প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ক্রীড়াকণ্ঠের সাথে আলাপচারিতায় সাবেক ক্রিকেটার ফজলে রাব্বি পাটওয়ারী
স্কুল ক্রিকেটের পাশাপাশি বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলা চালু করতে হবে
প্রাইমারি স্কুলে পড়াবস্থায়ই বাবা ও ভাইয়ের সাথে খেলাধুলায় জড়িয়ে পড়েন। বাবার চাকুরির সুবাদে ছোটকাল থেকেই কুমিল্লায় তার খেলা হাতেখড়ি হয়। অবশ্য কুমিল্লা থেকে এসে প্রাইমারি জীবনের শেষ সময়টুকুতে নিজ জেলা চাঁদপুরে বন্ধুদের এবং বড়োভাইদের সাথে খেলাধুলায় পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন। খেলাধুলা ছেড়ে দিলেও খেলার মাঠ এখনও ছেড়ে যেতে ইচ্ছে হয় না। সুযোগ পেলেই ছুটে আসেন স্টেডিয়াম ও আউটার স্টেডিয়ামে। ব্যবসা করার পাশাপাশি নিজের পরিচালনায় ২য় বিভাগ ক্রিকেট লীগসহ বন্ধুদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে দল গঠন করে মাঠে নামছেন। তিনি হলেন চাঁদপুর জেলা ক্রিকেট দলের সাবেক অলরাউন্ডার ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিত, সাবেক ক্রিকেটার মোঃ ফজলে রাব্বি পাটওয়ারী। বাবা হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ অলিউল্লা পাটওয়ারী ও মাতা হালিমা বেগম। ২ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে ৩য় রাব্বি। স্থায়ী ঠিকানা হাজীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম রাজারগাঁও বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান পাটওয়ারীর বাড়ি হলেও বর্তমানে বসবাস করেন চাঁদপুর শহরের ষোলঘর উপজেলা কোয়ার্টারের পিছনে। তিনি চাঁদপুর শহরের মাতৃপীঠ স্কুলের নিকটস্থ মাতৃছায়া মেডিসিন কর্নারের পরিচালক সহ মাতৃছায়া হাসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চাঁদপুর জেলা হাসপাতাল মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
রাব্বি কুমিল্লায় তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ওই সময় তারা বাবা ব্যাংকার হিসেবে কুমিল্লায় চাকুরি করতেন। পরবর্তীতে তিনি চতুর্থ শ্রেণীতে এসে ভর্তি হন বিষ্ণুদী আজিমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে পাস করে ডিএন স্কুলে ভর্তি হন। ডিএন স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ডিগ্রি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন চাঁদপুর সরকারি কলেজে। ডিএন স্কুলে পড়াকালীন আন্তঃস্কুল ক্রিকেটে তার দল চ্যাম্পিয়ন হয় এবং রাব্বি সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত হন। ব্যবসার পাশাপাশি নিয়মিতই তাকে মাঠে দেখা যায়। তিনি ২০১১ সালে ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল কালামের মেয়ে আফসানা আক্তারের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার বড় ছেলে রাফিন আহম্মেদ পাটওয়ারী পড়াশোনা করছে হাসান আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে এবং ছোট ছেলে রাহিয়ান আহমেদ পাটওয়ারী পড়াশোনা করছেন আইডিয়েল কিন্ডারগার্টেনে। সাবেক এ ক্রিকেটারের সাথে ক্রিকেটসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যে আলাপচারিতা হয়, তার সারাংশ পাঠকদের জন্যে নিচে তুলে ধরা হলো।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আস্সালামুআলাইকুম, কেমন আছেন?
ফজলে রাব্বি পাটওয়ারী : জি¦ আলহামদুলিল্লাহ সকলের দোয়া ও ভালোবাসায় ভালো আছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : খেলাধুলার সাথে জড়িয়ে পড়েন কখন থেকে?
ফজলে রাব্বি পাটওয়ারী : জি¦ আমি তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াবস্থায় খেলার সাথে জড়িয়ে পড়ি। আমি তখন কুমিল্লার বাতাবাড়িয়া এলাকার একটি প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম। আমার বাবা অলিউল্লা পাটওয়ারী ও বড়ভাই ফয়সাল পাটওয়ারীর সাথে বাসার সামনেই ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা শুরু করি। এরপর ’৯৪ সালে চাঁদপুরে এসে বিষ্ণুদী আজিমিয়া স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর এলাকার বড়োভাই ও বন্ধুদের মধ্যে ভুট্টো, হেলাল, সুব্রত, মহসিন পাটওয়ারী, নাহিয়ান, সাখাওয়াত, সাফাউদ্দিন বাবু, মাহবুব গাজী এদের সাথে খেলাধুলায় জড়িয়ে পড়ি। তখন টেপ টেনিস খেলতাম বেশি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ শুরু হয় কোথায়?
ফজলে রাব্বি পাটওয়ারী : আমি যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি তখন পাড়ার বড়ো ভাই ইসমাইল হোসেন আমাকে ক্রিকেট একাডেমীর কোচ শামিম স্যারের কাছে এনে ভর্তি করিয়ে দেন। আমি একাডেমীতে অনুশীলন করার পাশাপাশি জেলা ক্রিকেট দলের হয়ে খেলা শুরু করি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : বিভাগীয় পর্যায়ের ক্রিকেটে?
