বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

স্বয়ংবরসভা
সাইফুল ইসলাম জুয়েল

আপনারা সবাই তিতাপুর গ্রামের নাম শুনেছেন। তবে মধুপুর গ্রামের নাম বোধহয় শোনেননি কখনও। তিতাপুর গ্রামের পাশের গ্রামই মধুপুর। মধুপুরে একসময় মধুর খোঁজে (পড়ুন-পাত্রীর খোঁজে) ঘটক পাখি ভাইয়েরা ঘুর ঘুর করত। সেসব দিন অবশ্য আজ সুদূর অতীত। আজ সে গ্রামে কোনো পাখি ভাই-টাই আসে না। মধুপুর গ্রামের বাসিন্দাদের (একাংশের) মনে সেই মধুও আজ নেই।

অনেকদিন মনমরা অবস্থায় কাটানোর পরে অবশেষে গ্রামে আজ সাজসাজ রব। মানুষগুলো যেন হঠাৎ করেই জেগে উঠেছে। ঘুমের মাঝে সুড়সুড়ি পেয়ে যেমন হুড়মুড় করে উঠে বসে মানুষ, তেমনই অবস্থা তাদের। আজ শুধু মধুপুর নয়, তিতাপুর, ঝালপুর, টকপুরসহ আশপাশের সব গাঁয়েরই টক-অব দ্য গাঁও হলো- স্বয়ংবরসভা। জি, হ্যাঁ, মধুপুরে আজ স্বয়ংবরসভা বসেছে।

গ্রামের প্রতিটা মেয়ের মনের মধ্যে প্রবল উৎসাহ। আজ তারা নিজেদের পছন্দসই বর খুঁজে নেবে। কেমন হবে সেই বর? রান্না করতে পারে! ঘর ঝাড়পোছ দিতে পারে! মশারি টানাবে বিনা বাক্যব্যয়ে। সাত সকালে উঠে বাজারে গিয়ে তাজা মাছ কিনে এনে নিজেই কোটাবাটা শুরু করে দেবে। সপ্তাহে অন্তত দু'বার শপিংয়ে নিয়ে যাবে। আর... আর...

না, আর আগ বাড়িয়ে লাভ নেই। মধুপুরের মেয়েরা আজ ঘুণাক্ষরেও এসব কথা মনে আনছে না। তারা স্র্রেফ চাইছে একটা বর। যেন তারা নিজেদের মিসেস হিসেবে ঘোষণা দিতে পারে। দরকার হলে বরটাকে আজ থেকেই ঘরজামাই হিসেবে রেখে দেবে। জামাই আদর করে আজীবন বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে। তবুও তাদের একটা বর চাই! জি পাঠক, ভুল পড়ছেন না। আজকের মধুপুরের এই স্বয়ংবর সভায় প্রত্যেকটি মেয়ের মনে এই একটাই কামনা থাকবে- অন্তত একটা বর যেন বিধাতা তাদের ললাটে জুটিয়ে দেন।

পাঠকের মনে যে কিঞ্চিৎ নয়, প্রবল কিউরিওসিটি জন্মেছে, সেটা ভাঙতে গেলে কয়েক বছর পেছনে যেতে হবে। মধুপুর বলে যে এই গ্রামটা আছে, এখানকার মেয়েদের তখন হেভভি ডিমান্ড ছিল। তাদের সঙ্গে লাইন করার জন্য আশপাশের সাত গাঁয়ের ছেলেছোকরার দল লাইন ধরে থাকত। ঘটকের দল তাদের বাড়িতে গিয়ে 'বেইল' পেত না। মুড়ি-চানাচুর, আদা দেওয়া রঙ চা তো দূরের কথা। আর মধুপুরের ছেলেদের কথা? তাদের কথা বলার মতো কিছু নেই। তারা যে এই গাঁয়েরই সন্তান- মাঝে মধ্যে সেটাই ভুলে যেত। মনে হতো, ভুলক্রমে তিতাপুরের বদলে মধুপুরে জন্মেছে তারা। গ্রামের মেয়েরা তাদের তেমন একটা পাত্তা দিত না। ন্যূনতম ‘ভাইয়া’ ডাক শোনার সৌভাগ্যও কদাচিৎ হতো। তারপর একদিন দিন বদলে গেল।

