প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৪, ০০:০০
তৃণমূল থেকে মেধাবী খেলোয়াড় তৈরির লক্ষ্য
ফরিদগঞ্জ ফুটবল একাডেমির প্রশিক্ষণ শুরু
‘ক্রীড়াই শক্তি, ক্রীড়াই বল/মাদক ছেড়ে মাঠে চল’ স্লোগানে শুরু হয়েছিলো ফরিদগঞ্জ ফুটবল একাডেমি। অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, দীর্ঘ বিরতি শেষে ফরিদগঞ্জ ফুটবল একাডেমির আনুষ্ঠানিক অনুশীলন কার্যক্রম ২০ এপ্রিল ২০২৪ শনিবার থেকে শুরু হয়েছে চাঁদপুর স্টেডিয়ামের অত্যন্ত স্বনামধন্য ফুটবল কোচ ও জেলা কোচ ইউসুফ বকাউলের তত্ত্বাবধানে কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে।
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে আবাহনী ক্লাবের ডিফেন্ডার এবং ফরিদগঞ্জ ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রেজাউল করিম রেজা এবং জাতীয় দলের খেলোয়াড় ও আবাহনী ক্লাবের ডিফেন্ডার রিয়াদুল হাসান রাফির আন্তরিকতার পাশাপাশি কড়ৈতলীসহ ফরিদগঞ্জের ফুটবলপ্রেমী একঝাঁক তরুণ, তাদের অভিভাবক এবং সিনিয়রদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসলস্বরূপ ফুটবল প্রশিক্ষণের এই নবদিগন্তের সূচনা হলো।
ফরিদগঞ্জ ফুটবল একাডেমি ফরিদগঞ্জের ফুটবলের হারানো অতীত ফিরিয়ে আনতে প্রান্তিক পর্যায়ের উদীয়মান খেলোয়াড়দের একটি প্লাটফর্ম হিসেবে গত দু বছর পূর্বে কাজ শুরু করে। শৈল্পিক ও ছন্দময় ফুটবল খেলার জন্যে প্রান্তিক পর্যায়ের খেলোয়াড় সংগ্রহের যে লক্ষ্যে একাডেমিটি নেমেছিলো তার চেয়েও তিনগুণ সাড়া পেয়েছে। এই উদ্যোগের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে (রেজা তুমি একা নও-আমরা আছি তোমার সাথে) এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের আরেক কিংবদন্তি রিয়াদুল হাসান রাফিসহ ফরিদগঞ্জের একঝাঁক তরুণ খেলোয়াড়। প্রতিষ্ঠাতা সদস্যবৃন্দসহ একঝাঁক ফুটবল খেলোয়াড় ফরিদগঞ্জের প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে ৯-১৭ বছরের সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় সংগ্রহের জন্যে শত ব্যস্ততার মাঝেও বিনা পারিশ্রমিকে, নিজ অর্থে, তাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে, তাদের নিজস্ব পেশার কিছুটা ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নিরলসভাবে পরিশ্রম করছেন। যার ফলও ইতোমধ্যে আমরা পেয়েছি। ইতোমধ্যে একাডেমির ৬ জন খেলোয়াড় বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্লাবে খেলার সুযোগ পেয়েছে।
অবশেষে দীর্ঘ ৬ মাস প্রতীক্ষার প্রহর শেষে ১১ এপ্রিল শুক্রবার বিকেলে কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একাডেমির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও ফরিদগঞ্জ ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রেজাউল করিম রেজার সভাপতিত্বে ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রাজন চন্দ্র দের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন ৮নং পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হোসেন আহমদ রাজন, কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ফারুক হোসেন মিয়াজী, ৮নং পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য সেলিম জিতু, সমাজসেবক ও কন্ট্রাক্টর মোঃ আবুল হোসেন ভূঁইয়া, সমাজসেবক মোঃ নজরুল ইসলাম চৌধুরী, প্রবাসী ও সমাজসেবক মোঃ হুমায়ুন দর্জি, সমাজসেবক নজরুল ইসলাম স্বপন, কড়ৈতলী সূর্যতরুণ ক্লাবের সভাপতি মোঃ শহিদুল্লাহ্ স্বপন, ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মোঃ আব্দুর রহমান রুবেল, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মোঃ রাশেদ খান মানিক, সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী মোঃ রুবেল হোসেন, প্রবাসী ও সমাজসেবক মোঃ আদনান ফাহাদ, কড়ৈতলী সূর্যতরুণ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাসুদুর রহমান, সহ-সভাপতি ফয়সাল আহমেদ সোহেল, ফরিদগঞ্জ ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আসিফুর রহমান ছোটন, আনোয়ার হোসেন সজীব, মোঃ শাখাওয়াত হোসেন, মোঃ জসীমউদ্দিন রনি, মোঃ আকবর হোসেন, দীন মোহাম্মদ সোহেল, জিয়াউর রহমান জিয়া, সেবার আলো সামাজিক সংগঠনের সভাপতি মাহিদুল ইসলামসহ কড়ৈতলী সূর্যতরুণ ক্লাবের সদস্যবৃন্দ ও এলাকার তরুণ সমাজের একাংশ।
ফুটবল অনুরাগী বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে বক্তারা আলোচনার মাধ্যমে ফরিদগঞ্জ ফুটবল একাডেমি নিয়ে সবার মতামতের ভিত্তিতে কার্যক্রম শুরুর অভিমত প্রকাশ করেন। পাশাপাশি সবাই একাডেমির কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনার জন্যে আর্থিক, মানসিক ও শারীরিকভাবে পাশে থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। তারা বলেন, তরুণ সমাজকে মাদকমুক্ত রাখতে এবং কিশোর গ্যাং থেকে সমাজকে মুক্ত রাখতে ফুটবল ও খেলাধুলা চর্চার বিকল্প নেই। তারা মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে একাডেমিকে সার্বজনীন হিসেবে ঘোষণা করেন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রেজাউল করিম রেজা। তিনি বলেন, গত ৬ মাস একাডেমির কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর নতুনভাবে কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রায় ৪৫ জন প্রশিক্ষণার্থীর অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে এই প্রশিক্ষণ। আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি কড়ৈতলী স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সম্মানীয় সভাপতি, সদস্যবৃন্দ, সাবেক প্রধান শিক্ষক, অন্যান্য শিক্ষকসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের প্রতি। যাঁদের সহযোগিতায় আমাদের এই কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা রেখেছে তাঁদের সকলকে ফরিদগঞ্জ ফুটবল একাডেমির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করছি আগামীদিনেও প্রতিটি ভালো কাজে সবার উপস্থিতি ও সহযোগিতা পাবো।
যে স্বপ্ন নিয়ে রেজাউল করিম রেজার নেতৃত্বে সদস্যবৃন্দ ফরিদগঞ্জ ফুটবল একাডেমি গঠন করেছে সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে রেজাউল করিম রেজা সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এক সাক্ষাৎকারে রেজা জানান, আমার তাকে দরকার যে নিজে পাগল ফুটবল খেলার জন্যে। যে তার ধ্যানে জ্ঞানে, শয়নে-স্বপনে এবং জাগরণে ফুটবলকে ভালোবাসেন। যার পায়ে জুতা নেই, মোজা নেই, বল নেই কিন্তু সে পুরো পৃথিবীকে বল ভেবে লাথি মারছে, আমি তাকে খুঁজছি। আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত অন্যায় কাজ বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি যুবক ও তরুণ সমাজের একাংশ মাদক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত হচ্ছে। তাই আমরা ফরিদগঞ্জের প্রতিটি ইউনিয়নে প্রচারণা চালিয়েছি। যার ফলস্বরূপ আমরা বেশ সাড়া পেয়েছি। এখনো বেশ সাড়া পাচ্ছি। আমার একটা স্বপ্ন এই একাডেমির খেলোয়াড়রা একদিন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে খেলার সুযোগ পাবে। আমার বিশ্বাস, আপনাদের সকলের সহযোগিতায় এই একাডেমিটি সমগ্র চাঁদপুর জেলা তথা বাংলাদেশে খেলোয়াড় তৈরির কারখানা হবে। আমার মতো বহু রেজা এই একাডেমি থেকে বের হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এই একাডেমিটি সামাজিক দায়বদ্ধতার একটি অংশ। এলাকার বিত্তবানদের সহযোগিতা, আমার, রাফির ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের সহযোগিতায় এই একাডেমিটি পরিচালিত হচ্ছে। প্রতি মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা একাডেমির পরিচালনায় ব্যয় হচ্ছে। চাঁদপুর স্টেডিয়ামের একজন স্বনামধন্য কোচ নিয়মিত খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। খেলোয়াড়রাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিদিন প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। আপনাদের সন্তানদের উজ্জ্বল ও মাদকমুক্ত ভবিষ্যতের নিশ্চয়তায় একাডেমির এই প্রয়াসের অংশ হিসেবে আপনাদের অংশগ্রহণ ও সার্বিক সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি। আমাদের একাডেমির লক্ষ্য দেশের ফুটবলের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা। ঢাকার বড়ো বড়ো পেশাদার লিগেও আমাদের একাডেমির ফুটবলাররা যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে খেলার সুযোগ পাবে বলে আমি আশা করি। আমাদের একাডেমির প্রশিক্ষকও চাঁদপুরের স্বনামধন্য একজন ফুটবল কোচ। তাঁর কোচিং দক্ষতা অসাধারণ।
একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে অন্যতম সদস্য বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অন্যতম খেলোয়াড় রিয়াদুল ইসলাম রাফি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, গ্রামীণ ফুটবলকে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে মূলত রেজার নেতৃত্বে আমরা এই একাডেমিটি প্রতিষ্ঠা করি। ইতোমধ্যে আমরা একাডেমি থেকে বেশ ফলও পেয়েছি। আমাদের একাডেমির ৬ জন খেলোয়াড় ইতোমধ্যে কয়েকটি ক্লাবে খেলার সুযোগ পেয়েছে। ভবিষ্যতে এই একাডেমি থেকে আরো বেশি খেলোয়াড় বের হবে। আমার বিশ্বাস, জাতীয় ফুটবল দলেও এই একাডেমি থেকে খেলোয়াড়রা সুযোগ পাবে। বেশ দূর-দূরান্ত থেকে বহু খেলোয়াড় এসে এই একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। সত্যি আমার খুবই ভালো লাগছে, অনেকেই আজ আমাদের এই একাডেমির জন্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে একাডেমির কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী করতে আপনারা সবসময় আমাদের পাশে থাকবেন এই কামনা করছি।
৮নং পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ সেলিম জিতুকে সাথে করে ইউনিয়নের সুযোগ্য ও খুবই জনপ্রিয় চেয়ারম্যান তরুণ সমাজের আইকন এবং ক্রীড়াবান্ধব ব্যক্তি শেখ হোসেন আহমেদ রাজন ফরিদগঞ্জ ফুটবল একাডেমির প্রশিক্ষণ পরিদর্শনে আসেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানান, এই ইউনিয়নে এমন একটি একাডেমি করায় আমি উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমি অত্যন্ত আনন্দিত এই ইউনিয়নের বেশ কিছু প্রতিভাবান ফুটবলার নিয়মিত অনুশীলনে অংশগ্রহণ করে আসছে। এমনকি ফরিদগঞ্জসহ বেশ কিছু এলাকা থেকে অনুশীলনে আসছে খেলোয়াড়রা। এই এলাকার কৃতী সন্তান রেজাউল করিম রেজা বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ছিলেন। ফরিদগঞ্জ উপজেলার ফুটবলের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনা তথা তৃণমূল পর্যায় থেকে ফুটবল খেলোয়াড় তৈরির লক্ষ্যে রেজা