শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

সেন্ট মার্টিন ও হুমায়ূন আহমেদ

আহমেদ রিয়াজ
সেন্ট মার্টিন ও হুমায়ূন আহমেদ

বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব দিকে আছে এক প্রবাল দ্বীপ। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিয়ানমার উপকূল থেকে আট কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় এ দ্বীপের অবস্থান। দ্বীপটিতে একসময় প্রচুর নারিকেল পাওয়া যেত বলে এর আরেক নাম নারিকেল জিঞ্জিরা। তবে দ্বীপটি নিয়ে বেশ কিছু কিংবদন্তিও আছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে- অনেক বছর আগে একদিন আরবের এক বাণিজ্যিক জাহাজ এখানে আসে। চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যাতায়াতের সময় এই দ্বীপে আরব বণিকরা বিশ্রাম নিতেন। জাহাজে বোঝাই করা ছিল দারুচিনি। তো খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে পানির নিচে থাকা বিশাল এক পাথরের সঙ্গে জাহাজটি ধাক্কা খেয়ে ভেঙে যায়। আর জাহাজে থাকা সব দারুচিনি ছড়িয়ে পড়ে দ্বীপের আশপাশে। তারপর ওই দ্বীপের নাম হয়ে যায় দারুচিনি দ্বীপ। তবে ১৯০০ সালের দিকে ব্রিটিশ ভূ-জরিপ দল দ্বীপটিকে ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে সেন্ট মার্টিন আইল্যান্ড নামে। জোয়ারের সময় দ্বীপটির আয়তন প্রায় আট বর্গকিলোমিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। আর ভাটার সময় দ্বীপের আয়তন হয়ে যায় ১৫ বর্গকিলোমিটার। দ্বীপের পশ্চিমণ্ডউত্তর-পশ্চিম দিক জুড়ে রয়েছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার প্রবাল প্রাচীর।

তো এই দ্বীপেরই একটি বাড়ির নাম সমুদ্র বিলাস। আরে এই একটিমাত্র বাড়িকে ঘিরে পুরো একটা দ্বীপ এখন পর্যটকদের ভারে জর্জরিতই বলা যায়। পর্যটন মৌসুমে তো ওই দ্বীপে পর্যটকদের ভিড়ে হাঁটাচলা করাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আর অফ মৌসুমেও কিছু না কিছু পর্যটক সেখানে যান উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে। মাত্র তিরিশ বছর আগেও দ্বীপটি ছিল একেবারেই অবহেলিত। এক জাদুকর লেখকের লেখার জাদুতে ওই দ্বীপে এখন প্রতিবছর দশ লাখেরও বেশি পর্যটক ঘুরতে যান। জাদুকর এই লেখকের নাম হুমায়ূন আহমেদ।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ভ্রমণকাহিনি নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ দুটো বই লিখেছেন। ‘দারুচিনি দ্বীপ’ ও ‘রুপালি দ্বীপ’। বই দুটো প্রকাশের পর দেশ-বিদেশের পর্যটকরা দ্বীপটি ঘুরে আসার জন্য আগ্রহ দেখান।

১৯৯৩ সালে সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দা জোলেখা খাতুনের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকায় ২২ শতক জমি কেনেন হুমায়ূন আহমেদ। পরের বছর ১৯৯৪ সালে তিনি দ্বীপে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। স্থানীয় বাসিন্দা শফিক ও উসমানকে মাসিক বেতনে বাড়িটি দেখাশোনার দায়িত্ব দেন। তখন দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেন্ট মার্টিনের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল মাছধরা ট্রলার।

হুমায়ূন আহমেদ তখন জনপ্রিয় নাট্যকার ও লেখক। অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা। লেখক হুমায়ূন আহমেদ সেন্ট মার্টিনে জমি কিনে বাড়ি করেছেন, তাতেই নড়েচড়ে বসেন অনেক রিসোর্ট ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে একজন পান্না রিসোর্টের মালিক বশির আহমেদ পান্না। হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে প্রবাল দ্বীপের কথা জেনে ১৯৯৮ সালে পান্নাও জমি কিনে একটি কটেজ বানিয়ে রাখেন। এরপর ঢাকা প্রায় শ-খানেক ব্যক্তি সেন্ট মার্টিনে জমি কিনে কটেজ নির্মাণ করেন। অর্থাৎ সেন্ট মার্টিনে কটেজ নির্মাণ ও সেন্ট মার্টিনকে জনপ্রিয় করার পেছনের মূল মানুষটা কিন্তু লেখক হুমায়ূন আহমেদ। সেন্ট মার্টিনের মানুষও সেটা স্বীকার করেন। সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা ফিরোজ আহমদ খান বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের অনুপ্রেরণায় অবহেলিত এ দ্বীপ পৃথিবীজুড়ে পর্যটকদের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। তিনি ১৯৯৪ সালে বাঁশের বেড়া ও টিনশেডের একটি কটেজ নির্মাণ করে এ দ্বীপের গুরুত্ব বাড়িয়ে দেন।’

পর্যটন মৌসুম শুরু হলেই সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় পর্যটকদের মধ্যে। প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচটি জাহাজ টেকনাফ থেকে এ দ্বীপে যাওয়া-আসা করে। এ ছাড়া কক্সবাজার থেকেও একটি জাহাজ সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যাতায়াত করে।

অবহেলিত একটি এলাকায় বছরে দশ লাখেরও বেশি পর্যটক আসেন সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। একটা সময় অঞ্চলটির মানুষের জীবনযাত্রার মান ছিল অনেক নিচে। পর্যটকদের আনাগোনায় এলাকার মানুষের ভাগ্য বদলে গেছে। এক সময় কেবল সাগরে মাছ ধরার ওপর তাদের জীবন নির্ভরশীল ছিল। এখন আর শুধু সেই নির্ভরতা নেই। পর্যটকদের জন্য ছ্ট্টো ওই দ্বীপে রয়েছে দুশোরও বেশি হোটেল-মোটেল। এসব হোটেল-মোটেলের কারণে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আজ সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটনশিল্পের বিশাল এক খাতে পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয়, ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এসব হোটেল-মোটেল আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসবই সম্ভব করেছেন জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ। লেখক হয়েও একটা অঞ্চলের পর্যটন বিকাশে কী বিশাল ভূমিকা রাখা যায়, সেটাও দেখিয়ে দিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়