প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ দলে সুযোগ পেলেন চাঁদপুরের আবু রায়হান শাওন। সাউথ এশিয়া ফুটবল কনফেডারেশন (সাফ) চ্যাম্পিয়নশীপে অংশ নিবে বাংলাদেশসহ ৭টি দেশ। বাংলাদেশ দলটি আগামী ৩০ আগস্ট ভুটানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ জাতীয় অনূর্ধ্ব ১৬ দলের হয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশীপে সুযোগ পাওয়া আবু রায়হান শাওনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার কোচ, চাঁদপুর সোনালী অতীত ফুটবল একাডেমীর ফুটবল কোচ ও সাবেক জাতীয় ফুটবলার আনোয়ার হোসেন মানিক এবং জাহাঙ্গীর গাজী। বাংলাদেশ জাতীয় অনূর্ধ্ব ১৬ দলটি আগামী ১ সেপ্টেম্বর প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে শক্তিশালী ভারতের সাথে। খেলা অনুষ্ঠিত হবে ভুটানের চ্যাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে।
জানা যায়, বাংলাদেশ দলটি এ গ্রুপে রয়েছে। দলটি ৩ সেপ্টেম্বর দলের দ্বিতীয় ম্যাচে ও শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে নেপালের সাথে। এ প্রতিযোগিতার সেমি-ফাইনাল দুটি অনুষ্ঠিত হবে ৭ সেপ্টেম্বর। এর তিনদিন পরই ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের আসরে শিরোপা জিতেছিলো বাংলাদেশ।
বাফুফে সূত্রে জানা যায়, সাফ চ্যাম্পিয়নশীপে অংশ নেয়া অনূর্ধ্ব ১৬ ফুটবল দলের খেলাগুলো ভুটানের থিম্পুতে ১ সেপ্টেম্বর শুরু হবে এবং ১০ সেপ্টেম্বর শেষ হবে।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত ক্লাব হচ্ছে চাঁদপুর সোনালী অতীত ক্লাব। সারা জেলা থেকেই বাফুফের অন্তর্ভুক্ত ক্লাবগুলোর খেলোয়াড়দের নিয়ে ঢাকায় বাছাই অনুষ্ঠিত হয়। সেই বাছাইতে চাঁদপুর সোনালী অতীত ক্লাবের ২ জন ফুটবলার সুযোগ পান। এর মধ্যে সাফ চ্যাম্পিয়নশীপে শাওন দলে সুযোগ পান। এই সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে চাঁদপুর সোনালী অতীত ক্লাবের ফুটবল কোচ আনোয়ার হোসেন মানিক ও জাহাঙ্গীর গাজীর সহযোগিতা রয়েছে।
আবু রায়হান শাওনের বাড়ি চাঁদপুর সদরের তপরপুরচন্ডী এলাকায়। তার বাবার নাম নুরুল ইসলাম গাজী ও মায়ের নাম রহিমা বেগম। ২ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। সে এসএসসি পাস করেছে চাঁদপুর শহরের গভর্নমেন্ট টেকনিক্যাল হাই স্কুল থেকে। সে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৬ দলের সাথে অনেকদিন ধরেই অনুশীলনে রয়েছেন। তাকে তরপুরচন্ডী এলাকায় ফুটবলার শাওন নামে সকলেই চিনে। তিনি স্থানীয় একুশে ক্লাবের হয়ে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানেই ফুটবল খেলেছেন।
বাংলাদেশ জাতীয় অনূর্ধ্ব ১৬ দলের হয়ে বিদেশের মাটিতে আবু রায়হান শাওন সুযোগ পাওয়াতে তার পরিবারসহ পুরো এলাকার সকলের মাঝেই আনন্দ শুরু হয়েছে। সপ্তাহের শুরুর শনিবার সন্ধ্যায় তার বাড়িতে ফুটবল কোচ আনোয়ার হোসেন মানিক ও জাহাঙ্গীর গাজীসহ এ প্রতিবেদক যান। বাড়িতে যাওয়ার পথেই তার এলাকার সবাই একবাক্যে বলতে থাকেন, আমাদের এলাকার শাওন জাতীয় অনূর্ধ্ব ১৬ ফুটবল দলে সুযোগ পেয়েছে চাঁদপুর সোনালী অতীত ফুটবল একাডেমী ও একাডেমীর দু কোচের সহযোগিতায়।
শাওনের পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয় এলাকাবাসী আশা করছেন, আশির দশকের পর বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে ফরিদগঞ্জের রেজাউল ও রাফির পর সদরের আবু রায়হান শাওন খেলবেন। শাওনের মা রহিমা বেগমের সাথে এ প্রতিবেদকের আলাপকালে তিনি জানান, আমার ছেলে দেশের হয়ে বিদেশে খেলতে যাচ্ছেন। এতে তো মা হয়ে আমি অনেক খুশি। আমার ছেলের ফুটবলার হওয়ার পেছনে ফুটবল কোচ মানিক ও জাহাঙ্গীর স্যারের অবদানের জন্যে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমার ছেলে অনেক অভাব অনটনে থেকেও নিয়মিত স্কুলের পড়াশোনার পাশাপাশি চাঁদপুর সোনালী