যে উদ্যোগ নিয়েছেন সত্যিই তা প্রশংসার দাবিদার। মাদকের হাত থেকে যুব সমাজকে রক্ষার জন্যে এই ফুটবল একাডেমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই ইউনিয়নের সকল অভিভাবকের উচিত তাদের সন্তানদের এই একাডেমিতে ভর্তি করানো। আমার বিশ্বাস, এভাবে একাডেমিটি চলতে থাকলে একদিন এই একাডেমির খেলোয়াড়রা বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্লাবে এমনকি জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাবে। আমি আমার পক্ষ থেকে এই একাডেমির জন্যে সার্বিক সহযোগিতা করবো। একাডেমির উন্নয়নে এলাকার বিত্তবান সবাইকে সার্বিক সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি একাডেমির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
চাঁদপুর স্টেডিয়ামের অন্যতম ফুটবল প্রশিক্ষণ কোচ মোঃ ইউসুফ বকাউল এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় রেজা ও রাফির যে উদ্যোগ তা খুবই প্রশংসনীয়। একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে এমন একটি একাডেমি, যা এই সমাজকে যে কোনো অন্যায় ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমি দীর্ঘ প্রায় ২ বছর যাবৎ একাডেমির প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। একাডেমির খেলোয়াড়রা খুবই উদ্যমী এবং খুবই পরিশ্রমী। আমার বিশ্বাস, এই একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেওয়া তৃণমূলের মেধাবী খেলোয়াড়রা ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে খেলার মাধ্যমে তাদের প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ পাবে।
এ ব্যাপারে কড়ৈতলী সূর্য তরুণ ক্লাবের সভাপতি শহীদুল্লাহ স্বপন বলেন, রেজা, রাফি ও অন্য সদস্যরা প্রান্তিক পর্যায়ে ফুটবল খেলাকে আরো জমজমাট করার জন্যে যেভাবে কাজ করছে, সত্যিই তা প্রশংসার দাবিদার। আমি সবসময় তাদের পাশে থাকবো। আমার বিশ্বাস ফরিদগঞ্জ ফুটবল একাডেমি আগামী প্রজন্মের কাছে আলো ছড়িয়ে দিবে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি ফরিদগঞ্জ ফুটবল একাডেমির উদ্যোগই পাল্টে দিবে পুরো সমাজের চিত্র। যে সমাজে থাকবে না কোনো মাদক, থাকবে না কোনো অন্যায়, থাকবে না কোনো মারামারি, থাকবে না কোনো চুরি-ডাকাতি। কড়ৈতলী সূর্যতরুণ ক্লাব সবসময় ফরিদগঞ্জ ফুটবল একাডেমির পাশে থাকবে। আমি আমার সাধ্যমতো একাডেমিকে সহযোগিতা করে যাবো ইনশাআল্লাহ।
কড়ৈতলী সূর্যতরুণ ক্লাবের সহ-সভাপতি মুহম্মদ ফয়সাল আহমেদ সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাসুদুর রহমান ও একাডেমির অন্যতম সহযোগী রিয়াদ হোসেন রনি বলেন, এই একাডেমিটি ফরিদগঞ্জে ফুটবলের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমরা সবসময় একাডেমির পাশে থাকবো। রেজা, রাফি ও অন্যান্য উদ্যোক্তা যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে একাডেমিটি প্রতিষ্ঠা করেছেন, আমাদের বিশ্বাস, এই একাডেমি সারা চাঁদপুর জেলায় ফুটবলার তৈরির কারখানা হবে। এই একাডেমির প্রশিক্ষণার্থী খেলোয়াড়রাও খুবই দক্ষ। কোচও খুবই ভালো মানের। একাডেমিতে সন্তানদের ভর্তি করানোর জন্যে অভিভাবকদের অনুরোধ করেন। একাডেমি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এ পর্যায়ে আনতে যাঁরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন সবাইকে একাডেমির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের বিশ্বাস, এই একাডেমি থেকে আমরা ভালো কিছু ফুটবল খেলোয়াড় পাবো। একাডেমিতে সুযোগ পাওয়া বেশির ভাগ ছেলেই উঠে এসেছে