এনে তাদের ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া এবং আরো বেশি অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া তাই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।“

কনফারেন্স লীগ পরিচালিত হবে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ধাঁচেই। প্রথম মৌসুমটি শুরু হবে বাছাইপর্ব দিয়ে, যা গত জুলাই মাসে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে মূলপর্ব শুরু হবে এই সেপ্টেম্বরেই। পুরো এই গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময়ে ১৮৪টি দল এই বাছাইপর্বে প্রতিযোগিতা করছে। ৫৫টি সহযোগী দেশ থেকেই কমপক্ষে একটি ক্লাবকে এখানে সুযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৪৬টি ক্লাব, যারা ইউরোপা লীগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শেষ পর্বের বাছাই থেকে বাদ পড়বে, তারাও এখানে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে। বাছাইপর্ব শেষে একটি প্লে-অফ রাউন্ড হবে, যেখানে ক্লাবগুলো দু'টি পাথে লড়াই করবে। একটি মেইন পাথ, অন্যটি চ্যাম্পিয়ন্স পাথ। চ্যাম্পিয়ন্স পাথে সেই সব ক্লাব থাকবে, যারা নিজ নিজ দেশের লীগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কিন্তু ইউসিএল ও ইউরোপা লীগে ঐ চ্যাম্পিয়ন্স পাথের বাছাইপর্বে বাদ পড়েছে। বাছাইপর্বটি একটু বিভ্রান্তিকর। ১৬৩টি দল থেকে ২২টি দল বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটি অবশ্য এমন হওয়াই স্বাভাবিক।

এই টুর্নামেন্টে এমন অনেক অপরিচিত দলের সাথে পরিচিত হওয়া যাবে, যাদের খেলা এর আগে ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়মিত অনেক দর্শকই দেখেননি। আবার অনেক দল দেখা যাবে আবারও, যারা হয়তো কয়েক দশক আগে ইউরোপিয়ান কাপে রাজত্ব করেছে, তবে প্রতিযোগিতা ও কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে। বেশ কিছু 'স্ল্যামডগ মিলিয়নিয়ার' গল্পের সাক্ষী হওয়ারও মোক্ষম সুযোগ রয়েছে সামনে।

এই নতুন প্রতিযোগিতাটির ফরম্যাটও হতে যাচ্ছে ইউসিএলের মতো। মূল পর্বে ৩২টি দল ৮টি গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করবে। এরপর হবে একটি নকআউট রাউন্ড প্লে-অফ। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে শেষ ষোল, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল।

শেষ ১৬-তে সরাসরি খেলার জন্য একটি দলকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে হবে। এভাবে ৮টি দল শেষ ১৬তে যাবে। এরপর গ্রুপ রানারআপরা একটি প্লে-অফ রাউন্ড খেলবে ইউরোপা লীগে গ্রুপে তৃতীয় হওয়া দলের সাথে। এখানে যারা জিতবে, তারা চলে যাবে শেষ ১৬-তে। নকআউট পর্বের ম্যাচগুলো স্বাভাবিক নিয়মে ফাইনালের আগ পর্যন্ত দুই লেগে অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রতিযোগিতায় মোট ১৪১টি খেলা অনুষ্ঠিত হবে। ইউরোপা লীগের সাথে মিল রেখে সময় ভাগাভাগি করে সব খেলাই বৃহস্পতিবার হবে।

উয়েফার ন্যাশন্স র‌্যাংকিংয়ে যেসব দেশ ১৫-এর নিচে আছে, ঐসব দেশ থেকে লীগ চ্যাম্পিয়ন ছাড়া অন্য কেউ ইউরোপা লীগ বা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের বাছাইপর্বে খেলতে পারত না। কিন্তু এই কনফারেন্স লীগে তাদের এই সুযোগ রয়েছে। বাছাই প্লে-অফের চ্যাম্পিয়ন্স পাথ থেকে ৫টি দল, মেইন পাথ থেকে ১৭টি দল ও ইউরোপা লীগের বাছাইয়ের শেষ রাউন্ড থেকে বাদ পড়া ১০টি দল নিয়ে মোট ৩২টি দলের প্রতিযোগিতা হবে। প্রথম ৫টি লীগ থেকে কেবল ১টি করে ক্লাব এখানে খেলার সুযোগ পাবে, কিন্তু তাও মূল পর্বে যাবার জন্য তাদেরও প্লে-অফ বাছাই খেলতে হবে।

