দেশের ক্রীড়াঙ্গনের ফুটবল কিংবা ক্রিকেট সহ ক্রীড়াভিত্তিক অন্যান্য ইভেন্টের সেরা খেলোয়াড়রা বের হয়েছে বিকেএসপি (বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান)-এর মাধ্যমে। আর সেই বিকেএসপিতে উঠতি বয়সেই প্রশিক্ষণের সুযোগ পেলো চাঁদপুরের দু প্রমীলা ফুটবলার। অবশ্য এরা দুজনেই চাঁদপুরের ফুটবল কোচ ও সাবেক ফুটবলার, চাঁদপুর কিশোর ফুটবল একাডেমীর প্রধান কোচ ইউসুফ বকাউলের শিষ্য। এরা হলেন ইভা আক্তার ও সুইখ্যাইউ মারমা। এরা দুজনেই একসাথে দীর্ঘদিন ধরে ফুটবল কোচের মাধ্যমে মঠখোলা শিশু পরিবার মাঠে অনুশীলন করেছে।

চলতি বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রাম বিভাগে বিকেএসপির তৃণমূল পর্যায়ে জোনভিত্তিক ক্রীড়া প্রতিভা অন্বেষণ ও নিবিড় প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে জেলা পর্যায়ের খেলোয়াড়দের বাছাই কর্মসূচি সম্পন্ন হয়। সেই বাছাই কার্যক্রমে চাঁদপুর জেলার পৌরসভা সহ ৮ উপজেলার এবং স্থানীয় দুটি ফুটবল একাডেমীর প্রমীলা ফুটবলাররা অংশ নেয়। চাঁদপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বাছাই কার্যক্রমে কোচ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিকেএসপির ফুটবল কোচ সহ অন্যরা। এই বাছাই কার্যক্রমে অনূর্ধ্ব ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী খেলোয়াড়দেরকেই বাছাই করা হয়। বাছাই কার্যক্রম শেষ করে বিকেএসপির দলটি চলে গেলেও গত মাসে এই দুই খেলোয়াড়ের কোচ ও সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকের মাধ্যমে জানানো হয়, বাছাই কার্যক্রমে এই দুই প্রমীলা ফুটবলারকে ২ মে বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যে ঢাকার সাভারে জিরানী বাজারে অবস্থিত বিকেএসপিতে গিয়ে রিপোর্ট করতে হবে। এ বিষয়টি এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে নিশ্চিত করেছেন বিকেএসপির আবাসিক প্রমীলা ফুটবল কোচ বীথি। তিনি জানান, প্রথম পর্যায়ে সারাদেশ থেকে বাছাইকৃত ৫০ জন খেলোয়াড়কে নিয়ে বিকেএসপিতে আবাসিক ফুটবল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। সেখানে ফুটবল কোচ শাহিনুল হক সহ অন্যান্য কোচের তত্ত্বাবধানে বয়সভিত্তিক ফুটবলারদের প্রশিক্ষণ চলবে। এরপর দেশের বয়সভিত্তিক দল গঠনের জন্যে মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ শেষে ওই ৫০ জনের মধ্য থেকে বাছাই করা হবে। বাছাইকৃতদের নিয়ে পরবর্তীতে বিকেএসপিতে দু’মাসের আবাসিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

বিকেএসপি সূত্রে আরো জানা যায় যে, প্রতিটি জেলায়ই দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ নিধারিত ছক অনুযায়ী খেলোয়াড়দের বয়স যাচাই-বাছাই, শারীরিক যোগ্যতা ও সংশ্লিষ্ট খেলায় পারদর্শিতার বিষয় পর্যবেক্ষণ করেছেন। সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে ২১টি বিভাগে প্রায় ১০০০ জনকে বাছাই করা হয়। তাদেরকে নিয়েই বিকেএসপি ঢাকা এবং বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহে মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশগ্রহণকারী প্রশিক্ষণার্থীদের বিকেএসপি কর্তৃক থাকাণ্ডখাওয়া, যাতায়াত ভাড়াসহ প্রয়োজনীয় ক্রীড়া সাজ-সরঞ্জাম প্রদান করা হবে। প্রশিক্ষণে সফল খেলোয়াড়দেরকে বিকেএসপি থেকে সনদ প্রদান করা হবে।

