প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
ঈদ সালামি
প্রিয় পাঠক আমি অতি সাধারণ একজন মানুষ। মাঝে মাঝে মনের চাহিদা মেটাতে লেখালেখি করি। কতটা ভালো হয় যারা আমার লেখা পড়েছেন হয়তো সেই শুভাকাঙ্কষী পাঠকরাই বলতে পারেন। ইতিমধ্যে বেশ ক’বছর বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলায় কবিতা, গল্প, সাক্ষাৎকারভিত্তিক ইংরেজি ও বাংলা অনুবাদসহ আমার লেখা মোট ৫টি বই বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রিয় পাঠক, যা বলছিলাম- ২০২৩ সালে প্রকাশিত আমার লেখা পঞ্চম বই ‘আমার স্মৃতিরেখা’ প্রকাশিত হয়েছে। বইটিতে স্থান পেয়েছে আমার ভালোলাগার অতীত, ভালোলাগা কিছু মানুষ, ভালোলাগা বন্ধুসহ অনেক কিছুই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
প্রবাসে থাকাবস্থায় আমার স্মৃতিরেখা বইটি প্রকাশিত হয়েছে। বইমেলা থেকে বইটি অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী সংগ্রহ করেছেন। গেলো ৫ মার্চ ২০২৩ সালে সৌদি আরব থেকে দেশে আসি। এসেই আমার লেখা প্রকাশিত আমার স্মৃতিরেখা বইটি চাঁদপুর জেলা প্রশাসক, শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), পৌরসভার মেয়র, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, চিকিৎসক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক ভাইদের হাতে শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে বইটি দিয়েছি। পেয়েছি সকলের আন্তরিক ভালোবাসা।
আমার বইটিতে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের প্রয়াত সভাপতি ইকরাম চৌধুরীর কিছু গল্প রয়েছে। তাঁর পরিবারের হাতে বইটি শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছি দৈনিক চাঁদপুর দর্পণ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শরীফ চৌধুরীর হাতে।
শুধু তাই নয়, আমার স্মৃতিরেখা বইয়ে চাঁদপুর জেলার সুপরিচিত মুখ, স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসের সাক্ষী, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুননাহার আপার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তিনি মহামারি করোনায় ক’বার আক্রান্ত হয়েছেন, মহান আল্লাহ সকলের দোয়ায় ওনাকে সুস্থ্ করে দিয়েছেন। এরপর কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে আইসিউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন, মহান আল্লাহ সুস্থ করে দিয়েছেন। প্রবাসে থেকে ওনার সাথে কথা বলেছি।
দেশে এসেছি আমার বইয়ে যাকে নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করেছি মমতাময়ী বদরুননাহার। তার হাতে কখন বইটি শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে তুলে দিবো সেই সুযোগ খুঁজছিলাম। গত ১১ এপ্রিল ২০২৩ সকালে আমি বদরুননাহার আপাকে কল দিলাম, বললাম আমি হৃদয়। তিনি বললেন, কী খবর হৃদয়? কবে এসেছো দেশে? আমি বললাম, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, কিছুদিন আগে দেশে এসেছি। তিনি বললেন, চাঁদপুর আছি আসো দেখা করে যাও। বললাম, আপা তাহলে আমি ১২ এপ্রিল আসবো, আপনার সাথে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। বললেন, আসো। সেইদিন রাতেই স্নেহময় কবি ও গবেষক মুহাম্মদ ফরিদ হাসানকে মেসেঞ্জারে নক দিয়ে বললাম চাঁদপুর আসবো। আমি বললাম, ১২ এপ্রিল সকালে বদরুননাহার আপার চেম্বারে আসবো।
যথারীতি ১২ এপ্রিল দুপুর ১২টার আগেই চাঁদপুর গেলাম দেখা হলো ফরিদের সাথে। একসাথেই বিশিষ্ট চিকিৎসক বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা বদরুননাহার আপার চেম্বারে গেলাম। আপা আমাদের দেখেই গালভরা হাসি নিয়ে হৃদয়, ফরিদ এসেছো।
আমায় তিনি মায়ের মমতা নিয়ে কাছে টেনে নিলেন। বললেন, আমার সুস্থতার জন্যে সৌদিআরব থেকে দোয়ার আয়োজন করেছো। পত্রিকার মাধ্যমে দোয়া চেয়েছো হৃদয় সত্যিই তোমাদের স্নেহময় ছোটভাইদের দোয়া আছে বলেই মহান আল্লাহ আজও আমাকে সুস্থ রেখেছেন। রোজার দিন সকালে কি-বা আপ্পায়ন করি তোমাদের। বললাম, কিছুই লাগবে না আপা, শুধুমাত্র এসেছি আপনার হাতে আমার লেখা আমার স্মৃতিরেখা বইটি শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে তুলে দিতে। আলাপচারিতার এক ফাঁকে আপার হাতে বইটি তুলে দিলাম। তিনি বইটি হাসিমুখে গ্রহণ করলেন।
বিদায়ের পালা। বললাম, আপা আপনি অনেক ব্যস্ত আজ আসি। তিনি বললেন, দাঁড়াও হৃদয়- বলেই হাতে একটা খাম দিয়ে বললেন এটা তোমার জন্যে আমার পক্ষ থেকে ভালোবাসার ঈদ সালামি। নিতেই হবে মানা করতে পারবে না বোন হিসেবে দিলাম। জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে বললেন, ভাইরে কখন দুনিয়া ছেড়ে যাবো চলে জানি না। আমার জন্যে দোয়া করবে। তোমাদের সকলের আন্তরিক ভালোবাসা নিয়েই আমার বেঁচে থাকা।
আপার কথা আর চোখের পানি দেখে নিজের চোখ ভিজে পানি গড়িয়ে পড়ছে। জীবনের অনেক বছর অতিবাহিত হয়েছে, এমন আবেগ আপ্লুত ঈদ সালামি আর ভালোবাসা পাইনি। ১২ এপ্রিল ২০২৩ আমার জীবনের আরেক ইতিহাস, যা ক্ষণিকের জীবনে ভুলে যাবার নয়। শুধু মহান আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করছি আলহামদুলিল্লাহ। একই সাথে আল্লাহর দরবারে দোয়া করছি আল্লাহ তুমি সৈয়দা বদরুননাহার আপাকে সুস্থতার সাথে নেক হায়াত দান করুন। তিনি যেনো মানুষের কল্যাণে সবসময় পাশে থাকতে পারেন।