শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

ঈদের সেই স্মৃতি

ইয়াছিন দেওয়ান
ঈদের সেই স্মৃতি

ঈদ মানে আনন্দ। কিন্তু ঈদের দিনের কখনোই আনন্দে থাকতাম না। ঈদের দিনে একটা অশুভশক্তি বিরাজ করতো। আসলে অশুভ বললেও ভুল হবে। ঈদকে কেন্দ্র করে বেশি পরিকল্পনা করে রাখতাম। ঈদের দিনে বন্ধুদের জন্যে পরিকল্পনা বাস্তবে মাটিতে চাপা পড়তো। কারো উপরে বেশি আশা করলেই নিরাশা হতে হয়। তখন দুঃখ দোল খায়।

আমার স্কুলজীবনের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু শাহিন-সাহেদ। প্রতিবারেই শাহিন আমাকে দুঃখ দিতো। বিপরীত দিকে থেকে সাহেদ কখনোই দুঃখ্য দেয়নি। বলা বাহুল্য, আমি ওর কাছ থেকে কখনো কিছু আশা করিনি বলেই দুঃখ আমাকে ছুঁতে পারেনি। যাই হোক, শাহিনের সাথে পাঁচটি ঘটনা উল্লেখ না করলেই নয়।

এক.

সাল ২০১৪। ঈদের দিন আমরা ঘুরতো যাবো। ঘোরা হলো। দেখা হলো। কিন্তু কথা হলো না! আসলে ওর প্রিয়শীর জন্যেই সারাদিন নির্বাক হয়ে রম্যকাহিনি দেখতে দেখতে একটি দিন অতিবাহিত হলো। তবে ওর প্রেমিকাকে সেদিন ঐশ্বিরিয়া রায়ের মতো লাগছিলো। নিজের না থাকলে কী হয়েছে বন্ধুরটা দেখে প্রথম দর্শনে মন্দ লাগেনি।

দুই.

সালটা ২০১৫। শাহিনের প্রেয়শীর জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলাম। তাই ঈদের ক’দিন আগে থেকে অভিমান করে শাহিনের সাথে কথা বলা বন্ধ করেছিলাম। কিন্তু ঈদের দিনে আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। তাই সব বন্ধুদের নিয়ে ওদের বাড়িতে গেলাম। তারপর পার্কে নিয়ে গেলাম। ওদের বাড়ির পাশেই শিশু পার্ক। তখনও কথা বলা হয়নি। ফুসকার অর্ডার দিলাম সবার জন্যে। সবাই খাচ্ছে। আমি নিজের একটা ফুসকা নিজ হাতে ওকে খাবিয়ে দিতে গেলাম। ওহ মুখ সরাতেই আমি ড্রেনে পড়ে গেলাম। ব্যথা পেলাম। কিন্তু ওহ আমাকে ধরেনি! সেই থেকে রাগ করে হোক আর অভিমান করেই হোক আমি আর কখনো ফুসকা খাবো না নিয়ত করেছিলাম।

ঠিক পাঁচ বছর পর আরেক ঈদের আমার প্রেয়শীর বাড়াবাড়ির কারণে ফুসকা খেয়েছিলাম। অবশ্য এটাই এখন পর্যন্ত আমার শেষ ফুসকা খাওয়া।

তিন.

সালটা ২০১৬। এবার আমরা সবাই ঘুরতো যাবো। সব বন্ধুরা স্কুল ক্যাম্পাসে এসে দুপুর থেকে শাহিনের অপেক্ষা করতে লাগলো। আমরা দূরে ঘুরতে যাবো। কারো একটা কলও ধরলো না। সারাদিন গিয়ে সন্ধা হলো শাহিন আসলো না। ওর আসলে মায়াবী মায়াবী চেহারা। সবাই ওকে খুব ভালোবাসতো। শাহেদ সিদ্ধান্ত নিলো ওদের এলাকায় গিয়ে আমরা মাস্তি করবো। বলতে না বলতে শাহিনই কল দিলো। শাহিনও যেতে বললো পার্কে।

