প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৩, ০০:০০
দূরপাল্লার সাঁতারে চাঁদপুরের তিন সাঁতারুর সাফল্য অর্জনের নেপথ্যে ছিলো দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ভূমিকা। আজ থেকে প্রায় ২৪ বছর আগে ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর চাঁদপুরের তিন সাঁতারু বাদশা, ছানাউল্লাহ ও রোকন ২৫ ঘন্টায় ঢাকা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দিয়ে চাঁদপুরের তিন নদীর মিলনস্থলের নদীতীর স্পর্শ করেন। সাঁতারের যে রেকর্ডটি আজও কেউ ভাঙ্গতে পারেনি।
চাঁদপুর কণ্ঠ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৯ সালের ১৯ নভেম্বর শুক্রবার বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে এই তিন সাঁতারু ঢাকার ফতুল্লায় ভাসমান রেস্তোরাঁ ‘মেরি এন্ডারসন’ থেকে দূরপাল্লার সাঁতারের উদ্দেশ্যে বুড়িগঙ্গায় ঝাঁপ দেন। দূরপাল্লার এই সাঁতারের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী, বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম। তিনি সাঁতারুদের তত্ত্বাবধান সহ নিরাপত্তার প্রয়োজনে বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিএ)-এর একটি জাহাজ দিয়েছিলেন। বুড়িগঙ্গা পাড়ি দেয়ার পরে এ সাঁতারুরা একে একে শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী, পদ্মা ও মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে বতর্মান চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেডের পশ্চিমণ্ডউত্তর পার্শ্বস্থ তীরে এসে বিজয় সূচক ‘ভি’ দেখিয়ে চাঁদপুরের হাজার হাজার জনতার ভালোবাসায় অবগাহন করেন। এদের মধ্যে এ.কে.এম. বাদশাহ মিয়া বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে, মোঃ রোকনুদ্দিন ভূঁইয়া বাবুল ৪টা ৪৪ মিনিটে এবং মুক্তিযোদ্ধা ছানাউল্লাহ খান ৪টা ৪৬ মিনিটে মেঘনা থেকে তীরে উঠেন। তাদের সাঁতারের গতিবেগ ছিলো প্রতি ঘন্টায় ২.৯ কিলোমিটার।
এই দূরপাল্লার সাঁতারের পূর্বে চাঁদপুরের দু কৃতী সন্তান চ্যানেল বিজয়ী সাঁতারু মরহুম আঃ মালেক ১৯৬০ সালে ঢাকা-চাঁদপুর এবং জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রাপ্ত প্রয়াত সাতাঁরু অরুন নন্দী ১৯৭৪ সালে মীরপুর-চাঁদপুর সাঁতার দেয়ার কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। লায়ন্স ক্লাব অব চাঁদপুর রূপালীর সহযোগিতায় এবং ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতার বাস্তবায়ন পরিষদের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এই ঐতিহাসিক দূরপাল্লার সাঁতার আয়োজন করা সম্ভব হয়। এ সাঁতার বাস্তবায়নকল্পে চাঁদপুর লায়ন্স ক্লাবের সাবেক সভাপতি মোস্তাক হায়দার চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক, চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সকলের প্রিয়মুখ আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট ইকবাল-বিন-বাশারকে সদস্য সচিব করে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই সময় চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অপারগতার প্রেক্ষিতেই উল্লেখিত কমিটি ব্যয়বহুল সাঁতার আয়োজন করে ব্যাপক বিস্ময় ও চমক সৃষ্টি করেছিলো।
চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক, এককালের তুখোড় ক্রীড়া সংগঠক আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট ইকবাল-বিন-বাশার দূরপাল্লার সাঁতার নিয়ে এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন, ওই সময়ে সাঁতার আয়োজনে যারা সহযোগিতা করেছিলেন আমার সাথে, তাদের অনেক আন্তরিকতা ছিলো। সেই সময় আয়োজক হিসেবে সবার সাথে কথা বলে সাঁতারুদের উৎসাহের কারণেই একটি বড় বাজেটের ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতার আয়োজন করা হয়েছিলো। ওই সাঁতারের পর এই জেলাতে এই ধরনের কোনো বড় আয়োজন আর হয়নি।
এই দূরপাল্লার সাঁতারের পর ২১ নভেম্বর চাঁদপুর কণ্ঠের সম্পাদকীয় কলামের একটি অংশে লিখা হয়, পৃথিবীতে মানুষের অভাব নেই। তবে সৌভাগ্যবান ব্যক্তির সংখ্যা হাতেগোণা। এ জন্যেই মনীষী সিনেকা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছিলেন, সৌভাগ্য প্রত্যেক্যের সঙ্গে দেখা করার জন্যে প্রতীক্ষা করে। এ প্রেক্ষিতে জুভেনালের কথাও স্মর্তব্য। তিনি বলেছেন, একজন সৌভাগ্যবান মানুষ সাদা কাকের মতোই দুর্লভ। চাঁদপুরের তিন কৃতী সন্তান বাদশাহ, ছানাউল্লাহ ও রোকন যে সৌভাগ্যবান এতে সন্দেহের লেশমাত্র নেই। আমরা মনে করি, সৌভাগ্যের কারণেই বিজয় তাদের পদচুম্বন করেছে। ‘স্বর্ণোজ্জ্বল স্মৃতির কখনো মৃত্যু হয় না। কিন্তু দুঃখের স্মৃতি সহজেই বিলীন হয়ে যায়’--টমাস মুরের এ চিরন্তণ উচ্চারণ কভুও ভোলার নয়।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, জেলা জজ আদালতের সাবেক পিপি, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন, চাঁদপুর নদীমাতৃক এলাকা। চ্যানেল বিজয়ী সাঁতারু আঃ মালেক ও বিশ্বমানের সাঁতারু অরুন নন্দীর জন্ম চাঁদপুরে। তাঁদের কীর্তি ধরে রাখার জন্যে এবং নদীমাতৃক চাঁদপুর জেলার সুনামের জন্য আমরা এ আয়োজন করেছিলাম। আমাদের এ আয়োজনে চাঁদপুরের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ ও লায়ন্স ক্লাব অব চাঁদপুর রূপালীর সহযোগিতা ছিলো। এই আয়োজনে ঢাকাস্থ চাঁদপুরবাসীর সহযোগিতাও ছিলো। অত্যন্ত সুন্দরভাবে এই আয়োজনটি সফল হয়েছে। আমরা যারা আয়োজনের সাথে জড়িত ছিলাম, সকলেই অনেক আন্তরিকভাবে কাজ করেছি। ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতারকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যেই আমরা কাজ করেছি।
সাঁতার বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়কারী ক্রীড়া সংগঠক মজিবুর রহমান ফরহাদ বলেন, সাঁতারুদের সাঁতারের সময় স্বতঃস্ফূর্তভাবেই নদী পথের পুলিশ ফাঁড়িগুলো সহযোগিতা করেছে। ওই সময়ের একটি কথা বলতে চাই। ঘনিয়ে আসছিলো সন্ধ্যা। প্রস্তুতি চলছিলো রাতকে বরণ করে নেয়ার। আমাদের সাথে থাকা হ্যাজাক লাইটগুলো করলো চরম প্রতিকূল আচরণ, জ্বললো না একটাও। নৌকায় থাকা হারিকেন, আর একটা নৌকায় থাকা জেনারেটর এবং বিআইডব্লিউটিএ জাহাজের চার্চ লাইটই হয়ে উঠলো আমাদের সম্বল।
সাবেক ব্যাংকার ও ক্রীড়া সংগঠক মুজিবুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, আসলে দূরপাল্লার সাঁতারের প্রস্তুতি স্বরূপ অবিরাম সাঁতার আয়োজন করা হয় চাঁদপুর সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের ফরক্কাবাদ এলাকার দুর্গাদী পুকুরে । সাঁতারু ছানাউল্লাহ খানের পৈত্রিক নিবাসের নিকটবর্তী পুকুর হওয়ায় সেখানে অনেক আনুকূল্য পাওয়ার কারণে অবিরাম সাঁতার আয়োজন করা সহজ হয়। তৎকালীন উদীয়মান আওয়ামী লীগ নেতা, বর্তমানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী সকালে সাঁতারের উদ্বোধন