প্রকাশ : ১২ মে ২০২৪, ০০:০০
মানবতার জয়ধ্বনি

সমাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষানীতি, ধর্মনীতি, রাজনীতি পর পর ‘নীতি’ অক্ষরযুক্ত হওয়ায় আমরা শব্দগুলো ধারণ লালন-পালন সমীহ-সম্মান প্রদর্শন করি। এই নীতিযুক্ত শব্দগুলোর সাথে একটির সাথে অন্যটির যোগসূত্র অভিন্ন। এই অভিন্নতার সমষ্টিগত ভূতরূপ হলো ‘মানবতা’।
মানুষ মানুষের জন্যে। মানবতা হলো শান্তিপ্রিয় সমাজের অলঙ্কার। এই অলঙ্কার যতো বেশি গায়ে জড়াবে সমাজ-সভ্যতা ততোধিক উন্নতর হবে। মৌলিক চাহিদা পূরণে অক্ষমতার হেতুতে মানবতার স্বরূপ আমরা দেখে পাই। অন্ন-বস্ত্র-চিকিৎসা-শিক্ষা-বাসস্থানের সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিতদের বিভিন্নভাবে সহায়তাকারীদের প্রচলিত ভাষায় মানবতার ‘ফেরিওয়ালা’ বলে। ক্ষুধার্তকে অন্নদান, বিবস্ত্রকে- বস্ত্র পরিধান, অসুস্থদের চিকিৎসায় সুস্থতা, শিক্ষাবঞ্চিতদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করা, আশ্রয়হীনদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, ধর্মীয় মানবিক মূল্যবোধে জাগরিত হয়েই পরস্পর পরস্পরকে সহমর্মিতা দেখানো হয়।
সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই মানুষ পরোপকারী। সভ্যতার ভরপুর যুগে মানবতার প্রসার বহুমাত্রিক। আজ বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে দিগন্তে দিগন্তে একে অপরের সুখে-দুঃখে একাত্মতা প্রকাশ করে। বিশেষ করে, মানবতাবিরোধী অপকর্মের ঘটনায় বিশ্বের শান্তিপ্রিয় গণমানুষ প্রতিবাদে সোচ্চার দেখা যায়। ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে গণহত্যার মদদপুষ্ট পাকিস্তানের পক্ষালম্বনকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য ইশারায় ইসরায়েল বাহিনী এবার ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নৃশংসভাবে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠে। বিশ্ব বিবেকবান ও মানবতাবাদীদের সাথে সাথে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণমানুষ বিশেষ করে, ছাত্র-শিক্ষক তুমুল ধিক্কার প্রতিবাদে সোচ্চার।
শান্তিপ্রিয় প্রতিবাদে প্রতিবাদকারীদের যে কায়দায় নির্যাতন করেছে বিশেষ করে একজন নারী অধ্যাপিকাকে যেভাবে হেনেস্তা করে বন্দি করা হয় বিশ্ববাসী পরখ করছে। বাংলাদেশের সরকারবিরোধী তুমুল আন্দোলনেও এমন আচরণ করেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অথচ জাতিসংঘের সর্বোত্তম সুশৃঙ্খল বাংলাদেশ বাহিনী নিয়ে মার্কিন প্রশাষন নিপীড়নমূলক আচরণ করে আসছে।
বাংলাদেশের জনগণ ছাত্র-শিক্ষক, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ মানবতাবিরোধী অপকর্মের নিন্দা জানাচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীতিগত আদর্শে থেকেই দেশ-বিদেশে যেখানে অবস্থান করছেন সেখানেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠে প্রতিবাদের ঝড় তুলেন।
মানুষ মজ্জাগতভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। অপরাধ যে কোনো পর্যায়ে হতে পারে। বিন্দু পরিমাণ অপরাধহীন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। তেমনি শত পার্সেন্ট সৎ লোক পাওয়া দুর্লভ। ধর্মগুরু, শিক্ষাগুরু, আমলা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের সর্বত্র ‘অপরাধ’ নিরব ঘাতক ক্যান্সারের ন্যায় বাসা বেঁধে আছে। অন্যায়-ঘুষ না খেয়ে যারা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বাধা-প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে তারাও অপরাধীদের দলভুক্ত। একটি ভালো কাজকে ভিতরে ভিতরে স্তব্ধ করে রেখে উপরে ভালো মানুষের রূপ প্রকাশ করা নিকৃষ্টতর আচরণ। অথচ এমনটিই অহরহ।
প্রবাদে আছে- আলোর নিচে অন্ধকার। তদরুপ- মানবতার আড়ালে চলে লোমহর্ষক অমানবিকতা। অমানবিকতার নিকৃষ্টতর অভিযোগ উঠে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার ফাউন্ডেশন’ পরিচালক মিল্টন সমাদ্দরের বিরুদ্ধে! এই অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় অনেকে নিরুৎসাহিত বোধ করছেন ‘স্বেচ্ছায় ভালো কাজ’ করার। বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগজনক। মিল্টন সমাদ্দরের বিরুদ্ধে অসহায়-অবহেলিত মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে অঙ্গ-প্রতঙ্গ কিডনি বিক্রির অভিযোগে সাধারণ মানুষ কিংকর্তব্যবিমূঢ। আশ্রয়কেন্দ্রে অপারেশন কক্ষ, মৃত মানুষের মৃত্যু সনদ দেয়া একার পক্ষে আদৌ সম্ভবপর নহে। মানবতার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ না করে পর পর জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তিতে কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতি (যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না) অথবা সঙ্গবদ্ধ দলের অনৈতিক যোগসাজশ নেই বলে বিবেচনা করা অমূলক নহে।
বিষয়টি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত করে জাতিকে অবহিত করা আবশ্যক। নিরপরাধ মানুষও মিথ্যা ষড়যন্ত্রের বলি হয়ে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছে। সত্য সুন্দর ও মানবতার জয় ধ্বনি দেখতে চায় আমজনতা।