প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আয়োজনে চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে শেখ কামাল অনূর্ধ্ব ১৮ বিভাগীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ২০২৩-২০২৪। টুর্নামেন্টের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা। এ টুর্নামেন্টে চট্টগ্রাম বিভাগের জেলা হিসেবে চাঁদপুর জেলা অনূর্ধ্ব ১৮ ক্রিকেট দলটিও অংশ নিয়েছিলো। দলটির শেষ ম্যাচ গতকাল ২০ নভেম্বর সোমবার নোয়াখালী শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা দলটি টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে গত ১৪ নভেম্বর মঙ্গলবার কুমিল্লা জেলা দলের সাথে খেলে। চাঁদপুর প্রথম খেলাতেই পার্শ্ববর্তী জেলা এবং শক্তিশালী দল কুমিল্লার সাথে ৬৭ রানে হারে।
চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার বয়সভিত্তিক ক্রিকেট দলগুলো অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আয়োজনে ও বিভিন্ন জেলা ক্রীড়া সংস্থার ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত খেলাগুলোতে অংশ নিতো। ওই সমস্ত খেলায় মোটামুটি চাঁদপুর প্রথম রাউন্ডের দলগলোর সাথে জয়ী হয়ে কিংবা পয়েন্ট তালিকার মাধ্যমে ২য় রাউন্ডে খেলার সুযোগ পেতো। কিন্তু চলতি মাসে চট্টগ্রাম শেখ কামাল বিভাগীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টের প্রথম রাউন্ডেই চাঁদপুরের জেলা দলটি যেনো ২য় রাউন্ডে যাওয়ার হাল ছেড়ে দিয়েছে। এবারের টুর্নামেন্টে একই গ্রুপে ছিলো কুমিল্লা, চাঁদপুর ও কক্সবাজার। বৃষ্টির কারণে এবং খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গঠনের ক্ষেত্রে অন্য জেলার তুলনায় চাঁদপুরের দলটি খেলার মতো পুরোপুরি ফিট নয়। টুর্নামেন্টে অংশ নেয়ার মাত্র সপ্তাহখানেক আগ থেকে দলটির অনুশীলন শুরু হয়। এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া অন্য দলগুলো যেখানে অনেক আগে থেকেই ক্রিকেটার বাছাই করে অনুশীলন করিয়েছেন।
টুর্নামেন্টে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলা দল অংশ নিয়েছে ৩টি গ্রুপে। দলগুলো হচ্ছে--এ গ্রুপ : চাঁদপুর, কক্সবাজার ও কুমিল্লা; বি গ্রুপ : চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও লক্ষ্মীপুর; সি গ্রুপ : ফেনী, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রাঙ্গামাটি জেলা ক্রিকেট দল। খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রাম মহিলা কমপ্লেক্স ও কুমিল্লা জেলা স্টেডিয়ামে। টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হবে কুমিল্লা স্টেডিয়ামে।
টুর্নামেন্টের ফিক্শ্চার অনুযায়ী প্রথম ম্যাচে কুমিল্লার সাথে ৬৭ রানে, ১৬ নভেম্বর কক্সবাজার ও ১৮ নভেম্বর কুমিল্লার সাথে বৃষ্টির কারণে ১-১ ড্র করে। রান রেটের দিক ও খেলার দিক দিয়ে ২য় রাউন্ডে যাওয়ার অনেক কঠিন পথ ছিলো চাঁদপুরের। যদিও ২০ নভেম্বর সোমবার ম্যাচে কক্সবাজারের সাথে চাঁদপুর ৯ উইকেটে জয়লাভ করে।
বয়সভিত্তিক দলটি যদি প্রতিযোগিতামূলক খেলোয়াড় নিয়ে দল গঠন করা হতো, হয়তো টুর্নামেন্ট থেকে আরো ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যেতো বলে সাবেক অনেক ক্রিকেটারই এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন।