প্রান্তিক পর্যায় থেকে নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে। আমি প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করছি, বড়ো ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন ওদের চোখে। আশা করি এই একাডেমির খেলোয়াড়রা আগামী দিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্লাবে এমনকি জাতীয় ফুটবল দলে খেলবে। আমরা সেভাবেই তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। আজ থেকে বিশ-পঁচিশ বছর আগে বাংলাদেশের ফুটবলকে সোনালি দিন হিসেবে অভিহিত করা হতো। সে সময় ফুটবল বাংলাদেশের অন্যতম বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত ছিলো। তখন স্টেডিয়ামভর্তি দর্শক ছিলো। গ্রামগুলোতে তখন ফুটবল ছিলো খুবই জনপ্রিয় খেলা। গ্রামে কোনো একটি মাঠে যদি ফুটবল খেলা হতো তাহলে দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শক চলে আসতো খেলা দেখার জন্যে। আজ কয়েক বছর হলো বিভিন্ন কারণে ফুটবলের ঐতিহ্য ম্লান হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যে সরকার নানা সময়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড় তৈরির উদ্দেশ্যে।
তারা বলেন, ফুটবল খেলোয়াড়দের জন্যে প্রশিক্ষণ একটি বড় বিষয়। কিন্তু প্রশিক্ষণের জন্যে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন তা পূরণের জন্যে রেজা যথেষ্ট শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। ফুটবলের যে হারানো ঐতিহ্য সেই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার জন্যে রেজা ও রাফির নেতৃত্বে একঝাঁক তরুণ এগিয়ে এসেছে।
রেজাউল করিম রেজার সাথে ফরিদগঞ্জ ফুটবল একাডেমির বিষয়ে আলোচনাকালে তিনি জানান, কোরবানি ঈদের পরপরই শুধুমাত্র ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের খেলোয়াড়দের নিয়ে অঞ্চলভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হবে। রেজা ফরিদগঞ্জ উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ের অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তাদের সন্তানদের ফরিদগঞ্জ ফুটবল একাডেমিতে ভর্তি করানোর জন্যে। আমরা আশা করছি, বর্তমান সময়ে মাদকের যে ভয়াবহতা তা থেকে পরিত্রাণ পেতে ফুটবল প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। এমনকি ফরিদগঞ্জ ফুটবল একাডেমি সমাজ থেকে মাদক নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ফুটবলের মানোন্নয়নের জন্যে আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি। ফরিদগঞ্জ ফুটবল একাডেমি যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমরা আশা করছি ফরিদগঞ্জ ফুটবল একাডেমি একদিন পুরো বাংলাদেশে আলো ছড়াবে। কড়ৈতলী সূর্যতরুণ ক্লাবের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় স্কুল মাঠে ফুটবলাররা এখানে নিয়মিত অনুশীলন করে। যার ফলে জেলার বিভিন্ন বয়সভিত্তিক ও জেলার বিভিন্ন টুর্নামেন্টে একাডেমির বেশ কিছু প্রতিভাবান ফুটবলার নিয়মিত অংশগ্রহণ করে আসছে। ফরিদগঞ্জ ফুটবল একাডেমি খেলোয়াড়দের অনুশীলন করানোর পাশাপাশি বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে খেলোয়াড়দের প্রতিভা ও মানসিক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। একাডেমিতে খেলোয়াড় ভর্তি চলছে। আপনারা আপনাদের সন্তানদের একাডেমিতে ভর্তি করাবেন এই প্রত্যাশা করছি। খেলোয়াড় ভর্তির জন্যে যোগাযোগ : ০১৭১৭-২১২০১৪, ০১৬৮৬-৫২৪১৪১, ০১৬৮৪-৮২২২৪৮।
লেখক : রাজন চন্দ্র দে, ক্রীড়া লেখক ও বিতর্ক সংগঠক।