ফজলে রাব্বি পাটওয়ারী : আমি চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে ২০০২ সালে খেলি। আমাদের দলের অধিনায়ক ছিলেন তখন তামিম ইকবাল। আমি ওই টুর্নামেন্টে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে ভালো করায় পুরস্কারও পেয়েছি। বেশ কিছুদিন চট্টগ্রাম বিভাগীয় দলের হয়ে বিভিন্ন স্থানে খেলার সুযোগ হয়েছে।
ক্রীড়াকণ্ঠ : জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৭ ক্রিকেটে?
ফজলে রাব্বি পাটওয়ারী : আমি ২০০৩ সালে জেলা দলের হয়ে কুমিল্লাতে খেলি। ওই টুর্নামেন্টে আমি ভালো করার কারণে বিভাগীয় পর্যায়ে খেলার ডাক পাই। বিভাগীয় ক্রিকেটে ভালো খেলার কারণে ওই বছরই আমি জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৭ ক্রিকেট দলে প্রাথমিক পর্যায়ে ডাক পাই। পরবর্তীতে বয়সের কারণে আমি আর খেলতে পারিনি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : জেলা ক্রিকেট দল ও কোন্ দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন?
ফজলে রাব্বি পাটওয়ারী : আমি ২০০২ সালে চাঁদপুর ডিসি কাপ ক্রিকেটে চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমীর প্রতিনিধিত্ব করি। এছাড়া ২০০৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত জেলা ক্রিকেট দলের হয়ে নিয়মিত খেলি এবং দলের অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করেছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : ঢাকাতে কোন্ লীগে খেলেছিলেন?
ফজলে রাব্বি পাটওয়ারী : হ্যাঁ, আমি ঢাকায় ২য় বিভাগ ক্রিকেট লীগে বেশ ক’টি ম্যাচ খেলেছি। চাঁদপুরের একমাত্র ক্রিকেট দল হিসেবে ঢাকার ২য় বিভাগ ক্রিকেট লীগে চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমী অংশ নেয়। আমি সেই দলের ক্রিকেটার হিসেবে ঢাকার মাঠে খেলি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : বর্তমান উদীয়মান ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
ফজলে রাব্বি পাটওয়ারী : খেলোয়াড় হতে হলে পরিশ্রমী হতে হবে। খেলাধুলার পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে হবে। পড়ালেখার কোনো বিকল্প নেই। খেলতে এসে কোনোভাবেই পড়ালেখা বন্ধ করা যাবে না।
ক্রীড়াকণ্ঠ : জেলা পর্যায়ে ভালো খেলোয়াড় তৈরির জন্যে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন?
ফজলে রাব্বি পাটওয়ারী : জেলা পর্যায়ে ভালো খেলোয়াড় তৈরি করতে হলে প্রতিনিয়ত ক্রীড়া সংস্থাকে বিভিন্ন ধরনের টুর্নামেন্ট চালাতে হবে। নিয়মিত লীগ ও টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হলে ভালো মানের খেলোয়াড় বের হয়ে আসবে। বেশি বেশি স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজনসহ জেলা ও উপজেলার বয়সভিত্তিক ক্রিকেটারদের নিয়ে ক্যালেন্ডার অনুযায়ী খেলার কর্মসূচি রাখতে হবে। এছাড়া খেলা চলাকালীন কিংবা খেলোয়াড় ছিলো এমন কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন।
ক্রীড়াকণ্ঠ : খেলা ছেড়ে দেয়ার পর আপনি কি দলগঠন করে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন?
ফজলে রাব্বি পাটওয়ারী : আমি ষোলঘর স্পোর্টিং ক্লাব, শেখ জামাল ক্রীড়া চক্র ও মাতৃছায়া ক্রিকেট দল গঠন করে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে ২য় বিভাগ ক্রিকেট লীগে অংশ নিয়েছি। সর্বশেষ আমার পৃষ্ঠপোষকতায় মাতৃছায়া দলটি ২য় বিভাগ ক্রিকেট লীগে খেলে। আমার পরিচালনায় এর আগে ২য় বিভাগ ক্রিকেট লীগে শেখ জামাল ক্রীড়া চক্র রানার আপ হয়। আমরা তো তবুও দল গঠন করে মাঠে নামি। জেলা ক্রীড়া সংস্থার অন্তর্ভুক্ত অনেক ক্লাবই সকল সুযোগ-সুবিধা পেলেও তারা তো দেখা যায় নিয়মিত খেলাধুলায় অংশ নেয় না। আমার মতে প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে যে ক্লাবগুলো অংশ নেয় না, তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হোক। এছাড়াও আমি ২০০২-২০০৪ বন্ধু ব্যাচের ক্রিকেট ম্যাচে মাতৃছায়া দল নিয়ে ৪ বার অংশ নেই। এর মধ্যে একবার চ্যাম্পিয়ন ও ২ বার রানারআপ হয়েছি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : সময় দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ।
ফজলে রাব্বি পাটওয়ারী : জি¦ আপনাকে ও আপনার পত্রিকার সকলের প্রতি রইলো ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।