এই কনফারেন্স লীগের চ্যাম্পিয়ন দল পরের মৌসুমে সরাসরি ইউরোপা লীগের গ্রুপপর্বে খেলার সুযোগ পাবে, যেভাবে ইউরোপা লীগ চ্যাম্পিয়ন সরাসরি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ খেলার সুযোগ পায়।

তবে উয়েফার সিদ্ধান্তগুলোয় যে মাঝে মাঝেই বেশ কিছু খুঁত রয়ে যায়, তা এই টুর্নামেন্টেও উঠে এসেছে। বাছাইপর্বে প্রচুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে উঠলেও গ্রুপপর্বেই তাদের সাথে যোগ দিচ্ছে ইউরোপা লীগের বাছাই থেকে বাদ পড়া দলগুলো। এরপর আবারও দ্বিতীয় রাউন্ডে আসবে ইউরোপায় গ্রুপে তৃতীয় হওয়া দলগুলো। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ থেকেও এইভাবে দলগুলো ইউরোপা লীগে আসে।

এখানে অবশ্য বাণিজ্যিক ব্যাপারটাই বেশি দায়ী। ছোট দলগুলোতে ফোকাস থাকলেও দর্শক-স্পন্সররা চায় অন্তত কয়েকটা হলেও বড় দলকে নিয়ে আসতে। আবার এই সপ্তাহের মাঝের ফিক্সচারে এই খেলাগুলো থাকায় টপ ফাইভ লীগের দলগুলো এর চাইতে তাদের লীগের খেলাগুলোতেই মনোযোগী হবে। কারণ, তাদের সেখানে আরো ভাল সুযোগ রয়েছে টেবিলের উপরের দিকে থেকে ইউরোপা লীগ বা চ্যাম্পিয়ন্স লীগে খেলার।

তবে এই নতুন টুর্নামেন্টে খেলা দলগুলোর জন্য আশীর্বাদ হিসেবে আসছে বিশাল প্রাইজমানি ও টিকেট বিক্রির আয়। কোভিডের জন্য এমনিতেই দলগুলো যেরকম বড় ধরনের আর্থিক সংকটে রয়েছে, তার মোকাবেলায় এই টুর্নামেন্ট তাদের যথেষ্ট সাহায্য করবে বলেই আশা করা হচ্ছে। গ্রুপপর্বে যেসব ক্লাব যেতে পারবে, তাদের জন্য নিশ্চিত তিন মিলিয়ন ইউরোর প্রাইজমানি থাকবেই। বড় দলগুলোর জন্য এটি তেমন বড় কোনো সংখ্যা না হলেও নিচের সারির দলগুলোর জন্য এটি অনেক বড় কিছুই।

তবে বড় দলগুলো হয়তো এই টুর্নামেন্টটিকে তাদের জন্য বাড়তি ঝামেলা হিসেবে দেখতে পারে। প্রতিযোগিতাকে হয়তো বা তারা সেভাবে গুরুত্ব সহকারে নেবে না, বা চাইবে এড়িয়ে যেতে। তবে ব্যক্তি থেকে দল বড়, দল থেকেও বোধহয় ফুটবলটাই বড়। বড় দলগুলো থেকে চোখ খানিকটা সরিয়ে এবার তাই অখ্যাত দলগুলোর লড়াই জমুক। দেখা যাক, কনফারেন্স কাপ আদৌ কতটা সমাধানস্বরূপ অবতীর্ণ হয়!

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়