শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৩, ০০:০০

সংস্কারের অভাবে খেলাধুলা হচ্ছে না মধুসূদন মাঠে
চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম ॥

চাঁদপুর শহরের ব্যবসায়িক এলাকা হিসেবে পুরাণবাজারের যেমন পরিচিতি ছিলো, তেমনি একসময় খেলাধুলার জন্যে পুরাণবাজারস্থ মধুসূদন হরিসভা হাই স্কুল মাঠ (এলাকায় মধুসূদন মাঠ নামে পরিচিত)-এর ছিলো ব্যাপক পরিচিতি। এই মাঠে জেলা প্রশাসক কাপ ফুটবল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরী স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট, মরহুম আঃ করিম পাটওয়ারী স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট, অ্যাডঃ সেলিম আকবর ফুটবল টুর্নামেন্ট, নতুন কুঁড়ি ক্রীড়া চক্র ফুটবল টুর্নামেন্ট, ফারুক স্পোর্টস্ কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট সহ জেলার বিভিন্ন ব্যক্তির নামে হয়েছে লীগ সহ ফুটবল টুর্নামেন্ট। কিন্তু গত ক’বছর ধরে এ মাঠে গড়াচ্ছে না কোনো ধরনের খেলা। মাঝে মাঝে যদি কিছু আয়োজন করা হয় মিনি সাইজের, সেটা হয় স্থানীয় বিভিন্ন ক্লাবের নামে।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার অন্তর্ভুক্ত ৪টি ক্লাব রয়েছে পুরাণবাজার এলাকায়। একটি ক্লাব রয়েছে মাঠের সাথেই। কিন্তু কেউই খেলাধুলার আয়োজন কিংবা খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না। সামান্য বৃষ্টি হলে মাঠটি পানিতে টইটম্বুর হয়ে যায় এবং রোদের সময় মাঠটির মাটি অনেক শক্ত হয়ে যায়। মাঠের মধ্যে ঘাস তেমন চোখে পড়ে না। সংস্কার না করার কারণে কোনো ধরনের খেলাধুলাই হচ্ছে না এই মাঠটিতে।

স্থানীয় এলাকাবাসী অনেকেই এই প্রতিবেদককে জানান, পুরাণবাজার মধুসূদন মাঠটির অনেক জায়গাই ছিলো। এ মাঠটির পাশে ছিলো বেশ ক'টি বড় বড় পুকুর। সবকিছুই দখল, এমনকি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও দান করা হয়েছে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির কিছু কর্তাব্যক্তির হস্তক্ষেপের কারণে। যারা একসময় এই মাঠে নিয়মিত খেলেছেন, এদের মধ্যে অনেকেই দেশের বাইরে চলে গেছেন, আবার অনেকেই নিজের পরিবারের সাথে অন্য জেলায় চলে গেছেন। তারা যদি পুরাণবাজার আসেন এবং তাদের সেই পুরানো খেলার মাঠ দেখেন, তখন তারা নিজেরাই যেনো মাঠটিকে চিনেন না।

মাঠের পাশে থাকা অনেক ক্রীড়া সংগঠক এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে জানান, চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র ছিদ্দিকুর রহমান ঢালীর আমলে পুরাণবাজার মধুসূদন মাঠে যেইভাবে খেলাধুলা হতো, এখন আর তেমন কোনো ধরনের খেলাধুলাই হয় না। গত তিন বছর ধরে সরকারি কর্মসূচিতেও কোনো ধরনের খেলাধুলার আয়োজন হচ্ছে না এ মাঠটিতে।

পুরাণবাজার মধুসূদন মাঠটি পরিবর্তন না হলেও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাহিদা মেটানোর জন্যে মাঠটির পাশে স্কুল নির্মাণের পর নির্মাণ করা হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্যে মার্কেট অনুযায়ী দোকান। ওই সময় এই মার্কেটে লাইব্রেরীসহ বিভিন্ন ঔষধের দোকান ছিলো। জানা যায় যে, পুরাতন মার্কেটের ওই ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর নূতনভাবে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় ওই পুরাতন ভবনের সকল কিছু ভেঙ্গে নতুনভাবে নিচতলায় ২১টি দোকান করা হয়। আর বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দোতলাটি নিজেরাই নিয়ে নিয়েছেন নামমাত্র মূল্যে। শিক্ষকরা সেই দোতালটি নিয়ে দুটি প্রাইভেট ব্যাংককে ভাড়া দিয়েছেন। দোতলার পুরো ভাড়ার টাকাটাই শিক্ষকরা নিচ্ছেন। এমনকি বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নিচে যে ২১টি দোকান নতুনভাবে করা হয়েছে, এর মধ্যে পরিচিত একটি হোটেলও রয়েছে। কিন্তু এই দোকানগুলো যারা ভাড়া নিয়েছেন বা তাদের কাছে আগত গ্রাহকরা পয়ঃনিষ্কাশন সহ টয়লেটের তেমন কোনো সুবিধাই পাচ্ছে না। ওই সমস্ত দোকানের কর্মচারী সহ অন্যরা তাদের প্রাকৃতিক কাজের জন্যে খেলার মাঠটিকে বেছে নেয়। মাঠের পাশেই মার্কেটের কাজ হলেও স্কুল পড়ুয়া ছাত্রদের খেলার ব্যাপারে যেনো কোনো ধরনেরই আগ্রহ নেই স্কুল কর্তৃপক্ষের । স্কুল থেকে সাপ্তাহিক বা মাসিক কোনো ধরনের খেলাধুলার আয়োজনও করা হয় না এই মাঠটিতে।

