প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
সেই মেয়েটি
একদিন ফারিহা বললো আচ্ছা শিশির, সামনে তো বিদায় অনুষ্ঠান। কী পোশাক পরবি? আমি অন্যমনষ্ক হয়ে বললাম শাড়ি পরবো। ফারিহা বললো কি শাড়ি পরবি? জামদানি নাকি? আমি উৎসুক হয়ে বললাম একেবারে কম দামী একটা সুতি শাড়ি। কী বলিস? একটা অনুষ্ঠানে একটু ভালো দামী শাড়ি না পরলেই নয়! আমি বললাম ফারিহা তুই তো জানিস আমি আড়ম্বরপূর্ণ জীবন পছন্দ করি না। ফারিহা চল তাহলে একরকম শাড়ি কিনি। এতে দারুণ লাগবে। আমি বললাম, শুধু শুধু টাকা নষ্ট করার প্রয়োজন নেই। আমি আম্মার শাড়ি থেকে একটা পরে নেবো। তুই তাই করিস। ফারিহা অবাক হয়ে বললো, আচ্ছা শিশির, তুই কিভাবে এতো অল্পতে সুখী থাকোছ বলবি? আমি বললাম, আমি অর্থ অপচয় করা পছন্দ করি না। ফারিহা তুই কি জানিস অসংখ্য মানুষ আছে যারা জামদানি শাড়ি কেনার কল্পনা করতে পারে না। তারা বেঁচে থাকে বরং আনন্দ সহকারে বেঁচে থাকে। শোন, পোশাকটা কত দামী তা দিয়ে মানুষ মূল্যায়ন করবি না মানুষটা কত ভালো তা দেখবি।
ফারিহা বললো, সত্যি রে বুঝলাম। শোন না চুল কি খোলা রাখবি?
আমি নাহ্। হিজাব দিয়ে চুল ডেকে নিতে হবে। ফারিহা অবাক হয়ে বললো কেনো রে? শাড়িতে তো চুল খোলা রাখাই ভালো। আমি বললাম ফারিহা, আমরা ছবি তুলবো। অনেকে অনুমতি ছাড়াই ছবি ফেসবুকে আপলোড দিয়ে দিতে পারে। এক্ষেত্রে চুল ডেকে নেওয়াই ভালো। ফারিহা বললো তাহলে চল হিজাবটা কিনে আসি। আমরা শপিং করলাম। ফারিহা বললো শিশির প্রচণ্ড ক্ষুধা লাগছে। চল খাবার খাই। আমরা খাবার খাচ্ছি। আমার খাবার খেতে ইচ্ছে করছে না তাই আমি লেবু দিয়ে বিরিয়ানি টক টক করে খাচ্ছি। ফারিহা বললো এই সাত বছরে তোকে কোনোদিন লেবু খেতে দেখিনি। আমি বললাম আমি যখন খাবার খেতে বসি আমার ঐ মানুষদের কথা মনে পড়ে যারা একমুটো খাবার পায় না। খাবার নষ্ট করতে মায়া লাগে তাই টক করে খাচ্ছি। ফারিহা বললো জানিস ফারিহা আমিও জোর করে খেয়েছি ঐ যে তুই সবসময় বলোছ খাবার নষ্ট করা ভালো না। আমি খুশি হয়ে তাকিয়ে বললাম ধন্যবাদ ফারু।
আমরা ক্লাসে আছি। দুই ঘণ্টা যাবত কারেন্ট নেই। ফারিহা অস্থির হয়ে যাচ্ছে। বার বার গরম লাগছে বলেই যাচ্ছে। আমি অদ্ভুতভাবে হয়ে তাকিয়ে আছি। তার বিশ মিনিট পর আমরা দুজনে সামাজিক কাজে সরকারি হাসপাতালে জরিপ সংগ্রহে যোগদান করলাম। প্রতিবন্ধী, অসহায়, দুস্থ, পঙ্গু, শিশুদের মানুষের কান্না আমাদের মন ছুঁয়েছে। আমরা প্রতি বেডে যেতেই আপা, আমরা খুব গরিব যদি আমাদের সাহায্য করতেন। ফারিহা একটু এগিয়ে বললো শিশির, তাদের কতো কষ্ট। আমি ফারিহাকে বললাম ফারিহা, এই বার বুঝেছিস কেনো আমি অপচয় পছন্দ করি না, কেনো খাবার নষ্ট করি না, কেনো অতিরিক্ত পোশাক কিনি না, কেনো সাজগোজে অর্থ খরচ করি না। ফারিহা চেয়ে দেখ এই মানুষগুকো কতো জীর্ণ পোশাক পড়ে আছে। চেয়ে দেখ, ওরা কতোটা পুষ্টিহীন। আমাদের চোখে জল ভাসছে। আমরা দুজনে দিশেহারা কিভাবে দরিদ্র মানুষগুলোকে সাহায্য করে যায়। তপ্ত গরমে আমরা হাসপাতালের বেডে হাঁটছি। আজ আর গরম লাগছে না। মনে হচ্ছে আমরা কতো ভালো আছি।
হাসপাতালের থেকে নেমে রিকশায় উঠলাম। ফারিহা বললো শিশির, তোর মতো এতো ভালো মনের মানুষ দেখিনি। সত্যি তুই আমাকে শেখাচ্ছিস। আমাকে অনেক পরিবর্তন করেছিস। আমি বললাম ফারিহা, ঝাঁকঝমকপূর্ণ জীবন সুখী করতে পারে না। সুখ কখনো দামী কিছুতেই হয় না। সুখটা নিজস্ব। কেউ কেউ ৫০০ টাকার পোশাকে আনন্দিত হয় কেউবা ৫০০০ টাকার পোশাকে সুখী হয়না। ফারিহাকে বললাম, বাদ দে সবার চাহিদা এক নয়। আমরা এখন অন্য কথায় যাই।
ফারিহা বললো শিশির, প্লিজ আরো কিছু বল আমার শুনতে খুব ভালো লাগছে।