উল্লেখ্য, চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন বয়সভিত্তিক ক্রিকেটারদের বাছাই কার্যক্রম গত ২৬ জুলাই চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার ব্যবস্থাপনায় ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আয়োজনে সম্পন্ন হয়। এতে অংশ নেয় চাঁদপুর জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন বয়সী ক্রিকেটাররা। জেলা পর্যায়ে বিসিবির বয়সভিত্তিকে এ বছর যারা সিলেক্ট হয় তারা হলেন : চাঁদপুর অনূর্ধ্ব ১৮ ক্রিকেট দলের ক্রিকেটার--তানজিদ, সালাউদ্দিন, হাবিব, আঃ রহমান, ইনজামামুল, তানভীর, সালমান, মুশফিক, জিহাদ, রুদ্র, সাকিব, ফারদিন, মাহতাব, রাইয়ান, আল আমিন, আব্দুল্লাহ, ফিরাজ, হোসেন, সাকিব, রিয়াজ, তৌহিদ, মাহিন, রেজাউল, মুহিন, আলআমিন, শাহীদ আফ্রিদী, রাইয়ান খান, নবাব, নাইমুল, রাব্বি, সজিব, অমিয়, তাহমিদ, জিহাদ, সিফাত, রবিউল, মাহতাব আহমদ, রাব্বি, রাকিবুল, সোয়েব, মুয়াজ, ফারদিন খান, ফখরুদ্দিন ও রাসেল। এই সমস্ত ক্রিকেটার থেকেই চট্টগ্রামে অংশ নেয়া জেলা দলের ১৮ সদস্যের দল গঠন করা হয়। ১৫ জন ক্রিকেটার নিয়ে দল রওয়ানা করে। আর স্ট্যান্ডবাই হিসেবে ৩ জন ক্রিকেটার ছিলো।
বিভাগীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া দলের ম্যানেজার ও সাবেক ক্রিকেটার জুলফিকার আরী ভুট্টোর সাথে এ প্রতিবেদকের মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, আমরা কুমিল্লার সাথে প্রথম ম্যাচটি হেরে যাওযাতেই আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। এ ছাড়া পর পর দুটি ম্যাচে বৃষ্টির জন্যে আমরা মাঠে নামতে পারেনি। এ টুর্নামেন্টটি হচ্ছে ক্রিকেটারদের হান্টিং প্রোগ্রাম। এখান থেকেই অনেক ক্রিকেটার পরবর্তীতে জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পায়। আমাদের দলটি বৃষ্টির জন্যে ২টি ম্যাচে এবং ১ম ম্যাচের পরাজয়ের কারণে আমরা দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার সুযোগ হারিয়েছি। আমাদের গ্রুপে কুমিল্লা ও কক্সবাজারের মধ্যে কুমিল্লা ৫ পয়েন্ট নিয়ে এগিয়ে রয়েছে। রোববার কক্সবাজারের সাথে কুমিল্লা হেরেছে। আর আমাদের সাথে কক্সবাজারের ম্যাচ নিয়ে ওই দলটির জয়-পরাজয় ও রানরেটের উপর নির্ভর করবে আমাদের গ্রুপ থেকে কোন্ দল ২য় রাউন্ডে খেলার সুযোগ পাবে।
জেলা ক্রিকেট দলের বিভাগীয় পর্যায়ের অনূর্ধ্ব-১৮ ক্রিকেট দলের বর্তমান অবস্থা সম্বন্ধে সাবেক অনেক ক্রিকেটারের সাথে বিভিন্ন সময়ে সরাসরি ও মুঠোফোনে আলাপকালে তারা বলেন, আমাদের চাঁদপুরের ক্রিকেট দল নিয়ে এবং দলগঠন নিয়ে এখন একটু ব্যতিক্রম দেখা যায়। জেলা সদরে ২টি একাডেমীতে ক্রিকেটাররা অনুশীলন করেন। ভালো ক্রিকেটার নিয়ে দল গঠনের চেয়ে কোন্ একাডেমী থেকে ক'জন ক্রিকেটার জেলা দলে সুযোগ পেলো এই নিয়ে প্রতিযোগিতা চলে। ভালো খেলোয়াড় নিয়ে দল গঠন করতে হবে--এই নিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থা কর্তৃপক্ষের তেমন হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায় না। যেই একাডেমীর শক্তি বেশি, সেই একাডেমীর সকলকেই নিয়ে যেনো দল গঠন করতে হবে--এমন অবস্থা এখন স্টেডিয়াম এলাকাতে দেখা যায় বলে তারা এ প্রতিবেদককে জানান। তারা আরো বলেন, রাজনৈতিক দল ও একাডেমীকেন্দ্রিক দল গঠন, কোচ নির্বাচন ও টিম ম্যানেজার নিয়োগ না করে জেলা দল গঠনের ক্ষেত্রে দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক ও খেলাধুলার সাথে যারা জড়িত, তাদেরকে নিয়ে সকল কিছু আয়োজন করা হলে ভবিষ্যতে ফুটবল কিংবা ক্রিকেটসহ বিভিন্ন ইভেন্টের দলগুলোর খেলার ফলাফলে ভালো কিছু আশা করা যাবে।
বিভাগীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টে চাঁদপুর জেলা দলের পক্ষে অংশ নেয়া খেলোয়াড়রা হলেন : রাফিদ হাসান রুদ্র, সালাউদ্দিন, তানভীর হাসান, শাহীদ আফ্রিদী, জিহাদ গাজী, তানজিল আখন্দ, মোঃ ইনজামামুল হক, মুসফিক হাসান অয়ন, আল আমিন বেপারী, আব্দুল্লা আল সিফাত, হোসাইন গাজী, রবিউল ইসলাম জিসান, সাকিব, রাকিবুল হাসান ও আবু বকর। স্ট্যান্ডবাই খেলোয়াড়রা হলেন রিয়াজউদ্দিন, ফারদিন ও রাসেল। দলর টিম ম্যানেজার জুলফিকার আলী ভুট্টো। দলের কোচ পলাশ কুমার সোম এবং সহকারী কোচ ও ক্রিকেটার ফজলে রাব্বি।