শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

চাঁদপুর স্টেডিয়ামে চলছে জয়নুল কারাতে ও জুডো সেন্টারের প্রশিক্ষণ
চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম ॥

কারাতে অনুশীলন মনকে শক্তিশালী করে, সংযম গড়ে তোলে। একটি পরিষ্কার চিন্তা প্রক্রিয়ায় একজনের মানসিক ক্ষমতা সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি এবং আর আত্মবিশ্বাসও গড়ে উঠে। এটি পুরো শরীরকে শক্তিশালী করে, সমন্বিতভাবে উন্নত করে, প্রতিবিম্ব দ্রুত করে, স্ট্যামিনা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য তৈরি করে। সেই সাথে এর আছে আরো নানান উপকারিতা। আর এই নানা উপকারিতা সহ শিক্ষাথীদের ভয়কে দূর করতে এবং নিত্যনতুন কৌশল জানাতেই চাঁদপুর স্টেডিয়ামে চলছে জয়নুল কারাতে ও জুডো সেন্টারের প্রশিক্ষণ। এ প্রশিক্ষণ সেন্টারের প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবে রয়েছেন চাঁদপুরের পরিচিত মুখ চাঁদপুর জেলা কারাতে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইন্টারন্যাশনাল ব্লাক বেল্ট (৩য় ড্যান) প্রাপ্ত জয়নুল আবেদীন।

কারাতে পৃথিবীতে খুবই জনপ্রিয় মার্শাল আর্টগুলোর একটি। কারাতে শিখার মাধ্যমে ও কারাতে চর্চা করার ফলে মনে সাহস সঞ্চার হয়। যা বিপদে পড়লে আত্মরক্ষায় কাজে লাগে। শরীর চর্চা হয়। যার ফলে শরীর-মন উভয়ই সতেজ থাকে। কারাতে যে শরীর চর্চা হয়, তাতে শারীরিক বিভিন্ন ব্যাধি দূর হয়ে শরীর সুস্থ-সবল থাকে। এর ফলে মন থেকে অপরাধমূলক চিন্তা-ভাবনা দূর হয়। কারাতে একটি আঘাতের কৌশল, যেটি ঘুষি, লাথি, হাঁটু এবং কনুইয়ের আঘাত ও মুক্তহস্ত কৌশল (যেমন ছুরিহস্ত) ব্যবহার করে। কিছু স্টাইলে আঁকড়ে ধরা, আবদ্ধ করা, বাঁধা, আছাড় এবং অতীব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আঘাত শেখানো হয়। কারাতে অনুশীলনকারীকে কারাতে বলা হয়।

চাঁদপুর জয়নুল কারাতে ও জুডো আর্ট সেন্টারটি জেলা শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রশিক্ষক জয়নুল আবেদীন পাকিস্তানের করাচিতে কারাতে গ্র্যান্ডমাস্টার আশরাফ তাই থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বেল্টপ্রাপ্ত হয়ে দেশে ফিরে এ প্রতিষ্ঠানটি করেন। তার এই প্রতিষ্ঠানে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। মাঝখানে বেশ কিছুদিন এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও গত ক'বছর ধরে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আবারও প্রতিষ্ঠানটি চালু করেছে। স্বাস্থ্যরক্ষা ও আত্মরক্ষার জন্য মার্শাল আর্ট শিখুন। কারাতে শিখে হই সুস্থ-সবল, কারাতেই শক্তি, কারাতেই বল। কারাতে শিখুন, খালি হাতে আত্মরক্ষা করুন, নিজে শিখুন, অন্যকে শিখাতে উৎসাহিত করুন--এই শ্লোগানকে সামনে রেখেই চলছে তাদের কার্যক্রম। সেন্টারের সহকারী প্রশিক্ষক হিসেবে রয়েছেন ব্ল্যাক বেল্ট হোল্ডার মোঃ আনিসুর রহমান, মোঃ ওমর ফারুক ও সুমন আহমেদ।

কারাতে ও জুডো জাপানি মূলের মার্শাল আর্ট। উভয়ের পৃথক বৈশিষ্ট্য আছে। জুডোকে একটি নরম মার্শাল আর্ট বলা যেতে পারে, যা মূলত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শারীরিক কর্মকাণ্ডকে জড়িত করে। কারাতে একটি কঠোর মার্শাল আর্ট, বলা যেতে পারে যেখানে প্রতিপক্ষের শরীরের উপর আঘাত হানা হয়।

একটি কারাতে এক্সপোনেন্ট প্রতিপক্ষের উপর আঘাত হানবে এবং কেউ কেউ জুডোতে অনুশীলন করার চেষ্টা করবে তাকে ছুঁড়ে ফেলতে। কারাতে মার্শাল আর্টের আক্রমণাত্মক ফর্ম, যদিও জুডো কেবল মার্শাল আর্টের প্রতিরক্ষামূলক ফর্ম। যুদ্ধের একটি উপায় হিসেবে কারাতে খুব সামান্য নাটক,

