প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৩, ০০:০০
খেলাধুলার সাথে জড়িত থাকলে মন যেমন প্রফুল্ল থাকে তেমনি খেলাধুলার নিউজ পড়তে ভালো লাগে সকল শ্রেণীর পাঠকের। আমিও একসময় নিজেই খেলাধুলার সাথে জড়িত ছিলাম। ফুটবল ও ক্রিকেট দুটি খেলাই খেলেছি। চাঁদপুর থেকে বর্তমান সময়ে প্রায় ২১টি দৈনিক এবং চাঁদপুর সদর সহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে সাপ্তাহিক পত্রিকা ও বেশ ক’টি পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর মধ্যে জেলার সর্বাধিক প্রচারিত শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের পক্ষ থেকেই জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার খেলাধুলা নিয়ে পক্ষকাল বিরতিতে ‘ক্রীড়াকণ্ঠ’ বের করা হয় নিয়মিতভাবে।
আমি এই পত্রিকাটিতে যোগদান করি ২০১১ সালে। পত্রিকার অফিস ছিলো তখন প্রেসক্লাব লাগোয়া রেডক্রিসেন্ট ভবনের ৩য় তলায়। যোগদানের কিছুদিন পরই ক্রীড়াকণ্ঠের দায়িত্ব আমার হাতর তুলে দেন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক শ্রদ্ধাভাজন কাজী শাহাদাত। আমি এই পত্রিকাটিতে যোগ দেয়ার আগে স্থানীয় ৩টি পত্রিকায় কাজ করার সুযোগ হয়েছিলো। আমার শুরুটা হয় চাঁদপুর সংবাদ পত্রিকার মাধ্যমে। শুরু থেকেই পত্রিকার জগতে আমাকে একজন ছাত্রের মতো, ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করে পত্রিকার রিপোর্টিংসহ বিভিন্ন কাজে আমার প্রতি শিক্ষকের ন্যায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এক বড়ো ভাই। তিনি হলেন চাঁদপুর কণ্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক মিজানুর রহমান (এম রহমান)। তার মাধ্যমেই আমি পত্রিকায় কীভাবে নিউজের জন্যে তথ্য সংগ্রহ করা সহ আনুষঙ্গিক কী কী করতে হয় সেটা শিখেছি।
চাঁদপুর সংবাদে কিছুদিন কাজ করার পর একদিন বিকেলে লেকের পাড়ে ফটোগ্রাফার দীপকের স্টুডিওতে দেখা হয় ফটোসাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ (একে আজাদ) ভাইয়ের সাথে। তখন কথায় কথায় এক পর্যায়ে বলেন, আমি চাঁদপুর প্রবাহে কাজ করবো কিনা। আমি সাথে সাথে রাজি হয়ে যাই। এরপর তিনি আমাকে চাঁদপুর প্রবাহের তৎকালীন সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম (বর্তমানে মরহুম) ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। মাকসুদ ভাই আমাকে নিউজ পাঠাতে বললে আমি মিজান ভাইয়ের পরামর্শ নিয়ে সাইকেল চালিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতাম এবং ছবি তুলে এনে মিজান ভাইকে জানাতাম। কীভাবে নিউজ লিখতে হবে তখন তিনি আমাকে বলে দিতেন। তখন ছিলো না এখনকার মতো ডিজিটাল ব্যবস্থা ও সিসির ব্যবস্থা। সাদা কাগজে নিউজ লিখে এবং ৩০ টাকা দামের রিভার ফিল্ম কিনে সাদাকালো ছবি প্রিন্ট করে চাঁদপুর প্রবাহ অফিসে এলাকার ছোট ছোট ছেলেদেরকে সাইকেল দিয়ে পাঠাতাম। তখন ছিলো না এখনকার মতো মুঠোফোন। অধিকাংশ সময়েই আমি পুরাণবাজার এলাকার