শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

ক্রীড়াবিদ শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল
অনলাইন ডেস্ক

জাতির পিতা ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী শনিবার। ক্রীড়াবিদ শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ছিলেন এক বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী অনন্য সংগঠক। দেশ ও সমাজভাবনায় শেখ কামাল মাত্র ২৬ বছরের জীবনে বাঙালির সংস্কৃতি ও ক্রীড়াক্ষেত্রের এক বিরল প্রতিভাবান সংগঠক ও উদ্যোক্তা হিসেবে অসামান্য উচ্চতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। একইসাথে রাজনীতিতেও ছিলেন সমান তৎপর। আগামী ৫ আগস্ট তাঁর জন্মদিন। ১৯৪৯ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

খুব ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি ছিল তাঁর প্রচণ্ড ঝোঁক। ঢাকার শাহীন স্কুলে পড়াকালীন খেলাধুলার প্রত্যেকটি আয়োজনে তিনি ছিলেন অপরিহার্য ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর মধ্যে ক্রিকেটের প্রতি টানটা ছিল সবচেয়ে বেশি। দীর্ঘদেহী কার্যকর ফাস্ট বোলার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু একই সাথে বাঙালি এবং মুজিবপুত্র হবার কারণে অবিভক্ত পাকিস্তানের জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটে নিদারুণভাবে উপেক্ষিত থেকেছেন। তরুণ বয়সে আজাদ বয়েজ ক্লাবের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন এবং ওই ক্লাবের হয়েই দীর্ঘদিন প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলেছেন। ঢাকার আজাদ বয়েজ ক্লাব ছিলো তখন প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটারদের লালনক্ষেত্র।

খেলাধুলার পাশাপাশি সংস্কৃতিচর্চার প্রতি তাঁর আগ্রহ ও কর্মকাণ্ডের ব্যাপকতা তাঁর প্রতিভা ও মননের এক বিশাল দিককে উন্মোচিত করে। অভিনয়, সংগীত চর্চা, বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতাসহ সকল ক্ষেত্রে তিনি তাঁর মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের ছাত্র হিসেবে হলের বাস্কেটবল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলেন শেখ কামাল। বাস্কেটবলে তাঁর অসামান্য দক্ষতার কারণে তাঁর সময়ে বাস্কেটবলে সলিমুল্লাহ হল শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছিল।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ক্রীড়া সংগঠক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শেখ কামাল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে মাত্র ২৬ বছর বয়সে পিতা মুজিব ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ মানবতার ঘৃণ্য শত্রুদের নির্মমণ্ডনিষ্ঠুর বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হন তিনি।

বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি শিক্ষার অন্যতম উৎসমুখ ‘ছায়ানট’-এর সেতার বাদন বিভাগের ছাত্র ছিলেন শেখ কামাল। তিনি ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অভিনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় প্রচণ্ড উৎসাহ ছিল তার। তিনি ছিলেন উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন, বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা। সে সময়ের জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠন স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠীরও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি।

রাজনীতিক বাবার সন্তান শেখ কামাল কোনো শর্টকাট পথে ওপরে যাওয়ার পথ দেখেননি বা দেখতে চাননি। মুক্তিযুদ্ধে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশন লাভ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর এডিসির দায়িত্ব পালন করেছেন। চাইলে এই পথে তিনি সেনাবাহিনীতে গিয়ে নিশ্চিত জীবন-যাপন করতে পারতেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর শেখ কামাল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন।

ছাত্র রাজনীতিতে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একজন সদস্য হিসেবে নেতাদের নেতৃত্বে কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে, ছাত্রও ভালো, ক্লাসে প্রথম সারিতে বসে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শিক্ষকের কথা শুনবেন-- এমনটা ছিলেন না তিনি। বরাবরই তাগিদ ছিল তার ভিন্ন কিছু করার।