ঢাকায় বিকেএসপিতে চাঁদপুরের হয়ে সুযোগ পাওয়া দুজন প্রমীলা ফুটবলার জন্মসূত্রে দু জেলার। এর মধ্যে ইভা চাঁদপুর সদরের এবং সুইখ্যাইউ মারমা রাঙ্গামাটির।

সুইখ্যাইউ মারমা ২০১৮ সাল থেকে চাঁদপুর সরকারি শিশু পরিবারে থাকাণ্ডখাওয়া, পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে। সে বাবুরহাট হাই স্কুল এন্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। তার বাবার নাম ক্যাইচিং মারমা ও মাতার নাম মাথুইচিং মারমা। তার পরিবারের সদস্যদের বসবাস রাঙ্গামাটির মিতিয়াছড়ি পাড়াতে। এ প্রতিবেদেকের সাথে আলাপকালে সে জানায়, আমি তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াবস্থায় ফুটবল খেলা শুরু করি। এরপর চাঁদপুর আসার পর এই শিশু পরিবারের মাধ্যমে পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত খেলাধুলা চালিয়ে যাই। আমি মধ্যমাঠে খেলতে পছন্দ করি। আমাদের শিশু পরিবারের আনোয়ার স্যার ও চাঁদপুরের কিশোর ফুটবল একাডেমীর প্রধান ফুটবল কোচ ইউসুফ বকাউল স্যারের মাধ্যমে আমরা শিশু পরিবারের মাঠে নিয়মিত অনুশীলন করি। প্রতিদিন বিকেলে আমরা গত ক'বছর ধরে নিয়মিত খেলাধুলা করছি। চাঁদপুরে বিকেএসপির বাছাই কার্যক্রমের দিন আমি সেখানে অংশ নেই। আমার লক্ষ্য থাকবে প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে প্রথম পর্যায় থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ে এমনকি সবর্শেষ পর্যায় পর্যন্ত ভালো খেলার মাধ্যমে দলে টিকে থাকা।

ঢাকায় বিকেএসপিতে সুযোগ পাওয়া আরেকজন প্রমীলা ফুটবলার হচ্ছেন ইভা আক্তার। তার বাবার নাম মোঃ ইসমাইল ঢালী ও মায়ের নাম মনুজা বেগম। তাদের বাড়ি হচ্ছে চাঁদপুর সদর উপজেলার জেলখানা সংলগ্ন ঢালী বাড়ি। সে পড়াশোনা করছে বাবুরহাট হাই স্কুল এন্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণীতে। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে সে জানায়, চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বাবুরহাট হাইস্কুলের পক্ষ হয়ে ফুটবল খেলাতে অংশ নিতে যাই। সে সময় প্রমীলা ফুটবলার বাছাই কার্যক্রমে ইউসুফ বকাউল সহ অন্য স্যাররা অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে চাঁদপুর কিশোর ফুটবল একাডেমীর প্রধান কোচ ইউসুফ বকাউল স্যার আমাকে তাদের একাডেমিতে অনুশীলন করার সুযোগ করে দেন। এরপর আমার বাসার নিকটে শিশু পরিবারে স্যার অন্য ফুটবলারদের অনুশীলন করানোর কারণে আমি সেখানে গত ৭/৮ মাস ধরে স্ট্রাইকার হিসেবে নিয়মিত অনুশীলন করে যাচ্ছি। আমিও অন্যান্য ফুটবলারের সাথে বিকেএসপির তৃণমূল পর্যায়ের বাছাই কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলাম। পরে আমি যেই মাঠে অণুশীলন করি সেখানে আনোয়ার স্যার ও ইউসুফ বকাউল স্যার আমাকে জানান যে, আমি মাসব্যাপী বাছাই কার্যক্রমে সুযোগ পেয়েছি। আমার লক্ষ্য থাকবে প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে প্রথম পর্যায় থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ে এমনকি সর্বশেষ পর্যায় পর্যন্ত খেলার মাধ্যমে দলে টিকে থাকা।