শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা গণফোরামের কর্মী সমাবেশ
  •   নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে ফরিদগঞ্জে অবাধে ইলিশ বিক্রি
  •   পিকনিকে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ মেঘনায় ভেসে উঠলো দুদিন পর
  •   নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি না করার শপথ করিয়েছেন এমএ হান্নান
  •   বিকেলে ইলিশ জব্দ ও জরিমানা

প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

পুতুল নাচের ইতিকথা : অনুভূতি
সাইদা আক্তার

‘নদীর মতো নিজের খুশিতে গড়া পথে কি মানুষের জীবনের ¯্রােত বইতে পারে? মানুষের হাতে কাটা খালে তার গতি, এক অজানা শক্তির অনিবার্য ইঙ্গিতে। মধ্যাকর্ষণের মতো যা চিরন্তন অপরিবর্তনীয়। প্রতিটি বইয়ের আলাদা মোড়ক, আলাদা গন্ধ, আলাদা অনুভব। বই পড়ার বিষয়টা জীবনের সাথে অলিখিতভাবে জড়িয়ে গেছে। যখন পড়ি, তখন চরিত্রগুলো আমাকে ধারণ করে। যারা খুব কাছ থেকে জানে আমায়, তারা একথাটাও জানে পড়তে থাকা বইয়ে বসবাস করি কিছু সময় আমি। মোহিত হই, অদ্ভুত শোনালেও সত্যি আমি বইয়ের এক লাইন কয়েকবার পড়ি। প্রচণ্ড ভালো লাগার বই শেষ হয়ে এলে আস্তে আস্তে পড়ি। মনে হয়, এরপর যা পড়বো তা যদি এটার মতো আলোকময় না হয়!’

বই দাগিয়ে পড়া আরেক অভ্যাস আমার। ইদানীং বিভিন্ন লেখকের বই পড়া হচ্ছে আমার। যাক সেসব কথা। উপরের লাইনগুলো আমার নয়, এটা মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ বইয়ের শেষ অংশের কথা। এই লেখকের আরেকটি উপন্যাস পড়া হয়েছিলো অনেক আগে পাঠ্য হিসেবে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’। কিন্তু এতো অন্যরকম লাগেনি। ওটাও বিখ্যাত তাঁর মতো করে।

কিন্তু ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ বইটি সময়কে অতিক্রম করে গিয়েছে। আমার তাই মনে হলো। মানুষের জীবনের গল্পগুলো একই আকাশের তারা। একই বিশালতায় আবর্তিত। প্রখর রোদ, মায়াবী আলো-ছায়া, ঝড়, সময়ের সাথে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে ভেসে থাকা, দিনরাত্রির খেলা। ঘুরেফিরে একই মহাকাশের অমীমাংসিত রসস্যের খেলা।

কতো চেনা মুখ সবাই। কুমুদ, মোতি, গোপাল আর কুসুম। প্রতিটি চরিত্র আবর্তিত হয়েছে শশীকে ঘিরে। যার রয়েছে কঠোর আর অসহনীয় কোমল এক সত্তা। নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ, মানবিকতার বিশুদ্ধ আর্যসন্তান হিসেবে নিজেকে সবকিছুর মাঝে রেখেও আয়নার স্বচ্ছতায় দেখতে পাওয়া এক মানুষ। কখনো আকাশটা নিজের হাতে তুলে এনে জীবন দেখে আবার কখনো অন্ধকারে জোনাকির আলোটুকু তাকে পথ চেনায়।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসের নারীরা জীবনের অন্তর্গত ক্ষুধায় কাতর। এই উপন্যাসে জীবন নয়, জীবনের উৎস খুঁজেছেন তিনি। জীবনের গতিপথে আবেগের টান এবং তার নানা রঙ এবং মানুষভেদে তার রূপের আদান-প্রদান বদলে যাওয়া এই বিষয়গুলো আলো-ছায়ার খেলার মতো সামনে এসেছে। কুসুমের মনের অদমিত ভালো লাগা শশী টের পায় কিন্তু তার ভুবনে একে সে প্রদীপের শিখার আলোর রেশ ধরে রাখতে পারে না। তার স্বচ্ছ জলের মন তাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। তালপুকুরের সূর্য ডোবা শশীর আর দেখা হয়ে উঠে না।

‘কুমুদ’ একসময় জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে ভীষণ অবলীলায়, অনায়াসে ভেঙে আনন্দ পাওয়া কুমুদ একসময় ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে প্রদক্ষিণ করতে বাধ্য কুমুদে নিমজ্জিত হয়।

মানুষের গল্পগুলো আসলে একই। তা শশীর গাওদিয়া হোক বা যুগের অবসানে আজকের তথাকথিত সভ্য আলো ঝলমলে শহর হোক মানুষের জীবনের ¯্রােত একই। সময়ের সাথে সাথে হয়তো গল্পের ধরণ, কথন বদলে যায়। কিন্তু শশীরা শশীই থাকে। শশীদের পথটুকু সহজ আর স্বচ্ছতার আবরণে মুড়িয়ে দিতে কুসুমের মতো নারীরা স্বেচ্ছায় নিজেকে নির্বাসিত করে। আর গোপালদের মানুষ শেষ মহূর্তেও নিজের চরিত্রের ভাস্কর্য একে যায়। ভালো থাকুক এ যুগের শশীরা। নিজেদের আলোয় উদ্ভাসিত করুক সমাজের গোপন অন্ধকারটুকুকে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়