শেখ কামালের ভাবনা ছিল দেশের তরুণদের ক্রীড়ার মাধ্যমে সংগঠিত করা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যাওয়া। শেখ কামাল গিটার বাজাতেন, সংগীত চর্চা করতেন, নাট্য চর্চা করতেন। তিনি আড্ডা মাতিয়ে রাখতেন। কিন্তু তার দুর্বলতা ছিল যে তিনি বঙ্গবন্ধুর পুত্র, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে। তাই ঈর্ষাপরায়ণ বাঙালির একমাত্র কাজ ছিল বাজে গল্প বানানো। তাঁর বহু সহপাঠীর সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, যারা এখন আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতি করেন। তারা বলেন, তাদের চোখে কখনও তাকে ঔদ্ধত্য বা অশালীন কোনো আচরণে লিপ্ত হতে দেখেননি। তবুও কতজন কত কথা বলেছে। বঙ্গবন্ধুর ছেলে বলেই হয়তো একটি গোষ্ঠী বেশ কৌশলেই নানা বানোয়াট গল্প ছড়িয়ে দিয়েছিল বাতাসে।

একজন সৃজনশীল উদ্যমী প্রাণবন্ত তরুণ, যিনি মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র ধরেছেন, সংগীত, নাটক, ক্রীড়া, সামাজিক কাজেকর্মে তরুণদের নেতৃত্ব দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন তাকে নতুন করে এখনকার যুব সমাজের কাছে তুলে ধরতে হবে।

দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর শেখ কামালের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলেছে। কিন্তু আজ এ কথা প্রতিষ্ঠিত, তাঁর অন্বেষণই ছিল বাংলাদেশ, বাংলাদেশকে তিনি কোথায় দেখতে চান সেটাই ছিলো প্রচেষ্টা। তিনি বাংলাদেশের মানুষের উত্থানের উপায় খুঁজে ফিরেছেন তার পিতার মতো করে।

খেলাধুলার প্রতি অমোঘ আকর্ষণ ও খেলাধুলার প্রসারের লক্ষ্যে দেশের অন্যতম শক্তিশালী ও জনপ্রিয় ক্লাব আবাহনী ক্রীড়াচক্র প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তাঁর বড় বোন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ধানমণ্ডি এলাকায় কোনো ধরনের খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিল না। সে (শেখ কামাল) উদ্যোগ নেয় এবং ওই অঞ্চলের সবাইকে নিয়ে আবাহনী গড়ে তোলে। মুক্তিযুদ্ধের পরে ও এই আবাহনীকে শক্তিশালী করে।’

আবাহনী ক্রীড়াচক্র বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী বিপ্লবের জন্ম দেয়। বাংলাদেশের আধুনিক ক্রীড়াঙ্গনের স্বপ্নদ্রষ্টা হচ্ছেন শেখ কামাল। তার প্রতিষ্ঠিত ঢাকা আবাহনী ক্রীড়া চক্র, চট্টগ্রাম আবাহনী ক্রীড়া চক্র এবং চাঁদপুর আবাহনী ক্লাবে আমার ফুটবল খেলা হয়েছে। তার প্রতিষ্ঠিত ক্লাবে আবাহনী পড়ে খেলতে পেরেছি এটা আমার জন্যে গর্বের বিষয়। আবাহনী ক্রীড়া চক্র প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় ক্লাব মোহামেডানকে পেছনে ফেলে আবাহনীকে তিনি গৌরবের উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ক্রমান্বয়ে সারাদেশে আবাহনীর শাখা গঠনে তৎপর হন। তরুণ সমাজের চিত্তের প্রফুল্লতা নিশ্চিত করা ও বিপথে ধাবিত না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রয়োজনীয়তা তিনি উপলদ্ধি করেছেন সবসময়।

বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে বঙ্গবন্ধুসহ সপরিবারে নিহত না হলে বাংলাদেশ পেতো বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই সংগঠক ও নেতাকে। তাঁর মেধা ও রুচির প্রয়োগ ঘটিয়ে তরুণ প্রজন্মকে যে সুন্দর ও সম্ভাবনার পথ তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন, সেই পথটি যেন আমরা খুঁজে নিতে পারি। ৭৪ তম জন্মদিনে শেখ কামালের প্রতি রইলো আমার অকৃত্রিম প্রগাঢ় শ্রদ্ধা।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও সাবেক জাতীয় ফুটবলার।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়