প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
ইংলিশ চ্যানেলজয়ী সাঁতারু আবদুল মালেক
----------------মুহাম্মদ ফরিদ হাসান----------------
‘পূর্ব পাকিস্তানের দূরপাল্লার নয়া সাঁতারু আবদুল মালেক ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমের জন্যে ইংল্যান্ড যাত্রা করেছেন। এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার ২০ হাজার টাকার বৈদেশিক মুদ্রা মঞ্জুর করেছেন। মালেক তার ম্যানেজারসহ ১৫ মে ঢাকা ত্যাগ করেন।’- এ সংবাদটি ১৯৬৫ সালে মাসিক মোহাম্মদীতে প্রকাশিত হয়। তখনো কেউ নিশ্চিত হননি সাঁতারের জন্যে ঐতিহাসিক ও বিখ্যাত ইংলিশ চ্যানেলটি আবদুল মালেক অতিক্রম করতে পারবেন। এমন সন্দেহের কারণ বিরূপ আবহাওয়া এবং অবিরাম সাঁতার। কিন্তু আবদুল মালেক সকল আশঙ্কা দূরে ঠেলে অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়ে ইংলিশ চ্যানেল জয় করলেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে কম সময়ে সাঁতার সমাপ্ত করেন। ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করতে তাঁর সময় লেগেছিল মাত্র ১৩ ঘণ্টা ৪২ মিনিট।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এ সাঁতারু চাঁদপুর সদরের তরপুরচণ্ডী গ্রামের কৃতীসন্তান। তাঁর জন্ম ১৯৩৮ সালের ৪ অক্টোবর। বাবা আবদুল জলিল মিয়া। তিনি হাসান আলী হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক (১৯৫২), চাঁদপুর কলেজ থেকে আই.কম (১৯৫৪), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.কম (১৯৫৯) ও এম.কম (১৯৬০) পাস করেন। তিনি প্রথমে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। পরে চট্টগ্রামের পোর্ট অফিসার এবং সর্বশেষ সরকারি কৃষি বিভাগে এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ছাত্রজীবন থেকেই আবদুল মালেক ক্রীড়ামোদী ছিলেন। তিনি চাঁদপুর কলেজের হয়ে আন্তঃকলেজ এবং আন্তঃবিভাগ সাঁতার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। সাঁতারে তাঁর কৃতিত্ব অবিস্মরণীয়। তিনি দেশে ও বিদেশে অসংখ্য সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। পেয়েছেন বহু পুরস্কার। এরমধ্যে ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান অলিম্পিক গেমসে সাঁতারে দুটি স্বর্ণ ও একটি রৌপ্যপদক, ১৯৫৭ সালে পাকিস্তান জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক, ১৯৫৯ সালে ঢাকা জাতীয় সুইমিং পুলে ৬০ মাইল সাঁতারের বিশ্বরেকর্ড, ১৯৬০ সালে পাকিস্তান অলিম্পিক গেমসে স্মারক স্বর্ণপদক, ১৯৬২ সালে ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতারে প্রথম, ১৯৬৩ সালে ইতালিতে ‘কেপরী-নেপলস’ সাঁতারে বিশ্বের চতুর্থ ও এশিয়ায় প্রথম, ১৯৬৪ সালে নারায়নগঞ্জ-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতারে প্রথম, ১৯৬৫ সালে দাউদকান্দি-নারায়নগঞ্জ দূরপাল্লার সাঁতারে প্রথম স্থান অর্জন উল্লেখযোগ্য। তিনি জাপানে অনুষ্ঠিত এশিয়া অলিম্পিকেও অংশ নিয়েছিলেন।
আবদুল মালেক ছাত্রজীবনে সাঁতার ছাড়াও দৌড়, ফুটবল, পোলবোল্ট প্রতিযেগিতায় অংশ নিতেন। এসব প্রতিযোগিতায় নিয়মিত চ্যাম্পিয়নও হতেন। তিনি সলিমুল্লা মুসলিম হলের ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধেও তিনি পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখেন।
আবদুল মালেক ১৯৬৫ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। লন্ডনের ডোবার কেন্টে তিনি সাঁতারের কোচ ছিলেন। ১৯৮৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনি লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি তাঁকে নিজগ্রামে দাফন করা হয়। তাঁর সম্মানার্থে চাঁদপুর স্টেডিয়ামের প্রথম প্যাভিলিয়নের নাম ‘সাঁতারু আবদুল মালেক প্যাভিলিয়ন’ রাখা হয়েছে।
সূত্র : রত্নগর্ভা চাঁদপুর, সম্পাদনা : মোহাম্মদ সফিউল আলম, আমাদের চাঁদপুর প্রকাশনী, প্রথম প্রকাশ ২০০৭, পৃ. ৫৫-৫৬ মাসিক মোহাম্মদী, মুজিবুর রহমান খাঁ সম্পাদিত, ভলিয়ম ৩৪, ইস্যু ৪-১২