প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
মৃত্যু আমায় ডাকছে
মানুষ মরণশীল। এই চিরন্তন সত্য মনেপ্রাণে ধারণ করলেও আক্ষরিক অর্থে সবাই মৃত্যুকে উপেক্ষা করে চলি। চোখের সামনে মৃত্যুর চিরন্তন সত্য উপলব্ধিতে মর্মাহত হলেও প্রস্তুতির জন্যে একেবারেই উদাসীন। উদাসীন বলাও সমীচীন হবে না, কারণ এই চরম সত্য আমাদের নিয়ন্ত্রণহীন। গড় আয়ুর মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিই। অপরদিকে শিশু-কিশোর-তরুণ বয়সে এবং এক্সিডেন্ট, প্রাকৃত দুর্যোগে, খুন-আত্মহত্যা, মরণব্যাধি অসুখজনিত মৃত্যুতে বিষাদের ছায়া মনে ভীষণ পীড়া দেয়। মেনে নিতে পারি না অবহেলা ও ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় অকাল মৃত্যু।
বাবা মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। ডাক্তার সাহেব বাবার অগোচরে সম্ভাব্য মৃত্যুর সংকেত দিলেন এবং ধর্মীয় আচার ও বাবার রুচিসম্মত খাবারে উপদেশ দিলেন। এমন সংবাদে ভড়কে যাই। ডাক্তার অভয় দিয়ে বললেন, বড়ো সন্তান হিসেবে সক্ত মনোবলে সামনের কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। মনে হলো আকাশ ভেঙে মাথার উপর পড়লো। সেই দিনটি ভোলা যাবে না। বাবাকে বললাম, তেমন সমস্যা নেই। ঔষধ খেলে ভালো হয়ে যাবে। প্রয়োজনে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা করাবো। বাইরের কথা বলায় বাবা বুঝে গেলেন গুরুতর অসুখ। ইমার্জেন্সি পাসপোর্ট করে নিয়ে গেলাম ভারতে। কয়েকবার আসা-যাওয়া হলো। সর্বশেষ অপারেশন করা হলো। পেট ফুলে গেল। ডাক্তার দেশে চলে আসার তাড়া দিলেন। কালবিলম্ব না করে চলে আসলাম স্বদেশে। এদিকে পাসপোর্ট ও ভিসা দুটোর মেয়াদ শেষ ২০.০৭.২০০৯।
ঊষালগ্নে বাড়ি পৌঁছলাম। অপারহ্নের পূর্বেই আমাদের বাঁধনহারা করে পলকেই বাবা পরপারের অন্তিম কামরায় চলে গেলেন। এমন একটি উল্লেখিত দিনে লিপিতে বাবা চলে যাওয়ায় হৃদয়টা চৌচির হয়ে গেল। সন-তারিখ পকেটে সযত্নে গুছিয়ে রেখেও বাবার জীবন রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়া, কাছ থেকে মৃত্যুকালীন ছটপটের অসহনীয় যন্ত্রণার দৃশ্য ভাষায় প্রকাশ করা আদৌ কোনো সন্তানের পক্ষে সম্ভবপর নহে।
পৃথিবীর বুকে কিছু কালজয়ী মৃত্যুর ন্যায় বাবা সম্পর্কেরও মৃত্যু হয় না। বাবা বেঁচে থাকবেন আমৃত্য। তাঁরা বেঁচে থাকেন গভীর অন্তরালে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায়। মৃত্যুদূত পরোয়ানা নিয়ে পিছু তাড়া করছে আমাদের। মহাসত্যের নিখিল ভুবনের বিদায়ী সূচিতে যে কোন মুহূর্তে সমার্পণ করবে মৃত্যুর দুয়ারে। বিভিন্ন মাধ্যমে শোকসংবাদ আমাদের স্মরণ করে দিচ্ছে। সড়কের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর মিছিলে প্রতিনিয়ত ভীতসন্ত্রস্ত হয়েই পা মাড়াই। হয়তো ভীতি কেটে যাবে। কান পেতে শুনছি মৃত্যুর করুণ গর্জন। প্রতিক্ষার প্রহরে গুন গুন করে মৃত্যু আমায় ডাকছে।