আমি সাহেদকে সর্তক করলাম। দেখ আমি ওর বেস্ট বন্ধু। আমি ওকে চিনি। আমরা যাওয়ার আগেই ও চলে যাবে, নয়তো আমরা গেলে একটু দেখা করেই চলে যাবে। কেউ আমার কথা শুনলো না। বাধ্য হয়েও আমিও গেলাম। যে কথা সেই কাজ। গিয়ে দেখি ওহ অনেক দূর চলে গেছে। কল দিয়ে ফিরিয়ে আনলাম। অনেক অনুরোধ করেও দুই মিনিটের বেশি রাখতে পারলাম না। যখন ওর কাছে জানতে চাইছিলাম, ক্যাম্পাসে কেনো আসলি না। ওহ তখন সহজ উত্তর দিলো। বাড়িতে ক্রিকেট খেলতে খুব ভালো লাগছিলো। ভালো লাগার জায়গা থেকে আরেক নতুন জায়গা যেতে ভালো লাগে না। আমি কেনো যাবো? কেন জানি না সেই কথাটাই আমাকে সবচেয়ে কষ্ট দিয়েছে।

চার.

সাল ২০১৭। ঈদের আগের দিন আমি, শাহিন, আকিব, মাহফুজ মিলে কুমিল্লা শালবন ঘুরতে গিয়েছিলাম। ঈদের দিন ভোরবেলায় এসে পৌঁছলাম। আমি সবার নিষেধ সত্বেও শালবন পাহাড় থেকে আনারস, কাঁটা জামর চুরি করে নিয়ে এসেছিলাম। অনেক কষ্ট করে কাঁধে বহন করে আনলাম। কারো ব্যাগে রাখলো না। ওরা বাড়ির কাছে আসতেই বললো, বিকেলে পার্টিতে একসাথে খাবো। রেখে যা। কথা মতো, রেখে এলাম। ঠিক সময় ওদের বাড়িতে বিরিয়ানী পার্টিতে উপস্থিত হলাম। আনারসের কথা বলতেই মাহফুজ,শাহিন অট্টহাসি দিয়ে বললো, আমরা খেয়ে ফেলেছি। তখন যে রাগ হচ্ছিলো বলার মতো না।

পাঁচ.

সাল ২০১৮। প্রতিবারের মতো এবারও আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। এবার ওকে না জানিয়েই আমি, সাহেদ, কাঞ্চন ওদের এলাকায় গেলাম। ভেবেছিলাম, সারপ্রাইজ দিবো। ওহ আমাকে দেখে একটুও খুশি হলো না। ভাব ধরে থাকলো। আমার অভিমান হলো। আমিও সেবার ভার ধরে বাকিদের নিয়ে নানী বাড়িতে চলে আসলাম। সন্ধা বেলা ওহ কল করে পার্কে নিলো। দুপুরে ঘটনার কথা জানতে চাইলো, কেন ভাব ধরে না বল চলে আসলাম? আমি এমন করাতে নাকি তার খুব রাগ হয়েছে, অভিমান হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি।

একপর্যায়ে এক কথা দু কথা নিয়ে ঈদের ময়দানের যুক্তি তর্ক-বিতর্ক করে ঝগড়া করে যে যার বাড়িতে চলে গেলাম। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমরা বছরখানেক কথা বলিনি।

আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো। প্রতিদিন স্কুলে দেখা হতো। কথা হতো না বলে মন খারাপ থাকতো। আমার প্রেয়শী বিষয়টা উপলব্ধি করেছিলো। তার কল্যাণেই এক বছর পর আমিই ওকে আগে ম্যাসেজ করে কথা বলেছিলাম। পরের দিন দেখা হলে জানতে পারলাম, শাহিনও নাকি খুব কষ্ট পাচ্ছিলো, আমি কথা বলিনি বলে।

রাগ, অভিমান হলেও সেইদিনগুলো ছিলো আমাদের খুব আনন্দের। আজও আমাদের বন্ধুত্ব টিকে আছে। কিন্তু সময়ের অভাবে গত পাঁচটি বছর আমরা ঈদের দিনে একত্রিত হতে পারছি না। আজ একটা কথা বলতেই ইচ্ছে করছে আমি তোকে খুব মিস করছি শাহিন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়