মধুপুরের ছেলেরা গ্রামের সুন্দরী বালিকাদিগের অবহেলা আর তাচ্ছিল্যে হতাশ হয়ে ফেসবুক নামক এক বই পড়ায় মনোনিবেশ করল। দিনভর সেই বইয়ের পাতায় পাতায় ভিনদেশি তারার খোঁজ করত। তারা অবাক হয়ে দেখল- গ্রামের জরিনা, কারিনা, ম্যারিনারা তাদের ‘বেইল’ দিতে না পারে, কিন্তু থাইল্যান্ডের ‘মিউং’, অস্ট্রেলিয়ার ‘জিউং’ কিংবা ব্রাজিলের ‘ফিউং’রা ঠিকই তাদের ‘বন্ধু’ তালিকায় জায়গা দিচ্ছে! শুধু তাই নয়, মিউং, জিউং কিংবা ফিউংরা তাদের মনোকষ্টের কথা শুনে নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। একে একে তারা ছুটে এলো নিঃসঙ্গ আবুল, কাবুল, হাবুলদের কাছে। নিজেদের সঁপে দিল তাদের হাতে। নিজ গাঁয়ে বঞ্চিত আবুল, কাবুল, হাবুলরা তখন উদারচিত্তে তাদের বরণ করে নিল। মধুপুর গ্রাম ভরে উঠল ভিনদেশি পুত্রবধূদের উপস্থিতিতে।

এদিকে বেলাশেষে জরিনা, কারিনা, ম্যারিনারা একা হয়ে গেল। দূর গাঁয়ের ছেলে-ছোকরার দল স্বার্থ হাছিল করে কেটে পড়তে লাগল একে একে। পাখি ভাইয়েরা হতাশ হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল। দু-একজন পথিক এসে গাঁয়ের হালচাল শুনে তারাও আর জরিনা, কারিনা, ম্যারিনাদের দিকে মুখ তুলে তাকায় না। ‘নিজ গাঁয়ের ছেলেরাই তাদের দিকে তাকিয়ে দেখছে না, আমরা কোন ভিনগ্রহের প্রাণী এলুম তাদের দেখতে’- এমন মনোভাব যেন তাদের। একসময় মধুপুর মেয়েদের কাছে তিতাপুর হয়ে উঠল। মানুষ বলে বেড়াতে লাগল, 'মেয়েগুলি ভালো হলি কি আর সুদূর চীন দেশ থিকা বউ জোগাড় করি আনা লাগি! মাইয়া মাইনষের দুষ আছে!’

এভাবে অনেকদিন কেটে গেল। মেয়েদের 'দোষ' আর কাটে না। ভাগ্যের চাকাও আর ঘোরে না। শেষ পর্যন্ত তারা নিজেরাই নিজেদের পালে হাওয়া তোলার চেষ্টা করল। স্বয়ংবরসভার আয়োজন।

কিন্তু সভা গড়িয়ে অনেক ‘বেল’ হয়ে গেলেও কারোর তেমন কোনো সাড়া নেই। ভিনগাঁও থেকে কেউ এলো না। মধুপুরের সব ছেলের ঘরেই এখন বিদেশি বউ। দু'একজন এখনও সিঙ্গেল থাকলেও, তারাও চুপিচুপি ফেসবুকে ভিনদেশি মেয়েদের ওয়াল পড়তে ব্যস্ত।

একসময় প্রকৃতিতে সন্ধ্যা গড়াল। পাখির দল নীড়ে ফিরতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। স্বয়ংবরসভায়ও কোনো বর না পেয়ে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে গভীর অনুশোচনাবোধ জন্মাল মধুপুরের বালিকাদের মনে। তাদের প্রত্যাশা- নীড়ে ফেরা পাখিদের মতোই তাদের কাছে ফিরে আসুক মধুপুরের যুবকরা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়