প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রিকেটে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেট দল
সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির সাথে সাক্ষাতের তারিখ নির্ধারণ
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আয়োজনে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রিকেটে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে চাঁদপুর জেলা অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেট দল। চাঁদপুরের দলটি শুক্রবার চট্টগ্রাম মহিলা কমপ্লেক্স মাঠে লক্ষ্মীপুর অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেট দলকে হারিয়ে বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। চাঁদপুরের দলটি বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলো। দলের খেলোয়াড়, কোচ ও কর্মকর্তাগণ আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর) আসনের সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির সাথে সাক্ষাৎ করবেন। এ সময় জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে তাঁদেরকে শুভেচ্ছাসহ উপহারসামগ্রী তুলে দেয়া হবে বলে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবু নিশ্চিত করেছেন।
এ দলের অনেক খেলোয়াড়ই বিভাগীয় পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১৪ ক্রিকেট দলে খেলেছিলেন। চট্টগ্রাম মহিলা কমপ্লেক্স মাঠে ২৬ জানুয়ারি শুক্রবার বিকেলে চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাউন্সিলর, চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আলহাজ আলী আব্বাস। এ সময় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অন্য সদস্য ও টুর্নামেন্ট কমিটির কর্মকর্তাসহ ফাইনালে অংশ নেয়া দুদলের খেলোয়াড় ও কর্মকার্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ৩টি গ্রুপে অংশ নিয়েছিলো চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলা দল। ‘এ’ গ্রুপে ছিলো ফেনী, নোয়াখালী ও খাগড়াছড়ি জেলা। ‘বি’ গ্রুপে ছিলো চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাঙ্গামাটি ও লক্ষ্মীপুর জেলা এবং ‘সি’ গ্রুপে ছিলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, চাঁদপুর ও বান্দরবান জেলা ক্রিকেট দল। দলগুলোর খেলা হয়েছে নোয়াখালী জেলা স্টেডিয়াম, কুমিল্লা স্টেডিয়াম ও চট্টগ্রাম মহিলা কমপ্লেক্স মাঠে। টুর্নামেন্টের খেলাগুলো শুরু হয়েছিলো ১৫ জানুয়ারি আর শেষ হয়েছে ২৬ জানুয়ারি। মাত্র ১২ দিনে বিভাগীয় পর্যায়ের বয়সভিত্তিক দলের উদ্বোধন ও ফাইনাল শেষ হলেও চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে কোনো টুর্নামেন্ট কিংবা লীগের আয়োজন করা হলে সেটার ফাইনাল শেষ করতে কখনো কখনো বছরও শেষ হয়ে যায়।
চাঁদপুর জেলা অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেট দল ১৬ জানুয়ারি প্রথম ম্যাচ খেলে কক্সবাজারের সাথে। সেই ম্যাচে চাঁদপুর ৯ উইকেটে জয়লাভ করে। ১৭ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাথে খেলে এবং ৪৬ রানে জয় পায়। প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচে কুমিল্লা স্টেডিয়ামে চাঁদপুর অংশ নেয় বান্দরবান জেলা ক্রিকেট দলের সাথে। সেই ম্যাচে চাঁদপুর ৭ উইকেটে জয়লাভ করে বিভাগীয় পর্যায়ের ক্রিকেট টুর্নামেন্টের সেমি-ফাইনালে উঠে। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে ২৪ জানুয়ারি বুধবার চট্টগ্রাম মহিলা কমপ্লেক্স মাঠে টুর্নামেন্টের সেমি-ফাইনালে অংশ নেয় চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ক্রিকেট দল। খেলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাথে ১৮৮ রানে জয় পেয়ে ফাইনালে উঠে চাঁদপুর অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেট দল।
বুধবার টসে জয়লাভ করে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় চাঁদপুর। নির্ধারিত ৪৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে দলটি ২৭৯ রান করে। দলের পক্ষে ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ইমতিয়াজ ৮৬, মাহমুদুল ৭৭, রাতুল ৫৫ ও আবরার রশিদ ৩৪ রান করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ক্রিকেট দল ২৮০ রানের জয়ের টার্গেট নিয়ে খেলতে নামে। তারা ২৬ ওভারে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ৯১ রান করেন। বল হাতে চাঁদপুরের পক্ষে ফারদিন ৪টি, ইমতিয়াজ ও মুনতাসির ২টি করে উইকেট লাভ করেন।
