শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

ফুটবল মাঠ থেকে বিদায় নিলেন গোলাম মোস্তফা বাবু
চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম ॥

খেলা শুরু হয়েছিলো ঢাকার ২য় বিভাগ ফুটবল দিয়ে। আর পুরোপুরি ফুটবল খেলা থেকে বিদায় নিলেন সেই ঢাকাতেই। সাবেক ফুটবলারদের নিয়ে আয়োজিত কনফিডেন্স মাস্টার্স কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ২য় দিনের (২৯ ডিসেম্বর) খেলায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ও দেশের আশির দশকের ফুটবলারদের উপস্থিতিতেই চূড়ান্তভাবে বিদায় নিলেন বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ (সবুজ) দলের খেলোয়াড় ও চাঁদপুর সোনালী অতীত এবং চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবু। ১৯৮৪ সাল থেকে ফুটবল খেলা শুরু করলেও টানা ১০ বছর তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন মাঠে খেলেছেন। খেলা ছেড়ে দেয়ার পর সাবেক সতীর্থদের নিয়ে সোনালী অতীত ক্লাবের খেলাগুলোতে গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত অংশ নিয়েছিলেন। সোনালী অতীত ক্লাব চাঁদপুরের হয়ে খুলনা, চট্টগ্রাম, নরসিংদী ও ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলাতে অংশ নিয়েছিলেন ফুটবলে। সেই ফুটবলারের এখন একটিই বক্তব্য, আমি আর কোনোদিন ফুটবল খেলবো না এবং খেলতেও নামবো না। ঢাকায় বিদায়কালে সাবেক ফুটবলারদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শেখ মোঃ আসলাম, হাসানুজ্জামান বাবলু, ইউসুফ, ডাবলু, সুলতান, চাঁদপুরের মফিজ চৌধুরী, মনোয়ার চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন মানিক, বোরহান খান, জাহাঙ্গীর গাজী, ইউসুফ বকাউল, তুহিন, মনা পাল সহ জেলার সাবেক ফুটবলারগণ।

খেলাধুলা করা পরিবারেই গোলাম মোস্তফা বাবুর জন্ম। তার বাবা ও বড়ভাই খেলেছেন ফুটবলে জাতীয় পর্যায়ে। তার বাবার নাম মরহুম আবুল হোসেন ভূঁইয়া। তিনি একসময় চাঁদপুরের হয়ে নিয়মিত ফুটবল খেলতেন। চাঁদপুরের সাবেক ফুটবলার অমল দত্ত সহ অনেক ফুটবলারের সাথে তিনি মহকুমার হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলাতে খেলেছেন। তার বড়ভাই মোস্তফা হোসেন মুকুল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি ঢাকার সেরা ক্লাবগুলোতে খেলাসহ আশির দশকে নিয়মিত জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন। বর্তমানে তিনি সপরিবারে আমেরিকাতে বসবাস করছেন।

গোলাম মোস্তফা বাবু ৬ বোন ও ২ ভাইয়ের মধ্যে সপ্তম। তার স্ত্রীর নাম রুমানা মোস্তফা। তার বড় মেয়ে তানসিনা মোস্তফা চাঁদপুর কালেক্টরেট স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক। ছেলে রুবায়েত মোস্তফা পড়াশোনা করছেন কালেক্টরেট স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে। খেলাধুলা ছেড়ে দিলেও খেলোয়াড়দের সাথে চলা এবং সংগঠকের দায়িত্ব নিয়ে সাংগঠনিকভাবে সময়টুকু চালিয়ে যেতে চান তিনি।