নিউজগুলো বা তথ্যগুলো পুলিশ ফাঁড়ির টেলিফোন দিয়ে পত্রিকা অফিসে কল করে দিয়ে দিতাম। অপর পাশ থেকে মাহবুবুর রহমান সুমন (বর্তমানে ইলশেপাড় পত্রিকার প্রধান সম্পাদক) ও চাঁদপুর প্রবাহের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রহিম বাদশা টেলিফোনে বলা তথ্যগুলো নিয়ে নিউজ করে দিতেন কিংবা পাঠানো নিউজ এডিট করে ছাপিয়ে দিতেন। এভাবেই ২০০০ সালের দিকে প্রিন্ট মিডিয়ার সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ি। চাঁদপুর প্রবাহতে থাকা অবস্থায় মাকসুদ ভাইয়ের সাথে নিউজের বিষয়ে ভালো সম্পর্ক হওয়ার পরই তার সাথে থেকে কিছুদিন জাতীয় পত্রিকা ‘সংবাদে’র জন্যে ছবি তোলার কাজ করেছি।
এরপর মাকসুদ ভাই প্রবাহ ছেড়ে নতুন পত্রিকা ‘আমার চাঁদপুর’ বের করেন। আমি ওই পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকেই জড়িত ছিলাম। মাঝপথে পত্রিকা থেকে বের হয়ে রিপোর্টিং ও ছবি তোলার পাশাপাশি একটি এনজিওর সাথে জড়িয়ে পড়ি। তখন আমি রূপসী রোটার্যাক্ট ক্লাবের সাথে জড়িত ছিলাম। আমি যখন এই ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করি তখন চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের কর্ণধার শ্রদ্ধাভাজন রোটারিয়ান কাজী শাহাদাতের সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। এর আগে এই পত্রিকা অফিসটিতে আমার সাংবাদিকতার গুরু মিজান ভাইয়ের সাথে দেখা করার জন্যে মাঝে মাঝে যেতাম। আমি যখন রোটার্যাক্ট আন্দোলনের সাথে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়ি এবং ‘আমার চাঁদপুর’ ছেড়ে দেই, তখন সাংবাদিক মাকসুদ ভাই আমাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন জেলা শহরে অনেক স্থানীয় পত্রিকা রয়েছে, আপনি যদি কাজ করতেই চান তাহলে চাঁদপুর কণ্ঠে গিয়ে কাজ করেন। প্রয়োজনে আমি আপনার কথা ওই অফিসে বলে দিবো। তিনি আরেকটি কথা তখন বলেছিলেন যে, আমি বেঁচে থাকতে দেখতে চাই যে, এই চাঁদপুর কণ্ঠের বাইরে যেনো আপনি কোনো পত্রিকাতে যোগদান না করেন। ওই সময়টিতে আমিও ব্যক্তিগতভাবে খুব সমস্যায় ছিলাম। আমি একটা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে নামমাত্র বেতনে চাকুরি করতাম। আর মাঝে মাঝে চাঁদপুর প্রেসক্লাব সহ রোটারী ও রোটার্যাক্ট ক্লাবের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠ অফিসে ঘন ঘন আসা-যাওয়া করতাম। একদিন দুপুরে একটি কাজের জন্যে শ্রদ্ধাভাজন কাজী শাহাদাতের কাছে গেলে বিভিন্ন প্রসঙ্গে আলাপ-আলোচনায় চাঁদপুর কণ্ঠে কাজের ব্যাপারে কথা হয়। এরপরই আমাকে প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হয় চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের সাপ্তাহিক সভার নিউজ কভার করার জন্য। এতে আমি অনেকটা চিন্তায় পড়ে যাই, একটি প্রাইভেট (ক্ষুদ্র ঋণদানকারী) প্রতিষ্ঠানে কাজ করে কীভাবে আমি এতো বড় পত্রিকাতে কাজ করবো। এরপর প্রধান সম্পাদকের পরামর্শে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ শুরু করে দেই। আর ওই প্রতিষ্ঠানের কাজ ছেড়ে দেই। যদিও ওই ছেড়ে দেয়া প্রতিষ্ঠানটির একজন শেয়ার হোল্ডার (মালিক ) হিসেবে রয়েছি। চাঁদপুর কণ্ঠে ছোট ছোট নিউজ করার পাশাপাশি ওই বছরই ঈদুল আযহার দিন বিকেল বেলা পত্রিকার বর্তমান বার্তা সম্পাদক ও চাঁদপুর প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি এএইচএম আহসানউল্লাহ ভাই আমাকে দুপুর বেলা ফোন করে বলেন যে, কুরবানির গোশত বিষয়ে গরিবদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করবেন, আর সেই প্রতিবেদনের জন্যে আমাকে ছবি তুলতে হবে। এরপর থেকেই পত্রিকাটির সাথে পত্রিকাণ্ডপরিবারের একজন সদস্য হিসেবে জড়িয়ে পড়ি।
আজও পেশাগত অনেক ব্যস্ততার মধ্য দিয়েও পত্রিকাটির ক্রীড়া বিভাগ ও আইন আদালতের রিপোর্টিংয়ের সাথে জড়িত রয়েছি। জেলা শহরে একজন ফটোগ্রাফার ও সাংবাদিক হিসেবে যদি বলি আমার পরিচয়টি দ্রুত বেড়েছে যেই পত্রিকাটি দিয়ে, সেটি হলো সিকি কোটি মানুষের প্রথম মুখপত্র হিসেবে পরিচিত চাঁদপুর কণ্ঠ। পত্রিকাটিতে যোগ দেয়ার পর আমি পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে কাজ করি। ফলস্বরূপ আমাকে পত্রিকার পক্ষ থেকে প্রধান আলোকচিত্রীর দায়িত্ব দেয়ার পাশাপাশি ক্রীড়াকণ্ঠের বিভাগীয় সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। যখন আমি বিভাগীয় সম্পাদকের দায়িত্ব নেই তখনও শুরুতেই অনেকটা পর্দার অন্তরালে থেকে আমাকে সহযোগিতা করেছেন মিজান ভাই।
প্রায় ১ যুগ ধরে এ বিভাগটির প্রধান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। চাঁদপুর কণ্ঠের কাছে আমি পাওনা না হলেও বলতে গেলে ঋণী। আমি পত্রিকাতে কাজ করা অবস্থায়ই এলএলবিতে পড়াশোনা করেছি। এলএলবি শেষ করে আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল হতে সনদ পেয়ে চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতিতে নিয়মিত অনুশীলন করে যাচ্ছি। পাশাপাশি চাঁদপুর কণ্ঠের একজন কর্মী হিসেবে চেষ্টা করি নিয়মিত ক্রীড়াকণ্ঠ বের করার জন্যে। ক্রীড়াকণ্ঠে কাজ করতে গিয়ে পরিচয় হয়েছে জেলার সাবেক ও বর্তমান সকল পর্যায়ের খেলোয়াড়দের সাথে। জেলা শহরে যখনই কোনো খেলাধুলার আয়োজন করা হয়, তখনই তারা কখনো মুঠোফোনে আবার কখনো সরাসরি এসে খেলাধুলার ব্যাপারে জানিয়ে দেন। পত্রিকাতে কাজ করতে গিয়ে জেলার সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে পরিচয় হওয়ার সুবাদে সহজেই অনেকে চিনেন। আদালতে প্র্যাকটিস করার পাশাপাশি এখন নিয়মিত আদালতের সকল ধরনের সংবাদ সহ খেলাধুলার খবর কাভারেজ করার চেষ্টা করি। আগামীতে যেখানেই যেই অবস্থাতে থাকি না কেনো, চাঁদপুর কণ্ঠ পরিবারের সদস্য হিসেবে সবসময়ই থাকার চেষ্টা করবো। জেলার প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকা ‘'চাঁদপুর কণ্ঠে'র প্রকাশনা যেনো সবসময়ই অব্যাহত থাকে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে এই দোয়াই করি।