জুডো মূলত দৌড় প্রতিযোগিতা সম্পর্কিত। কারাতে অন্যদিকে, অন্য মানুষকে বা তাদের অবতরণে বাধা দেয়ার প্রক্রিয়ায় বা বস্তুর (স্মাশিং বোর্ড এবং বস্তুর মতো) বেশ চমকপ্রদ দেখায়। এটা কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, যখন জুডো বেশিরভাগ সিনেমাতে বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয় না, কারাতে অনেক চলচ্চিত্রের প্রধানতম। একটি উদাহরণ হলো, হলিউড থেকে সিনেমা কারাতে কিড সিরিজ।

জুডোর মধ্যে স্ট্র্যাটেশন জাগতিক শক্তি বা নিছক শক্তি না হয়। এটি একটি মৃদু কিন্তু দৃঢ় আত্মরক্ষামূলক মনোভাবের সাথে আরও কিছু করতে হবে, যেখানে শরীরও এটি পীড়াপীড়ি এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দৃষ্টিভঙ্গির মতো প্রতিদ্বন্দ্বী আপনাকে উচ্চ হাত পেতে দেয়। অন্যদিকে কারাতে একটি সরাসরি এবং মুখোমুখি মনোভাবের পদ্ধতি, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বীর পদক্ষেপের সাহসীভাবে ব্লক করেন এবং হাত ও পা দিয়ে জোরালোভাবে আক্রমণ করা হয় বলে প্রশিক্ষক ও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়।

সেন্টারে প্রশিক্ষণ নেয়া প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়ে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে সম্মাননা স্মারক ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রশিক্ষণার্থীসহ তাদের অভিভাবক ও শহরের বিভিন্ন সুধীজন এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

সেন্টারের প্রধান প্রশিক্ষক জয়নুল আবেদীনের সাথে এ প্রতিবেদককের আলাপকালে তিনি বলেন, আমি করাচি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসার পরই চাঁদপুরে প্রথম প্রতিষ্ঠানটি চালু করি। ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক শিক্ষার্থীই প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এরপর আমার ব্যক্তিগত কর্মব্যস্ততার কারণে অনেকদিন এর কার্যক্রম বন্ধ ছিলো। এর মধ্যে আমি চাঁদপুর জেলা হকার্স সমিতির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বসহ অনেক কিছুর সাথে জড়িয়ে পড়ি। ২০২১ সালের শেষদিকে বর্তমান সহকারী প্রশিক্ষকরা সহ মরহুম অ্যাডঃ মাহবুবুল আলমের অনুপ্রেরণায়ই আমি আমার এ সেন্টারটি চালু করি। বর্তমানে প্রায় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী আমার প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে রয়েছে। আমাদের এ প্রতিষ্ঠান থেকে সপ্তাহে ৩দিন বিকেলে অনুশীলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা অনুশীলনগুলো চাঁদপুর স্টেডিয়ামে করে থাকি। শুক্রবার সকালে এবং শনিবার ও বুধবার বিকেলে আমাদের প্রশিক্ষণ চলে। তিনি জানান, জুডো একটি নরম মার্শাল আর্ট, যা প্রধানত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শরীরের সধহবাঁবৎং জড়িত। কারাতে একটি মারাত্মক মার্শাল আর্ট নামে অভিহিত হতে পারে, যেখানে প্রতিপক্ষের শরীরে আঘাত হানা হয়।

কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী সাবিত ও ফাইয়াজ এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা প্রায় ১ বছরের বেশি সময় ধরে স্যারদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। এটা আমাদের আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশল সহ নিজেদের শারীরিক শক্তির জন্যে বিশেষ কাজে লাগবে।

সেন্টারের শিক্ষার্থী নূসরাত জাহান ইভা ও গুলজার হোসেন এ প্রতিবেদকে বলেন, আমরা যারা এখানে প্রশিক্ষণ নিতে আসি, তাদের মধ্যে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীই বেশি। আমাদের প্রশিক্ষণের সময় অনেক লোকজনই এসে প্রশিক্ষণ দেয়। জেলা পর্যায়ে আমরা যারা অনুশীলন করি, এ বিষয়ে যদি জেলা ক্রীড়া সংস্থা বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, তাহলে কী শিখছি তা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দর্শকদের মাঝে দেখাতে পারবো। আমরা চাই, চাঁদপুরে অন্যান্য ক্রীড়াভিত্তিক ইভেন্টগুলোর পাশাপাশি আগামীতে যেনো কারাতে ও জুডো প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়