অতীত ফুটবল একাডেমীতে অনুশীলন করতো। এই একাডেমীতে খেলার কারণেই ঢাকায় ফুটবলারদের বাছাইতে অংশ নিয়েছিলো। গত ৯ মাস ধরে ঢাকাতে সে অনুশীলন করছে। মাঝে মাঝে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসলেও খেলার জন্যে আবার চলে যেতো। আমার ২ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে ফজলে রাব্বি ও আমার মেয়ের জামাই মোঃ খোরশেদ আলম তাকে খেলাধুলার ব্যাপারে অনেক সহযোগিতা করেছে। তার বড় ভাই তার ফুটবল খেলার জন্যে সবসময়ই সহযোগিতা করেছে। শাওন হাই স্কুলে ওঠার পরই আমাকে বলে সে ফুটবল খেলবে এবং ফুটবলার হবে। আমি নিজে গিয়ে তাকে সোনালী অতীত ফুটবল একাডেমীতে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসি। অনেক দরিদ্রতার মধ্য দিয়েও সে নিয়মিত ফুটবল খেলে গেছে। ও নিজে ১ হাজার টাকা জমিয়ে ভর্তি হয় ফুটবল খেলাতে। ওই সময় আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে গিয়ে অনেক হিমশিম খেতে হয়েছে। আমার বড় ছেলে টিউশনি করে ওকে ফুটবল প্র্যাকটিসের সকল কিছু জেগাড় করে দিয়েছে। সে যেনো দলের হয়ে দেশের জন্যে ভালো ফুটবল খেলতে পারে আমি আল্লাহতায়ালার কাছে এই দোয়া করি। আমি দোয়া করি, আমার ছেলে যেনো ভবিষ্যতে জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।
আবু রায়হান শাওনের চাঁদপুরের ফুটবল কোচ আনোয়ার হোসেন মানিক ও জাহাঙ্গীর গাজী এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন, শাওনের মা আমাদের একাডেমীতে তাকে ভর্তি করিয়ে দেন। তারপর আমরা দুজন মিলে তাকে খেলার জন্যে বুটসহ সকল কিছু দিয়েই সহযোগিতা করেছি। তাকে ঢাকায় খেলানোর ব্যাপারে আমাদের সকল ধরনের সহযোগিতা ছিলো। শুরু থেকেই ফুটবল খেলার ব্যাপারে তার অনেক আগ্রহ ছিলো। নিয়মিতই সে ফুটবল অনুশীলন করার জন্যে একাডেমীতে চলে আসতো। সে যেনো সাফ চ্যাম্পিয়নশীপে ভালো করে জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পায় এজন্যে আমরা সকলের কাছে তার জন্যে দোয়া প্রার্থনা করছি ।
আবু রায়হান শাওনের একমাত্র বোন নুরুননাহার আক্তার এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন, আমার বাবা-মা, বড় ভাই ও আমার স্বামী আমার ভাইয়ের ফুটবল খেলার জন্যে অনেক কষ্ট করেছেন এবং এখনো সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। আমাদের অনেক কষ্টের সময় আমার মা আমার ভাইকে ফুটবল খেলার জন্যে একাডেমীতে ভর্তি করিয়ে দেন। আমার ভাই অনেক কষ্ট করে আজ দেশের হয়ে জাতীয় পর্যায়ে খেলতে যাচ্ছে-- এটা আমাদের জন্যে অনেক আনন্দের। আমার ভাইয়ের খেলাধুলার ব্যাপারে সোনালী অতীত ফুটবল একাডেমীসহ স্থানীয় একুশে ক্লাবের সকলেই সহযোগিতা করেছেন। আমার ভাই যেনো ভবিষ্যতে জাতীয় ফুটবল দলে খেলতে পারে এবং সুযোগ পায় সেজন্যে সকলের কাছে দোয়া ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
তরপুরচন্ডী এলাকার সন্তান ও চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সদস্য, একুশে ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও ক্রীড়াবিদ অ্যাডঃ আব্দুল হান্নান কাজীর সাথে এ প্রতিবেদকের আলাপকালে তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি শাওনের অনেক আগ্রহ রয়েছে। সে আমাদের ক্লাবের হয়ে অনেক স্থানেই ফুটবল খেলেছে। আমি তার খেলা দেখে তার মাকে নিজেই অনুরোধ করি তাকে সোনালী ফুটবল একাডেমীতে ভর্তি করিয়ে দেয়ার জন্যে। এখনও ঢাকা থেকে আসলে ছুটে আসে আমাদের সাথে ফুটবল খেলার জন্যে। শাওন যে কষ্টের মধ্যে থেকে ফুটবল অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে, ভবিষ্যতে সে জাতীয় ফুটবল দলে খেলবে--এই প্রত্যাশা করছি।
উল্লেখ্য, আজ বিকেল ৩ ঘটিকায় অনূর্ধ্ব ১৬ জাতীয় ফুটবল দলের ম্যানেজার ও খেলোয়াড়দের উপস্থিতিতে মতিঝিলস্থ বাফুফে ভবনের তৃতীয় তলায় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।