করেন। বিকেলের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের জন্যে সাতাঁরু বাদশাহ ও ছানাউল্লাহ ভাইয়ের কথায় আমরা চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত ভাইকে আমন্ত্রণ জানালাম। প্রকৃতপক্ষে ওইখানে অবিরাম সাঁতারের সাফল্য থেকে ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতারের মূল কাজ শুরু হয়। ওই দুর্গাদী পুকুরে সাঁতারুরা ১২ ঘন্টা সাঁতার কাটেন। এরপর চাঁদপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শেরেবাংলা হোস্টেলের পুকুরে অবিরাম সাঁতারের আয়োজন করা হয়। সেখানে সাবেক তরপুরচণ্ডী ইউপি চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান গাজী অনেক সহযোগিতা করেছিলেন। এখানে সাঁতারের আয়োজনের পরই ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতারের জন্যে ইকবাল-বিন-বাশার ভাই ও কাজী শাহাদাত ভাই সহ লায়ন্স ক্লাবের মোস্তাক হায়দার চৌধুরী ও সেলিম আকবরের সাথে কথা হয় আমাদের। পরবর্তীতে চাঁদপুর কণ্ঠে বসে সাবেক এমপি সফিউল্লা (বর্তমানে মরহুম), ইকবাল ভাই, শাহাদাত ভাই, লায়ন মোস্তাক চৌধুরী সহ ৩ জন সাঁতারুকে নিয়ে পরিকল্পনা হয় দূরপাল্লার সাঁতারের। তবে একটি কথা বলতে হয়, ওই সময়ে লায়ন্স ক্লাবের পক্ষে অ্যাডঃ সেলিম আকবরের অগ্রণী ভূমিকা ছিলো। যখন জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও ডিসি সাহেব কোনো সহযোগিতা করছিলো না, তখন ইকবাল-বিন-বাশার ও সেলিম আকবরের ভূমিকা ছিলো সাহসিকতা প্রদর্শনের শামিল। এর নেপথ্যে মুখ্য ভূমিকা ছিলো চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাতের। আর সামগ্রিকভাবে চাঁদপুর কণ্ঠের ভূমিকা ছিলো অনেক বেশি।
ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতারে অংশ নেয়া বাদশাহ এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন, আমরা চাঁদপুর কণ্ঠ ও লায়ন্স ক্লাবের আয়োজনেই ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতারে অংশ নিয়েছিলাম। তবে চাঁদপুর কণ্ঠের ভূমিকা ছিলো অনেক বেশি। সাঁতারের জন্যই আজ আমাকে অনেকেই চিনেন। সাঁতারু হিসেবে পুরো পরিবারকে চিনেন।
ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতারে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা ছানাউল্লাহ খান এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের স্বপ্ন ছিলো ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতারে অংশ নেয়ার। এজন্যে প্রস্তুতিস্বরূপ বিভিন্ন জায়গায় ঘন্টার পর ঘন্টা সাঁতার কেটেছি। আমাদের দূরপাল্লার সাঁতারে চাঁদপুর কণ্ঠ ও লায়ন্স ক্লাবের সহযোগিতা ছিলো বেশি। চাঁদপুর কণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক অ্যাডঃ ইকবাল-বিন-বাশার ও প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাতের ভূমিকার কারণেই এতো বড় আয়োজন সফল হয়েছে।
ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতারে অংশ নেয়া রোকন উদ্দিন ভূঁইয়া বাবুল মুঠোফোনে তার বক্তব্যে বলেন, চাঁদপুরে এ ধরনের আয়োজন আর হবে কিনা জানি না। তবে আমরা চাঁদপুর কণ্ঠ ও লায়ন্স ক্লাবের জন্যে এতো বড় দূরপাল্লার সাঁতারে অংশ নিতে পেরেছি। স্মৃতিময় এই আয়োজনের জন্যে চাঁদপুর কণ্ঠকে ধন্যবাদ জানাই।
ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতারের আয়োজকদের মধ্যে লায়ন্স ক্লাব অব চাঁদপুর রূপালীর সাবেক সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডঃ সেলিম আকবর এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা এ আয়োজনটি করেছিলাম জাতীয় পর্যায়ে চাঁদপুরের সুনামের জন্যে। ১৯৯৯ সালে এই আয়োজনটি লায়ন্স ক্লাব অব চাঁদপুর রূপালী ও চাঁদপুর কণ্ঠের নিরলস পরিশ্রমেই আয়োজন করা সম্ভব হয়েছিলো। এই প্রতিযোগিতার পর অনেকেরই সাঁতারের প্রতি আগ্রহ বেড়েছিলো। এখন আর তেমন কারো সাঁতার প্রতিযোগিতার ব্যাপারে ও সাঁতার শেখার ব্যাপারে আগ্রহ দেখা যায় না।
জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সাঁতারু অরুন নন্দী (বর্তমানে প্রয়াত) ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতারে অংশ নেয়া তিন সাঁতারুর উদ্দেশ্যে বুড়িগঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দেয়ার প্রাক্কালে বলেছিলেন, দূরপাল্লার সাঁতারে নদীতে ভাটার সময় দ্রুত সাঁতার কেটে পথের দূরত্ব কমাতে হবে এবং জোয়ারের সময় তা করতে হবে ধীরে ধীরে। ভোর রাতটা সাঁতারুদের জন্যে ভয়াবহ। এ সময় ভীষণ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। মুরগীর স্যুপ, হরলিক্স, চা, কমলালেবুর রস খাইয়ে এবং বাজি ফুটিয়ে সাঁতারুদের ঘুম বিতাড়নের ব্যবস্থা নিতে হয়। অন্যথায় ঘুমের ঘোরে নদীর অতলে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাঁর এ পরামর্শ মেনে এবং আয়োজকদের মধ্যে ব্যাংকার মুজিবুর রহমান, মজিবুর রহমান ফরহাদ, আবুল কাশেম সায়মন, ওমর ফারুক সহ নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের সার্বিক সুতীক্ষè তত্ত্বাবধানে সাঁতারু বাদশা, ছানাউল্লাহ ও রোকন উত্তাল পাঁচটি নদী পাড়ি দিয়ে চাঁদপুরে এসে পৌঁছান।
সাঁতারুরা সাঁতার কেটে কেটে ঢাকা থেকে আসছেন এমন খবরে সাঁতারু বাদশাহ ও রোকনের পৈত্রিক নিবাস তরপুরচণ্ডী ইউনিয়নের লোকজনের মাঝে ছিলো অনেক উচ্ছ্বাস। সেজন্যে আনন্দবাজার এলাকার পূর্ব থেকেই অসংখ্য মানুষ ছোট-বড় নৌকাযোগে নদীতে সাঁতারুদেরকে উৎসাহ জোগাতে মাইকে দেশাত্মবোধক গান বাজিয়ে নেচে নেচে করতালি দিতে থাকেন। বিআইডব্লিউটিএ'র জাহাজে ও ক'টি নৌকায় অবস্থানকারী আয়োজক এবং নদীতীরে দাঁড়িয়ে থাকা কৌতূহলী হাজার হাজার মানুষ সে দৃশ্য প্রাণভরে উপভোগ করেন। তিন কৃতী সাঁতারু চাঁদপুর বড়ো স্টেশন মোলহেডের উত্তর পাশে একে একে যখন নদীতীর স্পর্শ করেন, তখন জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম, চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইকবাল-বিন-বাশার, লায়ন্স ক্লাবের আনিসুর রহমানসহ আরো অনেকে উপস্থিত থেকে সাঁতারুদের অভিনন্দন জানান এবং প্রয়োজনীয় শুশ্রূষার জন্যে অ্যাম্বুলেন্সযোগে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠান। এ সময় চাঁদপুর বড়ো স্টেশন এলাকায় নদীতীরে অন্তত পঞ্চাশ হাজার লোকের উপস্থিতি ও মুহুর্মুহু করতালি সহ তুমুল হর্ষধ্বনি প্রত্যক্ষদর্শীদের স্মৃতির পাতায় এখনও জ্বলজ্বল করছে।
চাঁদপুর কণ্ঠ প্রতিষ্ঠার পর বিগত ২৯ বছরে ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতার আয়োজনের আনন্দঘন স্মৃতির চেয়ে বড়ো স্মৃতি দ্বিতীয়টি আছে বলে মনে হয় না। সেজন্যে চাঁদপুর কণ্ঠের ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ৩০ বছরে পদার্পণের শুভলগ্নে ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতারের স্মৃতি তর্পণ প্রাসঙ্গিক বলেই পাঠকদের উদ্দেশ্যে ক্রীড়াকণ্ঠে এই প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হলো।