মধুসূদন হরিসভা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে এ প্রতিবেদকের মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, মাঠটি সংস্কারের প্রয়োজন খেলাধুলার জন্যে। কিন্তু এতো বড় মাঠ সংস্কারের কাজ বিদ্যালয়ের পক্ষে একা করা সম্ভব নয়। মাঠটি সংস্কার করতে হলে বাইরের কিংবা বিত্তবান সহ অন্যদের সহযোগিতা দরকার। ‘খেলার মাঠ ঠিকমতো সংস্কার করা না হলেও দোতলা করেছেন মার্কেটের জন্যে’ এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের টাকায় দোতলা হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই সেই দোতলা ভাড়া দিয়েছেন প্রাইভেট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে। নিচতলার মার্কেটের মানুষজনদের টয়লেট সুবিধার এবং মার্কেট নির্মাণ হলেও খেলার মাঠটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি তেমন সদুত্তর দিতে পারেননি।

মধুসূদন মাঠ লাগোয়া ভাই ভাই স্পোর্টিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য ক্রীড়া সংগঠক মিজানুর রহমান খান বাদলের সাথে আলাপকালে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা খেলাধুলার জন্যে চেষ্টা করলেও কী লাভ হবে। আমরা ক্লাবের নাম নিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট খেলাগুলোতে অংশ নেই। ডাঃ দীপু মনি এমপির পৃষ্ঠপোষকতা ও তাঁর বাবার নামে আয়োজিত ক্রিকেট লীগ ও ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হলেও বর্তমান জেলা ক্রীড়া সংস্থার সেক্রেটারির ও কমিটির অন্য দায়িত্বশীলদের অবহেলার কারণে শিরোপা এখনও পাইনি। তাহলে কীভাবে আমরা খেলাধুলার আয়োজন করবো? আর এই মাঠেই আমাদের ক্লাব থেকে খেলাধুলা চালিয়েছি বেশি। ক্লাবের আয়োজনে এ মাঠে বিভিন্ন ফুটবল টুর্নামেন্টে দেশসেরা অনেক ফুটবলার খেলেছেন। কিন্তু মাঠটি ঠিক না থাকার কারণে গত ক'বছর ধরে এ মাঠে কোনো ধরনের খেলাধুলাই হচ্ছে না।

এক সময় জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে মধুসূদন মাঠে জেলা প্রশাসক কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হলেও গত ১০ বছর ধরে খেলাধুলার কোনো আয়োজন নেই এই মাঠে। মাঠটি সংস্কার জরুরি। সংস্কার হলেই খেলোয়াড়রা মাঠে ফিরে আসবে। এখন সকল স্থানেই ক্রিকেট ও ফুটবলের জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাই মাঠটি সংস্কার করা হলে মাঠে ক্রিকেটারদের জন্যে ক্রিকেট পিচ এবং ফুটবলারদের জন্যে মাঠের চারপাশ ঠিক করা যাবে।

পুরাণবাজার এলাকায় বসবাসকারী বেশ ক’জন ব্যবসায়ী, সংগঠক ও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষজনদের সাথে আলাপকালে তারা মধুসূদন মাঠটির বিষয় জানতে চাইলে অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা এ প্রতিবেদককে বলেন, মাঠটি সংস্কার হলে খেলাধুলা সহ খেলোয়াড়দের সংখ্যা বাড়বে। তারা আরো বলেন, মাঠটি তো অনেকদিন অনেকটা ঠিকই ছিলো। এ মাঠেই তো বিভিন্নজন বিভিন্ন কাজের তদবির করে মাসব্যাপী মেলা চালিয়েছেন। মেলার মাঠে কোটি কোটি টাকার জুয়া হয়েছে। সেই টাকাতো স্কুল কর্তৃপক্ষসহ অনেকেরই পকেটে গেছে। ইচ্ছে করলে তো সেই মাঠ ভাড়া দেয়ার টাকা দিয়েই মাঠটি সংস্কার করা যেতো। মাঠের পাশেই তো বিভিন্ন জনের বসবাস। তারা তো অনেকেই সকাল বেলা প্রাতঃভ্রমণ সহ রাতের বেলা শারীরিক সুস্থতার জন্যে মাঠে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। তারা জানান, এই মাঠটিতে ঢোকা যায় না। গেইটটিতে বিভিন্ন সময়েই তালা থাকে। মাঠটিতে ঢুকতে হলে স্কুলের সামনে দুটি গেইট রয়েছে। এর মধ্যে বড় গেইটটি বেশিরভাগই বন্ধ রাখার কারণে শহীদ মিনারের পাশের লোহার গ্রিল ভেঙ্গে ছোট ছোট ছেলেরা মাঠে ঢুকতো। এছাড়া একটি ছোট গেইট তো সন্ধ্যার পর খোলা থাকতো। গেইটের চাবিটি থাকতো কোনো এক ব্যক্তির কাছে, তার যখন সময় হতো তখনই এ গেইটটি খোলা হতো। যদি মানুষের সুবিধার জন্যে নির্দিষ্ট সময়ে গেইট খোলা থাকতো, তাহলে অনেক উদীয়মান খেলোয়াড়ের সংখ্যা বাড়তো। দিন দিন পুরাণবাজারে খারাপ ছেলেদের সংখ্যা বাড়তো না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়