চাঁদপুর জেলা ক্রিকেট দল ২৬ জানুয়ারি শুক্রবার চট্টগ্রাম মহিলা কমপ্লেক্স মাঠে ফাইনালে লড়ে লক্ষ্মীপুর জেলা ক্রিকেট দলের সাথে। লক্ষ্মীপুর জেলা ক্রিকেট দল টসে জয়লাভ করে চাঁদপুর জেলা ক্রিকেট দলকে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানায়। চাঁদপুর দল নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১০৯ রান করে। দলের পক্ষে ব্যাট হাতে ইলিয়াছ সর্বোচ্চ ৪০, ইমতিয়াজ আয়মন ২৭ ও অমিত হাসান ১৭ রান করেন। লক্ষ্মীপুর জেলা ক্রিকেট দল ১১০ রানের জয়ের টার্গেট নিয়ে খেলতে নামে। তারা ১৯ ওভারে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ৯১ রান করেন। চাঁদপুরের পক্ষে বল হাতে ফারদিন ৪ ওভারে ৫ রানে ৩টি, ইমতিয়াজ আয়মন ৩ ওভারে ১২ রানে ২টি ও মুরাদ আলম ৩ ওভারে ১০ রানে ২টি উইকেট লাভ করে। চাঁদপুরের দলটি ১৮ রানে জয়লাভ করে প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৬ বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে বিভাগীয় পর্যায়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বিষয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবু বলেন, ছেলেরা খুব ভালো খেলেছে। ওরা এই টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই প্রত্যেকটি দলের সাথে নিজেদের সেরা খেলাটা দিয়েই দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছে। দলের অনেক খেলোয়াড়ই রয়েছে, যারা খুব ভালো খেলে। দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মাননীয় সমাজকল্যাণমন্ত্রীর সাথে আমার আলাপ হয়েছে। আমাকে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, ২৪ ফেব্রুয়ারি দলের খেলোয়াড়দেরকে তিনি মিষ্টিমুখ করাবেন। ওই সময় জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে তাদেরকে ট্রাকসুটসহ উপহার তুলে দেয়া হবে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট উপ-কমিটির সভাপতিকেও দলের জয়ের ব্যাপারে জানানো হয়েছে। এছাড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাউন্সিলর জাহিদুল ইসলাম রোমান ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট উপ-কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ মোতালেবের সাথে আলাপ করে খেলোয়াড় ও দলের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
দলের কোচ ও সাবেক ক্রিকেটার মোশারফ বাবু বলেন, দলের অনেক খেলোয়াড়কে নিয়ে জেলা স্টেডিয়ামে অনেক দিন অনুশীলন করানো হয়েছে। বয়সভিত্তিক দলের অনেক ক্রিকেটারই রয়েছে ম্যাচ খেলার মতো। এবার আমরা জেলা দল গঠনের ক্ষেত্রে ভালোভাবে খেলোয়াড় যাচাই-বাছাই করেছি। তারপর বিভাগীয় পর্যায়ের ক্রিকেটে অংশ নিয়েছি। দলের সকল খেলোয়াড়ই ছিলেন অনেক আন্তরিক। সকলের সাথেই সকলের খেলার মধ্যে মিল ছিলো। আমাদের দলের অনেক ক্রিকেটারই বিভাগীয় অনূর্ধ্ব-১৬ বয়সভিত্তিক ক্রিকেট দলে খেলার ডাক পেয়েছেন। আশা করি, তারা প্রত্যেকটি জায়গাতেই ভালো করবে।
টিম ম্যানেজার ও ক্রিকেটার মাসুদ বলেন, আমি প্রথমবারের মতো দায়িত্ব পেয়ে দলের সাথে ছিলাম। দলের সকলেই ভালো খেলেছে। শুরু থেকেই বিভাগীয় পর্যায়ে আমাদের দল ভালো করবে এটাই আমাদের লক্ষ্য ছিলো।
চাঁদপুর জেলা ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা হলো : আবরার রশিদ সাফি, মাহনাব চৌধুরী, মাহমুদুল হাসান, ইমতিয়াজ আয়মন, রাতুল দাস, অমিত হাসান, মুরাদ আলম, মুনতাসির আহমেদ, ফারদিন হোসাইন ও অনিমেশ কর।
শনিবার বিকেলে চাঁদপুর স্টেডিয়ামের প্যাভিলিয়নে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবু ও সাবেক ক্রিকেটার এসএম রাসেলের উপস্থিতিতে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি তুলে দেয়া হয় জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাছে। এ সময় জেলা ক্রীড়া অফিসার তারিকুল ইসলামসহ দলের ক্রিকেটারগণ উপস্থিত ছিলেন।