গোলাম মোস্তফা বাবু ১৯৮৪ সালে ঢাকায় ফুটবল খেলা শুরু করেন। ফায়ার সার্ভিসের হয়ে জাতীয় স্টেডিয়ামের পার্শ্বে তৎকালীন আউটার (বর্তমানে ভাসানী স্টেডিয়াম) খেলতে নামেন। তিনি শুরু থেকে রাইটব্যাক (ডিফেন্সই) খেলতেন। ১৯৮৫ সালে ২য় বিভাগ ফুটবলে বিজেএমসির হয়ে খেলেন। ওই বছর ক্লাবটি রানার আপ হয়ে প্রথম বিভাগে উঠতে না পারায় তিনি ক্লাব বদল করেন। ১৯৮৬ সালে প্রথম বিভাগ ফুটবলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদের হয়ে খেলতে নামেন। তিনি এই ক্লাবটিতে দলীয় অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই ক্লাবটিতে টানা ৪ বছর খেলেন। ১৯৯১ সালে প্রথম বিভাগ ফুটবলে আবাহনী ক্রীড়া চক্রের হয়ে খেলতে নামেন। তখন তার সাথে একই ক্লাবে ছিলেন মোনেম মুন্না, মহসিন, ওয়াসিম, ইউছুফ, রনজিত, রেহান ও গাউস। ওই বছর ইনজুরির কারণে দলের হয়ে খেলাতে অংশ নিতে পারেননি। সুস্থ হতে হতে দলের খেলা শেষ হয়ে যায়। অবশ্য ওই বছরই বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে সবুজ দলের সদস্য হয়ে অংশ নেন। একই বছর চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে নিয়মিত চট্টগ্রামে খেলেন। ১৯৯২ সালে ঢাকা লীগে দলবদল করে প্রথম বিভাগ ফুটবলে দেশসেরা ফুটবল কোচ আঃ রহিমের তত্ত্বাবধানে ফকিরাপুলের হয়ে খেলেন। ১৯৯৩ সালে চাঁদপুরের কৃতী সন্তান, চাঁদপুর সদর আসনের সাবেক সাংসদ ও তৎকালীন আরামবাগ ক্লাব ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি এসএ সুলতান টিটুর আমন্ত্রণে ফেডারেশন কাপ ও প্রথম বিভাগ ফুটবলে আরামবাগের হয়ে নিয়মিত খেলেছেন। তখন তার সাথে চাঁদপুরের ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন আনোয়ার হোসেন মানিক, জাহাঙ্গীর গাজী, বোরহান খান, ঢাকার ডাবলু, হীরা সহ অনেকেই। একই বছর ঢাকায় ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে মাঠে খেলাকালীন নাইজেরিয়ান এক ফুটবলারের সাথে বাম পায়ের হাঁটুতে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাকে। প্রচুর ইনজুরি নিয়ে তাকে অনেক দিন মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে। ১৯৯৪ সালে ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাবেক ফুটবলার মালার আমন্ত্রণে রহমতগঞ্জের হয়ে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল ও ফেডারেশন কাপ ফুটবলে খেলেন।

এছাড়াও দেশের বাইরে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের হয়ে নেপালে এবং ভারতে ফুটবল খেলেন। মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের হয়ে ১৯৮৮ সালে ভারতের সিকিমে অলইন্ডিয়া গভর্নর গোল্ডকাপে খেলেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের হয়ে নেপালের ত্রিভুবন চ্যালেন্সশীপ ফুটবলে অংশ নিয়েছিলেন। ওই দলে তার সাথে ছিলেন সাবেক ফুটবলারদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন মানিক, জিয়া বাবু, নুরুল হক মানিক, সিপার, ইকবাল, তুহিন, শিমুল। তখন তার ফুটবল কোচ গাজী ওস্তাদই ছিলেন তাদের অনুপ্রেরণা। নেপালে ওই দেশের এয়ারলাইন্স দলের সাথে মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদের খেলা ছিলো। খেলা গোলশূন্য ড্র হওয়ায় দুদলকেই যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ওই সময় প্রচণ্ড শীত ছিলো। শিলাঝড়ে ঠিকমতো খেলা শেষ করা যায়নি। মাঠে দর্শক ছিলো প্রচুর। শিলাঝড় থেকে বাঁচতে হুড়োহুড়ি করতে যেয়ে তখন অনেক লোকই মারা যায়। এ ঘটনায় তখন নেপালে ৩দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছিলো।

গোলাম মোস্তফা বাবু তৎকালীন কুমিল্লা ও পরবর্তীতে চাঁদপুর জেলার হয়ে যুব ফুটবল (সোহারওয়ার্দী কাপ), শেরে বাংলা কাপ ফুটবলে নিয়মিত খেলেছেন। চাঁদপুর ফুটবল লীগে তার নিজ ক্লাব পূর্ব শ্রীরমাদী, পরবর্তীতে বিষ্ণুদী, মোহামেডান ও আবাহনীতে খেলেছেন। তিনি আন্তঃকলেজ ফুটবলে চাঁদপুর সরকারি কলেজের হয়ে নিয়মিত খেলেছেন। চট্টগ্রাম ফুটবল লীগে ১৯৮৫ সাল থেকে শুরু করে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত আগ্রাবাদ নওজোয়ান ক্লাব সহ ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ক্লাবে খেলেছেন। কুমিল্লা লীগে কুমিল্লা ওয়ান্ডারার্স, হিডেন হিরোজ (বর্তমানে আবাহনী ক্লাব) নিয়মিত খেলেছন। চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ২০১০ সাল থেকে টানা তৃতীয় বারের মতো সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি জানান, আমার ফুটবল খেলার পিছনে তৎকালীন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনির আহমেদের অবদান ছিলো অনেক বেশি। এছাড়া অমল দত্ত, মফিজ চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন মানিকের অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। আমি সবার কাছে দোয়া চাই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়